মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য
চেষ্টা ও শ্রমের কোন বিকল্প নেই। মানুষের
প্রকৃতির সঙ্গে শ্রমের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং
কাজ করতে যার অনীহা, সে আসলে মানবতা এবং
ধর্মীয় সংস্কৃতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে
পারেনি। কারণ, ধর্ম মানুষকে তার বৈষয়িক ও
আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে
বলেছে। ধার্মিক ব্যক্তি কোন অবস্থায়ই কাজ
করতে ভয় পায় না, বরং কর্মকে নিজের সম্মান ও
মর্যাদার প্রতীক বলে মনে করে। ১ মে বিশ্ব
শ্রমিক দিবস। এ উপলক্ষে এখানে আমরা সংক্ষিপ্ত
আলোচনার প্রয়াস পাব।
১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো
শহরের হাজার হাজার শ্রমিক তাদের ন্যায়সঙ্গত
দাবি আদায়ের জন্য প্রতিবাদ বিক্ষোভে
নেমেছিলেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর
গুলিতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং এক
পর্যায়ে মার্কিন সরকার শ্রমিকদের দাবি-
দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়। তখন থেকে
সারাবিশ্বে ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন
দেশে আজ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শ্রমিকদের পাশাপাশি নানা শ্রেণী-পেশার
লোকজন মে দিবসের শোভাযাত্রায় অংশ
নিয়েছেন। অথচ যে দেশের শ্রমিকদের
আন্দোলনের ফলে আজকের দিনটি শ্রমিক দিবস
হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে, সে দেশে কিন্তু ১লা
মে শ্রমিক দিবস পালিত হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ও
কানাডায় প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম
সোমবার শ্রমিক দিবস পালন করা হয়।
মানবতার মুক্তির ধর্ম ইসলাম সব মানুষের বিশেষ
করে শ্রমিকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং
বস্তুগত কোন মানদণ্ড দিয়ে এ সম্মানের তুলনা চলে
না। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত
মোহাম্মাদ (সা.) অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে শ্রমিকের
হাতে চুমু খেতেন। তাবুকের যুদ্ধ শেষে রাসূলে
খোদা যখন মদীনায় ফিরে আসেন তখন বিশিষ্ট
সাহাবি সা'দ আনসারি তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
রাসূলুল্লাহ আনসারির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তার
হাতের তালুতে কঠোর পরিশ্রমের ফলে সৃষ্ট
খসখসে দাগ অনুভব করেন। তিনি বুঝতে পারেন,
অধিক পরিশ্রমের ফলে সা'দ আনসারির হাতের
তালু ফেটে গেছে। তিনি আনসারির হাতে চুমু
খেয়ে বললেন, "এই হাতে কখনো জাহান্নামের
আগুন স্পর্শ করবে না।"
ইসলাম শ্রমিক শ্রেণীকে শ্রেষ্ঠতম বিশেষণে
ভূষিত করেছে। এ ধর্ম সংসারের ভরণপোষণের জন্য
হালাল উপায়ে উপার্জনকে আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছে এবং শ্রমিককে
'আল্লাহর পথের মুজাহিদ' বলে উল্লেখ করেছে। এ
সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেছেন : "যে
ব্যক্তি পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য আল্লাহর
কাছে রিযিক কামনা করে, তাকে জিহাদের
চেয়েও বড় পুরস্কার দেয়া হয়।" এ ছাড়া, যে ব্যক্তি
হালাল রুজি উপার্জনরত অবস্থায় মারা যায়, তার
পুরস্কার শহীদের সমান।
ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনার একটি
হচ্ছে জীবনের সব অবস্থায় পরিশ্রম করে যেতে
হবে এবং কোন অবস্থায়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকা
যাবে না। পরিবারের ভরণ- পোষণের জন্য হালাল
উপায়ে জীবিকা অর্জনকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব
দিয়েছে। এ সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.) এর একটি
বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, "যদি
তোমার হাতে একটি চারাগাছ থাকে এবং তুমি
জানো যে কিছুক্ষণ পর তুমি মারা যাবে কিংবা
কিছুক্ষণ পর কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে, তারপরও তুমি
সেটি রোপন করে মারা যাও।" আল্লাহর প্রেরিত
সব মহাপুরুষ, নবী, রাসূল ও আম্বিয়ায়ে কেরাম
কায়িক পরিশ্রম করে সংসার চালিয়েছেন এবং
তারা নিজেদেরকে শ্রমিক হিসেবে পরিচয়
দিয়ে গর্ববোধ করতেন। তারা অন্যদেরও কঠোর
পরিশ্রম করার উপদেশ দিয়ে গেছেন। রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) মসজিদে নববী স্থাপনের সময় সাহাবিদের
সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন, ছোট-
বড় পাথর বহন করেছেন, শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন।
সাহাবিরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে রাসূলকে বিশ্রাম
করার পরামর্শ দিলেও তিনি তা শোনেননি, বরং
নিজের কাজ চালিয়ে গেছেন।
শ্রমিকের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রেও ইসলামের
কঠোর দিক নির্দেশনা রয়েছে। শ্রমিকের
অধিকারের প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে,
তার নজীর অন্য কোন ধর্ম বা চিন্তাদর্শে পাওয়া
যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শরীরের ঘাম
শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে
দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র: পার্সটুডে