মক্কা-মদীনাতে শবে বরাত পালন করা হয় না


(যদি একটু সময় লাগে তবু ও পড়ুন ইনশাল্লাহ নিজেকে
বিশাল বড় বিদআত থেকে রক্ষা করতে পারবেন)
প্রথমে বলে রাখি শবেবরাত শব্দটা কুরআন ও সহিহ
হাদিসে কোথাও উল্লেখ নেই। আমাদের সমাজের
আলেম ওলামাগণ শবে বরাতে পক্ষে ওয়াজ করার
সময় প্রথমেই নিম্নের এই আয়াতের শেষ অংশ পাঠ
করে বলে ‘এই দেখুন শবে বরাত বা বরকতময় রাতের
কথা কুরআনে আছে’।
কি সুন্দর ভণ্ডামি!! কুরআনের আয়াতকে ঘুরিয়ে
পেঁচিয়ে বাঁকা করে তারপর অর্ধেকটা শুনিয়ে দেয়
আর সাথে সাথে মুসল্লিরা বলে ওঠে
‘সোবহানাল্লাহ!’। অথচ তারা পুরোটা পড়ে শোনায়
না বা মুসল্লিরা অর্থ বোঝেনা। এখানে উল্লেখ
করা আছে, হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো
এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো
সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়
স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪)
শবে বরাত পন্থী আলেম উলামারা এখানে বরকতময়
রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন।
আমি এখানে স্পষ্টভাবেই বলব যে, যারা এখানে
বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে
থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কালাম
বিকৃত করার মত অপরাধ।
কারণ : (এক) কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর
বা ব্যাখ্যা সূরা আল-কদর দ্বারা করা হয়। সেই সূরায়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﴿
১ ﴾ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﴿২ ﴾ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ ﴿৩ ﴾ ﺗَﻨَﺰَّﻝُ
ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣْﺮٍ ﴿৪ ﴾ ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻫِﻲَ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﻄْﻠَﻊِ
ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﴿ ৫﴾ অর্থ : আমি এই কুরআন নাযিল করেছি
লাইলাতুল কদরে। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি?
লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা
(ফেরেশ্তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার
নির্দেশে। এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন্ত
অব্যাহত থাকে। (সূরা কাদর, ১-৫)
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল
বারায়াত নয়। সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের
ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর। আর এ ধরনের ব্যাখ্যা
অর্থাৎ আল-কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য
আয়াত দ্বারা করা হল সর্বোত্তম ব্যাখ্যা।
(দুই) সূরা দুখানের লাইলাতুল মুবারাকার অর্থ যদি
শবে বরাত হয় তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায় আল
কুরআন শাবান মাসের শবে বরাতে নাযিল হয়েছে।
অথচ আমরা সকলে জানি আল-কুরআন নাযিল হয়েছে
রামাযান মাসের লাইলাতুল কদরে।
যেমন সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ
রাব্বুল ‘আলামীন বলেন : ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁَﻥُ .
