মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রত্যেকের দ্বারা গুনাহের কাজ হয়ে যায়। কেবল আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) ছিলেন সকল ভুলের ঊর্ধ্বে। তারা ছাড়া পৃথিবীর সকল মানুষই কোনো না কোনো গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু গুনাহ পরবর্তী মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য তওবার সুবর্ণ সুযোগ রেখেছেন। গুনাহ করার পর যে খাঁটি দিলে আল্লাহর নিকট তওবা করবে, আকুতি-মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
তাওবা শব্দের অর্থ : প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অনুতাপ করা প্রভৃতি।
পরিভাষায় : কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকেই তাওবা বলে। তওবার ভিত্তি : তওবার ভিত্তি হলো পরকালে বিশ্বাস এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিধানের প্রতি অনুরাগ।
পাপ রাশির ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) তওবার শিক্ষা দিয়েছেন। তওবার বদৌলতে গুরুতর পাপ থেকে মুক্তির সুসংবাদও তিনি দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা শিরক ও কুফর ছাড়া সব ধরনের পাপ আল্লাহ মাফ করে দেন। বিশ্ব মানবতার প্রতি ইসলামের অন্যতম অবদান এই যে, মানুষকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। শত পাপ করেও কেউ অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ত্রæটিবিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন এবং এমন জান্নাতে স্থান দেবেন, যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত। (সুরা তাহরিম : ৮)
হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে বনি আদম! তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার আশা পোষণ করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। তোমার থেকে যা কিছুই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোন পরোয়া করি না। হে বনি আদম! তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্ব আকাশ পর্যন্ত পৌঁছুয়, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনি আদম! তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়া ভরা গুনাহ নিয়ে আসো আর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করো, আমি তোমার নিকট জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হবো। (তিরমিজি : ২/৬৭)
তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর খুব খুশি হোন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তওবার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা এই পরিমাণ খুশি হোন যে, যেমন ধরো তোমাদের কেউ তপ্ত মরুভ‚মিতে নিজ উট গাছের ডালে বেঁধে ঘুমিয়ে পড়লো। সে উটের সঙ্গে তার খাদ্য-পানীয় সহ সকল আসবাব ছিলো। ঘুম থেকে জেগে দেখলো তার উটটি আগের স্থানে নেই। এদিকওদিক খুঁজেও মিললো না কোথাও। যখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে গেলো, তখুনি দেখলো তার উটটি যথাস্থানে রয়েছে। এমন মুহূর্তে সে ব্যক্তি যতটুকু খুশি হবে, কোনো বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তার’চে বেশি খুশি হোন। (মুসলিম : ২/৬৭০২)
মনে রাখতে হবে, কেবল তওবা করলেই হবে না; বরং তওবা কবুল হওয়ার জন্য রয়েছে কয়েকটি শর্ত। শর্তগুলো সামনে রেখে তওবা করলেই তওবা কবুল হবে, অন্যথায় নয়। শর্তগুলো হলো : ১. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ক্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করা। ২. গুনাহর কারণে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া। ৩. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহর জন্য ইস্তিগফার করা ও মাফ চাওয়া। ৪. সামনে থেকে গুনাহ না করার ওয়াদা করা। ৫. গুনাহকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা। ৬. কারো হক নষ্ট না করা। ৭. অন্তরে আশা রেখে তওবা করা যে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমার এই তওবাকে কবুল করবেন। ৮. তওবার ওপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা এবং বাস্তবিক অর্থে গুনাহ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। ৯.গুনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করা এবং ১০. পূর্ণ । এখলাস ও আন্তুরিকতার সঙ্গে তাওবা করা। দু.রাকাত নামাজ পড়ে উল্লিখিত শর্তগুলো সামনে নিয়ে নির্জনে আল্লাহর নিকট অনুনয়বিনয় করে ক্ষমা প্রার্থনা করা