ভোট নিয়ে কি বলে ইসলাম?

দুনিয়াতে মানুষের সবচেয়ে বড় আমানত হচ্ছে যথাযথ দায়িত্ব পালন। যেহেতু মানুষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটের মাধ্যমেই দায়িত্বশীল নির্বাচন করে থাকেন। তাই ভোট হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র আমানত। ভোট দিতে হবে এমন মানুষকে যিনি মানুষের মধ্যে সমতা বিধান করতে পারবেন। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী পরিচালনার জন্য সত্যদ্বীনসহ খিলাফাতের মহান দায়িত্ব নিয়ে অগণিত অসংখ্য নবি রাসুল পাঠিয়েছেন। এ নবি-রাসুলগণকে পাঠানোর পূর্বে আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধানকে বহন করার জন্য আকাশ, পৃথিবী, পর্বতমালার সামনে পেশ করেছিলেন। কিন্তু তারা সবাই এ দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।

কোনো আসনে একজন ‘সংসদ সদস্য’ পদপ্রার্থীকে ভোট দিলে বা মত দেয়ার বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রশ্নে, কুরআন-হাদিসের মাপকাঠিতে ভোট দেয়ার বিষয়টি শরিয়তের অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অধ্যায় বা বিষয়াধীন হয়ে থাকে। যার প্রতিটিকে আমরা একেকটি আঙ্গিক বা প্রেক্ষিত হিসেবে গণ্য করতে পারি। যেমন:
একটি আঙ্গিক হচ্ছে ‘শাহাদত’ বা ‘সাক্ষ্য দেয়া’। ভোটার ব্যক্তি যাকে তাঁর ভোট বা মতামত দিচ্ছেন তাঁর অর্থ হচ্ছে, ভোটদাতা সংশ্লিষ্ট ভোটপ্রার্থী সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ‘ওই প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাজের (রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন পাস করা, ইউনিয়নের জনগণের সার্বিক দায়িত্ব পালন ইত্যাদি) যথাযথ যোগ্যতাও রাখেন এবং প্রয়োজনীয় সততা ও আমানতদারীও তাঁর মধ্যে রয়েছে।’

এখন বাস্তবে যদি ওই প্রার্থীর মধ্যে সেসব যোগ্যতা ও গুণ অনুপস্থিত হয় এবং তা সত্ত্বেও ভোটদাতা জেনেশুনেই তাঁকে ভোট দিচ্ছেন; তা হলে সেটা হবে মিথ্যা সাক্ষ্য যা বড় মাপের কবিরা গুনাহ এবং ভোটার হবে মিথ্যুক, কবিরা পাপে জড়িত; যার কারণে তাঁর উভয় জগত বরবাদ হয়ে যাবে। সহিহ বুখারি শরিফে নবী সা: মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরক-অপরাধের পরবর্তী পর্যায়ের অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন। (মিশকাত)

সুতরাং ভোটদাতাকে নিজ পরকাল ও পরিণতি বিবেচনা করে ভোট দেয়া তথা সাক্ষ্য দিতে হবে। কেবল প্রথাগত সম্মান বা লাজলজ্জায় অথবা কোনো লোভ-লালসা ও ভয়ভীতির কারণে নিজকে ওই মহা ক্ষতির মুখোমুখী করতে যাওয়া ঠিক হবে না।

ভোটের দ্বিতীয় আঙ্গিক বা ইসলামী ব্যাখ্যা হচ্ছে, ‘শাফায়াত’ বা সুপারিশ। অর্থাৎ ভোটদাতা যেমন কিনা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, তাঁর মানে তিনি সুপারিশ করছেন। এ সুপারিশ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যা বলা হয়েছে তা সব সংশ্লিষ্ট ভোটার বা ভোটদাতার সম্মুখে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের ভোট দেয়ার তিনটি বাস্তব অবস্থা হয়ে থাকে (ক) সাক্ষ্য দেয়া, (খ) ‘শাফায়াত’ বা সুপারিশ ও (গ) জাতি ও সমষ্টির ব্যাপারে প্রতিনিধি নিযুক্তি। তিনটি অবস্থা বা ব্যাখ্যার আলোকেই যেরকমভাবে সৎ, আমানতদার, উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রার্থীকে ভোট দেয়ার যেমন বিরাট সওয়াব রয়েছে এবং তাঁর ফলাফলের ভাগিদার হবেন; তেমনি অযোগ্য, অসৎ ব্যক্তিকে ভোট দেয়া মানে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মন্দ সুপারিশ করা এবং অবৈধ ও নাজায়েজ ওকালত বা প্রতিনিধি নির্ধারণে অংশগ্রহণ ছাড়াও তাঁর ধ্বংসাত্মক ফলাফল ও তাঁর সমপরিমাণ পাপরাশি সংশ্লিষ্ট ভোটদাতার আমলনামায়ও যোগ হয়ে থাকবে।
প্রার্থিতা : কোনো সংসদ সদস্য হওয়ার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যিনি প্রস্তুত হন, তিনি যেন পুরো জাতির সামনে দুটি বিষয়ে দাবি বা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

১. একটি হচ্ছে, ‘তিনি ওই কাজ বা দায়িত্ব সম্পাদনে যোগ্যতা রাখেন যাকে কেন্দ্র করে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।’

২. দ্বিতীয়তটি হচ্ছে, ‘তিনি আমানত ও সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করবেন।’ এখন বাস্তবে যদি তিনি সংশ্লিষ্ট কাজে যোগ্যতাসম্পন্ন হন এবং সততা ও নিষ্ঠার সাথে জাতির সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ময়দানে আসেন, তা হলে তাঁর ওই পদক্ষেপ অনেকটা বৈধ সীমার ভেতরেই গণ্য করা যায়।

তবে এ ক্ষেত্রেও শরিয়তসম্মত উত্তম পন্থা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি যেন নিজের যোগ্যতার ও সেবার কথা প্রকাশ করে প্রার্থী না হন, বরং মুসলমানদের কোনো দল বা জামাতের পক্ষ থেকে তাঁকে যোগ্য বিবেচনা করে যেন তাঁর নাম প্রস্তাব করেন এবং তাঁকে দায়িত্ব গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। আর যার মধ্যে মূলত তেমন দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্যতাই নেই, তাঁর পক্ষে দাঁড়ানো বা তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম ও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো আসনের সদস্য পদে নির্বাচিত বা মনোনীত হওয়ার পর থেকে এ আসনের সব জনগণ এবং তাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবরকম দায়দায়িত্ব ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, সুখ-দুঃখের সার্বিক জবাবদিহিতা তাঁর নিজের ঘাড়ে চেপে বসল। এ জন্য তাঁকে ইহকাল-পরকাল উভয় জগতে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post