অর্থ : রামাযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-
কুরআন।
সুতরাং বরতময় রাত্রিটি অবশ্যই রমজান মাসে (যদি
আপনি কুরআন বিশ্বাস করেন তবে এটাও মানবেন)।
প্রশ্ন থেকে যায় হাদীসে কি লাইলাতুল বরাত বা
শবে বরাত নেই? সত্যিই হাদীসের কোথাও আপনি
শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত নামের কোন
রাতের নাম খুজে পাবেন না। যে সকল হাদীসে এ
রাতের কথা বলা হয়েছে তার ভাষা হল ‘লাইলাতুন
নিস্ফ মিন শাবান’ অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত্রি।
শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত শব্দ আল-কুরআনে
নেই, হাদীসে রাসূলেও নেই। এটা মানুষের বানানো
একটা শব্দ। ভাবলে অবাক লাগে যে, একটি প্রথা
ইসলামের নামে শত শত বছর ধরে পালন করা হচ্ছে
অথচ এর আলোচনা আল-কুরআনে নেই। সহীহ
হাদীসেও নেই। অথচ আপনি দেখতে পাবেন যে,
সামান্য নফল ‘আমলের ব্যাপারেও হাদীসের
কিতাবে এক একটি অধ্যায় বা শিরোনাম লেখা
হয়েছে।
শবেবরাত সম্পর্কে যেসব জাল হাদিস বর্ননা তার
মধ্যে এই জাল হাদিস্টা খুবই প্রচলিত
আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন : যখন মধ্য শাবানের রাত আসে
তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর
দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ
তা’আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ
করে বলেন : আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী
আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্ক
প্রার্থনাকারী আমি রিয্ক দান করব। আছে কি কোন
বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থ্যতা দান
করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। (ইবনে
মাজাহ ও বাইহাকী)
প্রথমতঃ এ হাদীসটি জাল। কেননা এ হাদীসের
সনদে (সূত্রে) ইবনে আবি সাবুরাহ নামে এক ব্যক্তি
আছেন, যিনি অধিকাংশ হাদীস বিশারদের নিকট
হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিত।ইমাম বুখারি
তাকে খুবই দুর্বল বলেছেন।ইমাম বুখারির উস্তাদ
আহমদ তাকে জাল বলেছেন। এ যুগের বিখ্যাত
মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃ) বলেছেন,
হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে একেবারেই জাল।
দ্বিতীয়তঃ অপর একটি সহীহ হাদীসের বিরোধী
হওয়ার কারণে এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। সে সহীহ
হাদীসটি হাদীসে নুযুল নামে পরিচিত, যা ইমাম
বুখারী ও মুসলিম তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি হল : অর্থ : আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন : আমাদের রব আল্লাহ তা’আলা প্রতি
রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার
আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে থাকেন : কে আছ
আমার কাছে দু’আ করবে আমি কবুল করব। কে আছ
আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা
করব। (বুখারী ও মুসলিম)
আর উল্লিখিত হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ
তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে নিকটতম আকাশে
আসেন ও বান্দাদের দু’আ কবুলের ঘোষণা দিতে
থাকেন। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এই সহীহ
হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের
শেষের দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ করে দু’আ
কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। আর এ হাদীসটি
সর্বমোট ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং
বুখারী এবং মুসলিম ও সুনানের প্রায় সকল কিতাবে
এসেছে। তাই হাদীসটি প্রসিদ্ধ। অতএব এই মশহুর
হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে হাদীসটি
পরিত্যাজ্য হবে।
যারা বাপ দাদার দেখানো পথের পূজা করেনা, যারা
আল্লাহকে ভয় করে কুরআনের কাছে মাথা নত করে
দেয় সেইসব মুমিনদের জন্য এটুকু দৃষ্টান্তই যথেষ্ট যে
ইসলামে আলাদা কোন শবে বরাতের স্থান নেই।
এক্ষেত্রে আর কোন যুক্তি দিতে হবে বলে মনে
করিনা। অবশ্য যারা সত্যটা মানতে দ্বিধা করে
তারা মুসলমান নয়। তারা হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলে
কট্টোর হিন্দুই হতো, তারা সত্যটা খুঁজেও দেখেনা।
কুরআন কোথাও বলেনি ‘আমাকে না যাচাই করেই
বিশ্বাস করো’ বরং বারবার বলেছে ‘যাচাই করো,
চিন্তা করো, উপলব্ধি করো, প্রচার করো।’
আল্লাহ্ যুক্তি দিয়ে কথা বলতে বলেছে (সুরা জুমার,
১৮) তাই যুক্তি দিয়েই প্রমান করা হল যে শবে বরাত
একটি বিদআত এবং কুফরি। কারন আল্লাহ্ যেখানে
বলছে রমজান মাসে কুরআন নাজিল করেছেন এবং
সেটাই বরকতময় রাত সেখানে নিজেদের তৈরি
বানোয়াট রাতকে বরকতময় রাত ঘোষনা করাটা
আল্লাহর সাথে মশকরা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার করাই কুফরি এবং
সে সঙ্গে সঙ্গে কাফির হয়ে যায়। আল্লাহ্ আমাদের
রক্ষা করুন।
এবার আসুন দেখি আমাদের সমাজে প্রচলিত শবে
বরাত মানে বিদআতটির ভণ্ডামি। ভণ্ডদের
ফতোয়ামতে শবে বরাত একটি পুন্যের রাত বা
বরকতময় রাত। অনেক ওলামায়ে কেরামগন বিশ্বাস
করেন যে, এই রাত্রিতে মানুষের ভাগ্য লিখা বা
বন্টন করা হয়। অথচ আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করছেন ‘এটা
ছিল সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি
বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে
থাকে৷’ (সুরা দুখান, ০৪)। সুতরাং ভাগ্য বন্টন করা হয়
কেবল লাইলাতুল কদরেই, শবে বরাতে নয়। তাই
এইধরনের আকিদাহ তে বিশ্বাসীরা কাফির হয়ে
যাবে।
এ রাতে মানুষ আল্লাহকে খুশি করার জন্য সারারাত
নফল নামাজ আদায় করে। হাজার রাকাতের নামাজ
খ্যাত সালাতুল মুবারক আদায় করে, অথচ এই
সালাতের কোন দলিল নেই এটা ভুয়া এবং বিদআত।
কোন সহিহ হাদিসে এটা নেই। এবার আসুন রুটি ও
হালুয়ার ভণ্ডামি পেশ করি।
শবে বরাতে বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া ও রুটি তৈরি
করে খাওয়া হয়। কারন জানতে চাইলে তারা বলে
‘উহুদের যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর দাঁত শহিদ হওয়াতে
তিনি শক্ত গোসত রুটি খেতে পারেন নি তাই হালুয়া
রুটি খেয়েছিলেন।’ বাহবা কত সুন্দর ভণ্ডামি। কিন্তু
শয়তানের বুদ্ধি মুমিনের চেয়ে উত্তম নয়। উহুদের যুদ্ধ
হয়েছিল কবে?
উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল শাউয়াল মাসের ১১ তারিখ
রোজ শনিবার সকাল ১১ টায়। আর শবে বরাত পালিত
হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখ। কত সুন্দর যুক্তি
বিদআতের! শাউয়াল মাসে দাঁত শহিদ হয়ে রাসুল
সাঃ রুটি খেয়েছিলান শাবান মাসে??
এটা কি মেনে নেওয়ার মত কোন যুক্তি? রুটি হালুয়া
আরেকটি বিদআত।
হ্যাঁ আপনি খাওয়ার জন্য তৈরি করুন, প্রতিবেশীদের
বণ্টন করুন, গরীব দুঃখীদের বণ্টন করুন এতে সওয়াব
আছে কিন্তু শবে বরাতের উদ্দেশে তা পালিন করে
হালুয়া রুটি খাওয়া সম্পুর্ন বিদআত ও কুফরি।
তাই সাবধান! মুসলিম ভাইয়েরা, জেনে শুনে কুরআন ও
হাদিস বিরোধি বিদাতে লিপ্ত হবেন না। শবে বরাত
কোন ইসলামিক রাত না, এটি আর দশটা সাধারণ
রাতের মতই। আর এই রাতের জন্য আলাদা কোন
নামাজ নেই, পীরের বাচ্চারা এই নামাজেও
বিদআত এনেছে। খবরদার তাদের পাতানো ফাঁদে
পা দিয়ে নিজের ঈমান নষ্ট করবেন না।
সুত্র: ইন্টারনেট। ড. জাকির নায়েকের লেকচার

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post