রমজানে স্বাস্থ্য সচেতনতায় ইসলামের তাগিদ



মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতিবিরোধী কোনো কঠিন আদেশ ইসলামে নেই। তাই রমজানের রোজা যেমন ফরজ করা হয়েছে, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল করা হয়েছে। এমনভাবে রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে শরীর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা, নামাজের অর্ধেক এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে সুযোগ রেখেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭১৫)

লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখা নিষিদ্ধ
আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাওমে বিসাল তথা লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো তা করে থাকেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার মতো হতে পারবে না, আমাকে আমার রব পানাহার করান।’ তার পরও কোনো কোনো সাহাবি অতি আগ্রহে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে শুরু করে। একাধারে কয়েক দিন এভাবে যাওয়ার পর ঈদের চাঁদ উঠে যাওয়ায় সবাই রোজা সমাপ্ত করতে বাধ্য হয়, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেসব সাহাবিকে ধমকিস্বরূপ বলেন, ‘যদি চাঁদ না উঠত, তাহলে আমি আরো দীর্ঘ করতাম।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১১০৩)
সাহরি খাওয়ার প্রতি উৎহ দেওয়া
রোজা রাখার দরুন যাতে স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরি থেকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনের বেলা রোজা রাখতে সাহায্য নাও।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বার্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি খাও।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪৭৬)

দ্রুত ইফতারের তাগিদ
আমর ইবনে মাইমুন (রহ.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সাহরি খেতেন।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৯১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘মানুষ যত দিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭, মুসলিম, হাদিস : ১০৯৮)

রোজায় শিঙ্গা লাগাতে নিষেধ করা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন, তবুও সাহাবাদের এ কাজে নিষেধ করেছেন, যাতে তাদের রোজা রাখতে কষ্ট না হয়। এক সাহাবি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতে ও সাওমে বিসাল (লাগাতার রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৭৪)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যেন আমাদের কষ্ট না হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৭৫)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post