আল্লাহর কুদরতের বিশেষ কিছু নিদর্শন

মহান আল্লাহ গোটা সৃষ্টির একক স্রষ্টা। তিনি মহাক্ষমতাধর।
তাঁর রয়েছে অনুপম কুদরত। তিনি স্বীয় কুদরতে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কুদরতের কিছু অনুপম নিদর্শন হলো—
নিকৃষ্ট বস্তু থেকে উত্কৃষ্ট জীবের সৃষ্টি : আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট সৃষ্টি হলো মানুষ। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। তার মধ্যে রয়েছে বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা, কর্মক্ষমতা, বাকশক্তি ইত্যাদি। অথচ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। পৃথিবীতে যত ধরনের উপাদান রয়েছে, তন্মধ্যে মাটি সর্বনিকৃষ্ট উপাদান। এতে অনুভূতি, চেতনা উপলব্ধি ইত্যাদি কিছুই নেই। আগুন, পানি, বায়ু ও মাটি এসবের মধ্যে মাটি ছাড়া অন্য কিছুর মধ্যে কিছু না কিছু গতি ও চেতনা অনুভূত হয়।
আল্লাহ মানব সৃষ্টির জন্য নিকৃষ্ট বস্তুকেই বেছে নেন এবং তাকে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন করেন। আর এটাই ইবলিসের ভ্রষ্টতার প্রধান কারণ যে যার সৃষ্টি নিকৃষ্ট বস্তু দ্বারা, সে কিভাবে উত্তম বস্তু তথা অগ্নি দ্বারা সৃষ্টির ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে? মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ। ’ (সুরা : আর-রুম, আয়াত : ২০)
মানব সৃষ্টির উপাদান যে মাটি, তা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি থেকে বোঝা যায়। তিনি গোটা মানবজাতির অস্তিত্বের মূল। ফলে অন্য মানবের সৃষ্টিও পরোক্ষভাবে তাঁর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। তা ছাড়া সাধারণত মানুষের প্রজনন বীর্যের মাধ্যমে হলেও বীর্য যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত, তা মাটি থেকেই উৎপন্ন।
নারী-পুরুষের বিভাজন : মহান আল্লাহর অনুপম কুদরতের আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি মানুষকে নারী-পুরুষ দুই ভাগে বিভাজিত করেছেন। নারী হলো পুরুষের সঙ্গিনী। একই উপাদান থেকে, একই স্থানে, একই খাদ্য থেকে উৎপন্ন সন্তানদের মধ্যে তিনি নারী-পুরুষ দুটি পৃথক সত্তা সৃষ্টি করেছেন। তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মুখশ্রী, অভ্যাস, আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদি ভিন্ন প্রকৃতির। আল্লাহর পূর্ণ শক্তি ও প্রজ্ঞার এটি অন্যতম নিদর্শন। কোরআনে এসেছে, ‘তাঁর কুদরতের আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। ’ (সুরা : আর-রুম, আয়াত : ২১)
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি : বিশাল আকাশ ও বিস্তৃত ভূমির একক স্রষ্টা মহান আল্লাহ। এটি তাঁর কুদরতের আরেকটি অনুপম নিদর্শন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা এগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ২৯) তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘তারা কি তাদের ওপর স্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না, আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোনো ছিদ্র নেই। আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। ’ (সুরা : ক্বাফ, আয়াত : ৬-৭)
ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা : বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন বর্ণনাভঙ্গি আল্লাহ তাআলার কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। কেউ সুন্দর, কেউ কালো, কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কারো ভাষা আরবি, কারো ভাষা হিন্দি, কারো ভাষা ইংরেজি, কারো বাংলা, কারো ভাষা উর্দু, কারো ভাষা ফারসি, কারো ভাষা তুর্কি ইত্যাদি। এসব মহাক্ষমতাধর আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘করুণাময় আল্লাহ! শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা (ভাষা)। ’ (সুরা : আর-রাহমান, আয়াত : ১-৪)
নিদ্রার ব্যবস্থা : নিদ্রা মানুষের একটি অন্যতম নিয়ামত। এটি আল্লাহর কুদরতের বড় নিদর্শন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, নির্মাণ করেছি তোমাদের মাথার ওপর মজবুত সপ্ত-আকাশ। ’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৯-১২)
বিদ্যুতের চমক প্রদর্শন : মহান আল্লাহ মানুষকে বিদ্যুতের চমক দেখান। এতে মানুষ দুটি বিষয় নিয়ে ভাবে। একটি হলো, এটা পতিত হওয়ার ও জীবনহানি হওয়ার ভয়। আরেকটি হলো বৃষ্টির সম্ভাবনা। বৃষ্টির ফলে শুষ্ক ও মৃতপ্রায় জমিন পুনর্জীবন লাভ করে। বিভিন্ন ধরনের ফসল ও ফল জন্মায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর আরো নিদর্শন—তিনি তোমাদের দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্য এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এর মাধ্যমে ভূমির মৃত্যুর পর তা পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। ’ (সুরা : আর-রুম, আয়াত : ২৪)
বাতাস সৃষ্টি : আল্লাহর কুদরতের আরেকটি অনুপম নিদর্শন হলো বাতাস সৃষ্টি। এ বাতাসের মাধ্যমে মানুষকে তাঁর অনুগ্রহ আস্বাদন করান। বাতাসের মাধ্যমে জাহাজগুলো সাগরে বিচরণ করে। বাতাস থেকে মানুষ অক্সিজেন গ্রহণ করে। অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাগুলোর চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি নাজিল করেন, এর মাধ্যমে মৃত জমিন সজীব করে তোলেন এবং তাতে ছড়িয়ে দেন সব রকম জীবজন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন মেঘমালা আসমান ও জমিনের মধ্যে বিচরণ করে। নিশ্চয়ই এ সব কিছুর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্য। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৪)
জীবিকার ব্যবস্থা : মহান আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং জমিনের মাধ্যমে সব সৃষ্টির জীবিকার সুব্যবস্থা করেছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তুমি জিজ্ঞেস করো, কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে জীবিকা দান করেন কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! বলে দাও, তার পরও ভয় করছ না?’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৩১)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post