নিউজ ডেস্ক: প্রসিদ্ধ নবী হজরত সুলাইমান (আ.)
দাউদ (আ.)-এর পুত্র। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুয়ত,
জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও তাঁর পিতার রাজত্বের
স্থলাভিষিক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে এমন
কিছু নেয়ামত দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীকে
দান করা হয়নি। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন, ‘আমি দাউদের জন্য সুলাইমানকে দান
করেছিলাম, সে কতই না উত্তম বান্দা। অবশ্যই সে
ছিল আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল। ’ (সুরা : ছদ,
আয়াত : ৩০)
সুলাইমান (আ.)-এর গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি সম্পর্কে
আরেকটি ঘটনা হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। দুজন
মহিলার দুটি সন্তান ছিল। একদিন নেকড়ে বাঘ এসে
একটি বাচ্চা নিয়ে যায়। তখন প্রত্যেকেই বলল,
তোমার বাচ্চা নিয়ে গেছে, যেটি আছে ওটি আমার
বাচ্চা। বিষয়টি ফয়সালার জন্য ওই দুই মহিলা দাউদ
(আ.)-এর কাছে এলো। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার
পক্ষে রায় দেন। তখন তারা বেরিয়ে সুলাইমান (আ.)-
এর কাছে আসে এবং সব কথা খুলে বলে। সুলাইমান
(আ.) তখন একটি ছুরি আনতে বলেন এবং বাচ্চাটাকে
দুই টুকরা করে দুই মহিলাকে দিতে চাইলেন। তখন
কনিষ্ঠ মহিলা বলল, আল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুন,
বাচ্চাটি ওই মহিলার। তখন সুলাইমান কনিষ্ঠ
মহিলার পক্ষে রায় দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬৯)
এভাবে কৌশলে তিনি সত্য উদ্ঘাটন করেছিলেন।
সুলাইমান (আ.)-এর বৈশিষ্ট্য
সুলাইমান (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কিছু
বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন, যা আর কাউকে দান
করেননি। যেমন—
এক. মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-এর জন্য বাতাসকে
অনুগত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি
সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছিলাম বায়ুকে, যা
সকালে এক মাসের পথ ও বিকেলে এক মাসের পথ
অতিক্রম করত। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১২)
দুই. তামা তাঁর হাতে তরল ধাতুতে পরিণত হতো।
আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার জন্য গলিত তামার একটি
ঝরনা প্রবাহিত করেছিলাম। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত :
১২)
তিন. জিন জাতি তাঁর অনুগত ছিল। কোরআনে
কারিমে এসেছে, ‘আর জিনের মধ্যে কিছুসংখ্যক
তার সম্মুখে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে।
’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১২)
আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তিনি জিনদের দ্বারা
বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদে আকসা পুনর্নির্মাণ
করেন। কোরআনে কারিমের সুরা সাবার ১৪ নম্বর
আয়াতে এর চমকপ্রদ ঘটনা উল্লেখ হয়েছে।
চার. পক্ষীকুলকে তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল
এবং তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। আল্লাহ বলেন,
‘সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল এবং
বলেছিল, হে লোক সকল! আমাদের পক্ষীকুলের
ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সব কিছু
দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট মর্যাদা।
’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৬)
পাখিরা তাঁর হুকুমে বিভিন্ন কাজ করত। রাষ্ট্রীয়
গুরুত্বপূর্ণ পত্র তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে
পার্শ্ববর্তী ‘সাবা’ রাজ্যের রানি বিলকিসের
কাছে পাঠিয়েছিলেন। (দেখুন—সুরা নামল, আয়াত
২০-৪৪)
পাঁচ. পিপীলিকার ভাষাও তিনি বুঝতেন। আল্লাহ
বলেন, ‘অবশেষে সুলাইমান তার সৈন্যদল নিয়ে
পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল, তখন
পিপীলিকা (নেতা) বলল, হে পিপীলিকা দল!
তোমরা নিজ নিজ গৃহে প্রবেশ করো, অন্যথায়
সুলাইমান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের
পিষ্ট করে ফেলবে। তার এ কথা শুনে সুলাইমান
মুচকি হাসল। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৮-১৯)
ছয়. তাঁকে এমন সাম্রাজ্য দান করা হয়েছিল, যা
পৃথিবীতে আর কাউকে দান করা হয়নি। আল্লাহ
বলেন, ‘সুলাইমান বলল, হে আমার পালনকর্তা!
আমাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে এমন এক
সাম্রাজ্য দান করো, যা আমার পরে আর কেউ যেন
না পায়। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা। ’ (সুরা : ছদ, আয়াত
: ৩৫)
সুলাইমান (আ.) সম্পর্কে যুগে যুগে বিভ্রান্তি
নবী করিম (সা.) যখন সুলাইমান (আ.)-এর প্রশংসা
করেন, তখন অনেক ইহুদি বলেছিল, আশ্চর্যের বিষয়,
মুহাম্মদ সুলাইমানকে নবীদের মধ্যে গণ্য করে, অথচ
তিনি ছিলেন একজন জাদুকর। (তাফসিরে তাবারি :
১/৩৬০)
অনেক খ্রিস্টানের ভ্রান্ত বিশ্বাসও তদ্রূপ।
বর্তমানকালের বাইবেলের বর্ণনামতে, সুলাইমান
(আ.) তাঁর স্ত্রীদের প্ররোচনায় পিতৃধর্ম ত্যাগ করে
মূর্তি পূজায় জড়িয়ে পড়েন। (রাজাবলি, ১১ নম্বর
অধ্যায়) নাউজু বিল্লাহ! এমনকি বাইবেলে তাঁকে
একজন যৌনাচারে লিপ্ত দুনিয়ালোভী বাদশাহরূপে
দেখানো হয়েছে। (দেখুন : সলোমনের পরমগীত
অধ্যায় ৮-এর ১-৩, ১০; সপ্তম অধ্যায়ের ৮, ৯, ১১-১৩;
চতুর্থ অধ্যায়ের ৫, ৯, ১০, ১২; প্রথম অধ্যায়ের ২-৪, ১৩,
১৬; দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬ এবং পঞ্চম অধ্যায়ের ২-৪,
৮)
আমরা মনে করি, একজন মর্যাদাবান নবীর ব্যাপারে
চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের কথা
কিছুতেই স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত হতে পারে না।
এগুলো বানানো ও কল্পিত কথা।
আল কোরআনে সুলাইমান (আ.)
কোরআনে কারিম ও হাদিসের বর্ণনায় তাঁকে
আল্লাহ প্রদত্ত একজন মর্যাদাবান নবী ও
ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাঁর সম্পর্কে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাস
খণ্ডন করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা ওই সবের
অনুসরণ করে থাকে, যা সুলাইমানের রাজত্বকালে
শয়তানরা আবৃত্তি করত, অথচ সুলাইমান কুফরি
করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরি করেছিল। তারা
মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত এবং বাবেল শহরে
হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার ওপর যা নাজিল
হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। আসলে তারা উভয়ে এ
কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে আমরা
এসেছি পরীক্ষাস্বরূপ। কাজেই তুমি কাফির হয়ো
না। কিন্তু তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত,
যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। অথচ
আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা তারা কারো
ক্ষতি করতে পারত না। লোকেরা তাদের কাছে
শিখত ওই সব বস্তু, যা তাদের ক্ষতি করে এবং
তাদের কোনো উপকার করে না...। ’ (সুরা : বাকারা,
আয়াত : ১০২)
হযরত সুলাইমান (আ.) সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারনা
byMd Mokbular Rahman
-
0