রমজানে ধুমপান ও তামাক বর্জনের সুবর্ণ সুযোগ

ধূমপানে রোজা ভঙ্গ হয়। তাই রমজানে দিনের বেলায়
বিশ্বাসী মুমিন রোজাদার ব্যক্তি ধূমপান করেন না।
অনুরূপভাবে যাঁরা বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করেন,
তাঁরাও রোজা অবস্থায় তা করেন না। সুতরাং, ধূমপায়ী ও
তামাকসেবীদের জন্য তা বর্জনের মহাসুযোগ।
ধূমপানে বা তামাকে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা এগুলো সেবন
ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকতে পারেন না; কিন্তু পবিত্র
রমজানে তাঁরা আল্লাহর রহমতে ও ইমানের বলে
বলীয়ান হয়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা তা পরিহার করে থাকেন
এবং রাতের বেলায় তা গ্রহণ করলেও সীমিত মাত্রায়
গ্রহণ করেন। অনেকে এমনও আছেন, রমজানের
চাঁদ থেকে ঈদের চাঁদ পর্যন্ত পূর্ণ এক মাস ধূমপান ও
তামাক সম্পূর্ণ বর্জন করে থাকেন।
দুঃখের বিষয় হলো, রমজানের পর তাঁরা যখন আবার তা
গ্রহণ করতে শুরু করেন; তাহলে তাঁরা কি রমজানের
ফজিলত অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন? তাঁরা কি
জীবনব্যাপী রমজানের যে শিক্ষা, তা লাভ করতে
পারেননি? তাই আসুন, যাঁদের ধূমপানের বা তামাক
সেবনের বদভ্যাস আছে, তাঁরা ইবাদতের সোনালি
সময় পবিত্র রমজানের এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে
লাগাই। এখনই দৃঢ় সংকল্প করি ‘ধূমপান করিনি, করব না; ধূমপান
ছেড়েছি, আর ধরব না।’ ‘তামাক সেবন করব না;
ছেড়েছি আর ধরব না।’ মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের
সাহায্য করবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: যখন রমজান মাস আসে, তখন
বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, দোজখের
দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা
হয়। (বুখারি শরিফ, সওম অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ১,১৮৭, খণ্ড:
৩, পৃষ্ঠা: ২৪১, হাদিস: ১,৭৭৮)। রমজানে রোজা অবস্থায়
দিনের বেলায় হালাল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ না করা; এর
শিক্ষা হলো বছরব্যাপী (জীবনভর) হারাম ও ক্ষতিকর
খাদ্য ও পানীয় বর্জন করা। এক মাস সিয়াম সাধনার
মাধ্যমে সেই মানসিক শক্তি ও শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ
করা।
ধূমপান ও তামাক সেবন অপচয়; ধূমপায়ী ও
তামাকসেবী শয়তানের ভাই
ধূমপান ও তামাক সেবন প্রয়োজনীয় নয় এবং
উপকারীও নয়; বরং শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর। তাই এটি সম্পূর্ণ অপচয়ের শামিল। ইসলামি
বিধানে অপচয় করা হারাম; অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘এবং কিছুতেই অপব্যয়
কোরো না; নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই;
আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয়
অকৃতজ্ঞ।’ (আল কোরআন, সুরা-১৭ [৫০] বনি ইসরাইল
আল ইসরা (মাক্কী), রুকু: ৩/৩, আয়াত: ২৬-২৭, হিজব: ২৯
(নিসফ), পারা: সুবহানাল্লাহজি-১৫, পৃষ্ঠা: ২৮৫/৩)। পবিত্র
মেরাজ রজনীতে যে ১৪টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত মহান
আল্লাহ কর্তৃক প্রিয় নবীজি (সা.) দান করেছেন, এটি
তার অন্যতম। এই মেরাজের রাতেই নামাজ ও রোজা
ফরজ হয় এবং অপচয় নিরোধের এই নির্দেশ প্রদান
করা হয়। সুতরাং, এই নির্দেশ নামাজ-রোজার মতোই
গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে যে পাঁচটি
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান এক
কদমও নড়তে পারবে না: তা হলো: (১) জীবন, (২)
যৌবন, (৩) আয়, (৪) ব্যয়, (৫) জ্ঞান। ব্যয় সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা পানাহার করো;
কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের
পছন্দ করেন না। (আল কোরআন, সুরা-৭ [৩৯] আল
আরাফ (মাক্কী), রুকু: ৩/১০, আয়াত: ৩১, মঞ্জিল: ২,
হিজব: ১৬ (রুব), পারা: ওয়া লাও অন্নানা-৮ (সুলুস), পৃষ্ঠা:
১৫৫/১৩)।
ধূমপান ও তামাক সেবনের ক্ষতি
ধূমপান ও তামাক সেবনে কারও কারও মনে হতে পারে
সাময়িক উপকার হয়; আসলে তা কিন্তু নয়। এর ক্ষতি চরম
ও দীর্ঘস্থায়ী এবং বহুমুখী। আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং
মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু উহাদের ক্ষতি উপকার
অপেক্ষা অধিক।’ (আল কোরআন, সুরা-২ [৮৭] আল
বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৭/১১, আয়াত: ২১৯, মঞ্জিল: ১, হিজব:
৪ (নিসফ), পারা: সাইয়াকুল-২ (সুলুস), পৃষ্ঠা: ৩৫/১৩)।
বাংলাদেশে বিড়ি-সিগারেট ও তামাক ব্যবসায়ীরা
সবচেয়ে বেশি আয়কর প্রদান করলেও এই খাত
থেকে পাওয়া আয়কর ধূমপান ও তামাকজনিত ক্ষতির
চিকিৎসাব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।
নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দেওয়া মহাপাপ
এমন কোনো কাজকর্ম, যা নিজেকে ধ্বংসের
মধ্যে ফেলে বা অঙ্গহানি ঘটায় অথবা স্থায়ী ক্ষতি
করে, তা সম্পূর্ণরূপে হারাম নিষিদ্ধ ও নাজায়েজ এবং
আত্মহত্যার শামিল। কারণ, মানুষ তার নিজের স্রষ্টাও নয়,
মালিকও নয়; সবকিছুর মালিক হলেন আল্লাহ তাআলা; আর
মানুষ হলো তাঁর আমানতদার বা হেফাজতকারী। আল্লাহ
তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা নিজেদের হাতে
নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কোরো না।
তোমরা সৎ ও সুন্দর কাজ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ
তাআলা সৎকর্মপরায়ণ লোকেদের ভালোবাসেন।
(আল কোরআন, সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু:
২৪/৮, আয়াত: ১৯৫, মঞ্জিল: ১, হিজব: ৩ (সুলুস), পারা:
সাইয়াকুল-২ (নিসফ), পৃষ্ঠা: ৩১/৯)।
ধূমপান মাদক ও নেশার সোপান
ধূমপান ও তামাক একপর্যায়ে নেশায় পরিণত হয়, যা ছাড়া
ধূমপায়ী ও মাদকসেবী থাকতে পারে না। ইসলামি
শরিয়তে নেশা একেবারে হারাম। আল্লাহ তাআলা
বলেন: ‘হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার
বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু; শয়তানের কর্ম।
সুতরাং, তোমরা তা বর্জন করো; যাতে তোমরা
সফলকাম হতে পারো। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা
তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং
তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাতে বাধা দিতে
চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (আল
কোরআন, সুরা-৫ [১১২] আল মায়েদাহ, রুকু: ১২/২,
আয়াত: ৯০-৯১, মঞ্জিল: ২, পারা: ওয়া ইজা ছামিঊ-৭, পৃষ্ঠা:
১২৪/২)। জাহান্নাম বা দোজখের বৈশিষ্ট্য তিনটি: আগুন,
ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ। এই তিনটির সমাহার ঘটে ধূমপানে।
সর্বোপরি ‘ধূমপান মাদক সেবনের সোপান’ তাই ধূমপান
ও তামাক সেবন এখনই বন্ধ করা উচিত।
মাসআলা
নিজের ক্ষতি করার যেমন এখতিয়ার নেই, তেমনি
অন্যের ক্ষতি করাও জায়েজ নয়। একজন ধূমপায়ী
নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের অন্যদেরও ক্ষতি
করে থাকে, যা সম্পূর্ণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। যাঁরা ধূমপান
করে বা তামাক সেবন করে, তাদের মুখে ও
শরীরে একধরনের উৎকট বিশ্রী দুর্গন্ধ ছড়ায়; যা
পাশের মানুষের কষ্টের কারণ হয় এবং তা হারাম ও
নাজায়েজ।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post