জীবনে বিপদ আসতেই পারে। নানা সময় নানা দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে। অর্থসম্পদ, সন্তানাদি ও সম্মান-মর্যাদা আক্রান্ত হয় অনেক কিছুই। দুনিয়ার জীবনে বিপদাপদের মুখে পড়ার কথা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)
বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে এ আয়াতে। কিন্তু বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা কেটে যাওয়ার কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকে না, তখন নানামুখী হতাশা মনে আঘাত হানে। হতাশা আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে- মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না।
নিরাশদের অন্তর্ভুক্ত হতে নেই
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ইবরাহিম (আ.) যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনায়। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে তিনি জিজ্ঞেস করেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ? কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছো? ফেরেশতারা বলে, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। তখন তিনি তাদের কথার জবাবে বলেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে? (সুরা হিজর, আয়াত : ৫৩-৫৬ দ্রষ্টব্য)
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে- আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া। আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৯৭০১)
হতাশাগ্রস্তদের আচরণ যেমন
বিপদে পড়লে মানুষ কীভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কোরআনেও এসেছে। বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নেয়ামত দিই, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে, তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮৩)
ইতিহাসের পরতে পরতে এমন অনেক বরেণ্য মনীষীর দেখা মিলবে, যারা শুরুর জীবনে নানামুখী নৈরাশ্য ও পাপে ডুবে ছিলেন। পরবর্তীকালে তারা এতটাই বড় হয়েছেন, এখনো আমরা শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করি। ফুজায়ল ইবনে আয়াজ, মালিক ইবনে দিনারের মতো বহুজন রয়েছেন। তিন বছর আগে আকস্মিকভাবে বিদায় নিলেন পাকিস্তানের সংগীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ। শুরুর জীবনে তিনি ছিলেন পপতারকা। সেই অঙ্গনে তিনি ছিলেন যারপরনাই সফল। বিশ্বজোড়া ছিল তার খ্যাতি। পরে বিশ্বজুড়ে দীনদার মুসলমানদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন একজন প্রিয় মানুষ।
আল্লাহর অনুগ্রহ
বাস্তবতাকে সামনে রেখে দীন-ধর্ম আর পরকাল নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা দ্ব্যর্থহীনভাবে আহ্বান করে বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনিই ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)
পার্থিব কোনো সংকটই স্থায়ী নয়। দুনিয়াই যেখানে ক্ষণস্থায়ী, সেখানে এসব সংকট স্থায়ী হবে কীভাবে? পবিত্র কোরআনের একটি ছোট সুরা ‘আলাম নাশরাহ’। এ সুরায় আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা আলাম নাশরাহ, আয়াত : ৫-৬)
আল্লাহ বিপদাপদ দূর করেন
আল্লাহতায়ালার এ প্রতিশ্রুতি সর্বকালের সবমানুষের জন্যই সত্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর একটি বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘যিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো উপাস্য আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)
তাই হতাশা ও নৈরাশ্য নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দীনি ও পরকালীন বিষয়েও আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস অটুট, তার হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই।