প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা
লেখক : ইকবাল হুসাইন মাসুম
সম্পাদনা : নুমান বিন আবুল বাশার
দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা
দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টি বিপরীতধর্মী শব্দ কিন্তু
মানব জীবনে দু’টিই জড়িয়ে আছে অন্ধকার
এবং আলোর মত। এইতো প্রাচুর্যের ছন্দময়
উপস্থিতি আবার কিছু সময় পরই দারিদ্রের সেই
অনাকাংখিত ভয়াল থাবা। কারো কারো জন্য
প্রাসাদোপম আলীশান বাড়ী। বিলাম বহুল
গাড়ীসহ সুখের সব রকম সরঞ্জামাদির বিপুল
সমাহার। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে হাড়
ভাঙ্গা খাটুনি পরিশ্রমের পরও দু’মুঠু ভাতের
নিশ্চয়তা নেই, নেই মাথা গোজার একটু ঠাঁই। দু’টিু
অবস্থাই প্রজ্ঞাময় মহামহীমের রহতমতায় সৃষ্টি।
সম্ভবত ইবাদতের দু’টি অনুপত ধারা সৃষ্টিই এর মুল
রহস্য। একটি সবর অন্যটি শুকর। দু’টিই আল্লাহ
তাআালার বিশেষ ইবাদাত। দু’টির মাধ্যমেই রয়েছে
মহামহীম রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য
অর্জনের সুনিপুন ব্যবস্থা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ﻋﺠﺒﺎ ﻷﻣﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ، ﺇﻥ ﺃﻣﺮﻩ ﻛﻠﻪ ﺧﻴﺮﻟﻪ، ﻭﻟﻴﺲ ﺫﺍﻙ ﻷﺣﺪ
ﺇﻻ ﻟﻠﻤﺆﻣﻦ، ﺇﻥ ﺃﺻﺎﺑﺘﻪ ﺳﺮﺍﺀ ﺷﻜﺮ، ﻓﻜﺎﻥ ﺧﻴﺮﺍﻟﻪ، ﻭﺇﻥ
ﺃﺻﺎﺑﺘﻪ ﺿﺮﺍﺀ ﺻﺒﺮ، ﻓﻜﺎﻥ ﺧﻴﺮﺍ ﻟﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ : ৭৪২৫
মুমিনের বিষয়টি অতিশয় বিস্ময়কর। তার
প্রত্যেকটি বিষয়ই তার জন্যে কল্যাণকর আর
এটি একমাত্র মু’মিনের জন্যেই। যদি তার সুদিন
আসে, সমৃদ্ধি অর্জিত হয়, তা হলে কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করে। এটি তার জন্যে কল্যাণকর। আবার
যদি দুর্দিন আসে দারিদ্রে আক্রান্ত হয়, ধৈর্য
ধারণ করে এটিও তার জন্যে কল্যাণকর। (মুসলিম:
৭৪২৫)
হাদীস থেকে সু-স্পষ্ট রূপে বুঝা যায় যে,
দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টিই আল্লাহর নৈকট্য
অর্জনের দু’টি সহজ পন্থা। দরিদ্র ধৈর্য ধারণ
করবে আর ধনবান শুকরিয়া আদায় করবে। মানব
জীবনে দু’টি সুযোগই কারো কারো
ক্ষেত্রে আসতে পারে, আবার কেউ এর
যে কোন একটি সুযোগ প্রাপ্ত হতে পারে।
তবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হল যখন যার যে
সুযোগ আসে তখন তাকে কাজে লাগিয়ে
সুযোগের সৎ ব্যবহার করা। আমরা আলোচনা
করব, যিনি শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ পেলেন,
তিনি কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন।
প্রথমত ঃ যে বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন তা
হচ্ছে, এই যে ধন-সম্পদ এটি তার নিজের
কৃতিত্বের ফসল নয় বরং তা মহামহীমের দয়া ও
ইচ্ছার ফসল। তাই প্রথমতঃ সর্বান্তকরণে তাঁর প্রতি
কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই
তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তাঁর বিধি নিষেধের
প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন চলবে না। নিজের ইচ্ছার
উপর তাঁর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাঁর
দাবীর কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করে
দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗُﻠْﻬِﻜُﻢْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟُﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩُﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺫِﻛْﺮِ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَﻟِﻚَ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮُﻭﻥَ ﴿ ৯﴾ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻮﻥ
মুমিনগণ তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-
সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর
স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ
কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত
(মুনাফিকুন-৯)
আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সম্পদ
মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে দেবে এমন
আশংকা আছে তাই মু’মিনদেরকে সদা সর্তক
থাকতে হবে। এ সম্পদ যেন কোনক্রমেই
তাকে তার সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না
পারে। সম্পদের মোহ যেন আল্লাহর
দাবীকে গৌণ করতে না পারে। আর সেটি
তখনই সম্ভব যখন সম্পদপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ
সম্পদকে আল্লাহর অনুগ্রহ বলে জ্ঞান
করবে।
দ্বিতীয় ঃ সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর যে
নির্দেশ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার
প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখে খেয়াল
রাখতে হবে প্রাচুর্যের কারণে গতি যেন
পাল্টে না যায়। সম্পদ যেন হারাম ও অনৈতিক
কাজে ব্যয় না হয়। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহর যে
নির্দেশ তা যেন ঠিক ঠিক পালন হয়। আল্লাহ
তাআলা বলেন,
ﻭَﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﺣَﻖٌّ ﻟِﻠﺴَّﺎﺋِﻞِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺤْﺮُﻭﻡِ ﴿ ১৯﴾ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ
তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী
ও বঞ্চিতদের। (যারিয়াত- ১৯)
উক্ত আয়াত সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করছে যে
অসহায়, বঞ্চিত ও প্রার্থীদের জন্যে সম্পদ
ব্যয় করা আল্লাহর দাবী ও নির্দেশ।
তৃতীয়ত ঃ এ পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশ
পালনের ক্ষেত্রে যে সব বিষয় সহায়ক হবে
তা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করা। আর তা হচ্ছে
সম্পদ ব্যয়ের যে ফযীলত কুরআন ও সুন্নায়
বর্ণিত হয়েছে তা স্মরণে আনা এবং ব্যয় না
করে কুক্ষিগত করার মন্দ পরিণতির কথা বিবেচনা
করা। আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ
ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﴿ ১﴾ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺗِﻬِﻢْ ﺧَﺎﺷِﻌُﻮﻥَ ﴿
২﴾ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ ﴿ ৩﴾ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻟِﻠﺰَّﻛَﺎﺓِ
ﻓَﺎﻋِﻠُﻮﻥَ﴿ ৪﴾ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ
মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের
নামাযে বিনয়- নম্র, যারা অনর্থক কথা-বার্তায়
নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে। (মু’মিনুন ঃ
১-৪)
আল্লাহ বলেছেন,
ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻮَﺍﺭِﺛُﻮﻥَ ﴿ ১০﴾ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮِﺛُﻮﻥَ ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱَ ﻫُﻢْ
ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ﴿ ১১﴾ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ
এরাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকার লাভ
করবে। শীতল ছায়াময় উদ্যানের। তাতে তারা
চিরকাল থাকবে। (মু’মিনুন ঃ ১০-১১)
তা হলে আল্লাহর নির্দেশ মত সম্পদ ব্যয়
করলে পরকালে চিরন্তন জীবনের জন্যে
চিরসুখময় জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত। অল্প সম্পদ ব্যয়
করলে পরপারে তা অনেক বড় করে পাওয়া
যাবে। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি
ওয়াসালাম ইরাশদ করেন-
ﺇﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﺇﺫﺍ ﺗﺼﺪﻕ ﻣﻦ ﻃﻴﺐ، ﺗﻘﺒﻠﻬﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﻪ، ﻭﺃﺧﺬ ﻫﺎ
ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ، ﻭ ﺭﺑﺎﻫﺎ ﻛﻤﺎ ﻳﺮﺑﻲ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻣﻬﺮﻩ ﺃﻭ ﻓﺼﻴﻠﻪ، ﻭﺇﻥ
ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﺘﺼﺪﻕ ﺑﺎﻟﻠﻘﻤﺔ، ﻓﺘﺮﺑﻮ ﻓﻲ ﻳﺪ ﺍﻟﻠﻪ، ﺃﻭ ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﻛﻒ
ﺍﻟﻠﻪ، ﺣﺘﻰ ﺗﻜﻮﻥ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺠﺒﻞ، ﻓﺘﺼﺪﻗﻮﺍ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ :
৭৩১৪
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সদাকা (দান) কবুল করেন
এবং তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করে থাকেন। এরপর
তাকে লালন পালন করতে থাকেন যেমনি ভাবে
তোমাদের কেউ স্বীয় জন্তু শাবক লালন
পালন করে থাকে। এমনকি এক লোকমা খাবার
(তার লালন পালনের কারণে) পাহাড়ের মত বিশাল
হয়ে দেখা দিবে। অতএব তোমরা সাদকা কর।
(আহমদ: ৭৩১৪ )
পক্ষান্তরে ব্যয় না করে জমা করে রাখরে
সে সম্পদ পরকালের জন্যে বিপদ হয়ে
দাঁড়াবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐَ ﻭَﺍﻟْﻔِﻀَّﺔَ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻧَﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻓَﺒَﺸِّﺮْﻫُﻢْ ﺑِﻌَﺬَﺍﺏٍ ﺃَﻟِﻴﻢٍ ﴿ ৩৪﴾ ﻳَﻮْﻡَ ﻳُﺤْﻤَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻓِﻲ ﻧَﺎﺭِ
ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﻓَﺘُﻜْﻮَﻯ ﺑِﻬَﺎ ﺟِﺒَﺎﻫُﻬُﻢْ ﻭَﺟُﻨُﻮﺑُﻬُﻢْ ﻭَﻇُﻬُﻮﺭُﻫُﻢْ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ
ﻛَﻨَﺰْﺗُﻢْ ﻟِﺄَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﻓَﺬُﻭﻗُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗَﻜْﻨِﺰُﻭﻥَ ﴿ ৩৫﴾ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ
‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা
আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের
কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, যে
দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে
এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও
পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (এবং বলা হবে)
এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা
করে রেখেছিলে। সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ
গ্রহণ কর জমা করে রাখার। (তাওবা ঃ ৩৫)
সম্পদ ব্যয় না করে জমা করে রাখার ভয়াবহতা কত
মারাত্মক? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ
ﻣﻦ ﺁﺗﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﻻ ﻓﻠﻢ ﻳﺆﺩ ﺯﻛﺎﺗﻪ ﻣﺜﻞ ﻟﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﺷﺠﺎﻋﺎ ﺃﻗﺮﻉ، ﻟﻪ ﺯﺑﻴﺒﺘﺎﻥ ﻳﻄﻮﻗﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﺛﻢ ﻳﺄﺧﺬ
ﺑﻠﻬﺰﻣﺘﻴﻪ ( ﻳﻌﻨﻲ ﺷﺪﻗﻴﻪ ) ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﺃﻧﺎ ﻣﺎﻟﻚ، ﺃﻧﺎ ﻛﻨﺰﻙ . ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ২৪৬
আল্লাহ যাকে সম্পদ দিলেন, কিন্তু সে তার
যাকাত আদায় করল না তার সম্পদ কিয়ামতের দিন
বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হবে যে, সাপের
দু’পার্শ্বে তিলক থাকবে। ঐ সাপ তার
দু’চোয়ালে ধরে দংশন করবে আর বলবে
আমিই তোমার সম্পদ আমিই তোমার সঞ্চিত ধন-
ভান্ডার। (বুখারী, মুসলিম: ২৪৬)
চতুর্থত ঃ ধনবান ব্যক্তি তার অপর মুসলিম ভাইয়ের
প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের সুযোগ সন্ধান করবে
এতে নিজেরই লাভ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন,
ﺍﻟﺮﺍﺣﻤﻮﻥ ﻳﺮﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ، ﺍﺭﺣﻤﻮﺍ ﻣﻦ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻳﺮﺣﻤﻜﻢ
ﻣﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ : ১৯৪৭
যারা দয়াশীল, দয়াময় প্রভু তাদের প্রতি দয়া
করেন। যারা যমীনে বিচরণ করে তাদের প্রতি
দয়া কর। যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের
প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিজি: ১৯৪৭)
সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমেঃ-
একজন সাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি বর্তমান বাস্তব
অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে যে দৃশ্য
দেখতে পাবে।
* দারিদ্রের কারণে প্রায়ই দেখা যায়
জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে অনাহারে
অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
* বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করছে
একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ।
* যে শিশু শিক্ষানিকেতনের আলোকময়
পরিবেশে থেকে নিজকে আলোকিত মানুষ
রূপে গড়ে তোলার কথা ছিল দারিদ্রের কারণে
আজ তাকে দেখা যাচ্ছে হাটে, রাস্তায়,
ষ্টেশনে,, শ্রমবিক্রি করতে ব্যস্ত এদের
কেউ কেউ ভিক্ষা করছে আবার অনেককে
নর্দমা, ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেয়া খাবার ও
তুলে খেতে দেখা যাচ্ছে।
* দারিদ্রের কারণে অশিক্ষিত রয়ে যাচ্ছে
সমাজের একটি বিশাল অংশ যার কারণে বেকারত্ব
বাড়ছে আলোর গতিতে। দারিদ্র ও
বেকারত্বের অমানিশায় পতিত হয়ে হতাশা
কাটানোর জন্যে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে।
ক্রমান্বয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি খুনসহ মারাত্মক
অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ সম্ভামনাময়
নবপ্রজন্ম। এসব অপরাধ বাড়ার কারণে জনমনে
সৃষ্টি হচ্ছে আতংক, কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে
নাগরিক জীবন যাপন, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ
যাবতীয় উন্নয়ন। অগ্রগতি হচ্ছে বাধা গ্রস্থ,
পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক ভাবে
নিন্দিত হচ্ছে দেশ ও জনগন।
* এ দারিদ্রের কারণে পরম মর্যাদাবান মাতৃ
সমাজকে সতীত্ব বিক্রি করে বেচে থাকার
সংগ্রাম করতে হচ্ছে। পতিতা বৃত্তির মত চরম
ঘৃনিত কাজ পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে একটি
উল্লেখযোগ্য অংশ। ফলে মনুষ্যত্ব
বোধের চরম অধপতনের সাথে সাথে
বেড়ে চলেছে সিফিলিস, গনরিয়া এইডসসহ
মারাত্মক মারাত্মক মরণ ব্যধি।
* সুদ ভিত্তিক দেশীও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন
সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে সর্বস্বাস্থ হতে দেখা
যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ জনগণকে। সুদের কিস্তি
পরিশোধ করতে না পেরে ভিটে মাটি বিক্রি
করে বাস্তুহারার কাতারে শামিল হতেও দেখা
যাচ্ছে অনেককে।
* আবার কেউ কেউ ঈমানের বিনিময়ে দায়মুক্তি
নিচ্ছে বলেও পত্রিকাতে খবর প্রকাশ
পেয়েছে।
* এ সুযোগে দারিদ্রে বিমোচনের নাম
করে অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম দেশে
বিভিন্ন নামে সংস্থা খুলে সাহায্যের নামে
অপসংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে মহা সমারোহে।
ফলে সাংস্কৃতির নামে চর্চা হচ্ছে নগ্নতা,
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার। মুক্ত সাংস্কৃতির নামে
যৌনতা নির্ভর চলচিত্র নির্মাণ, ফ্যাশন শো, কনসার্ট
ইত্যাদির মাধ্যমে কেড়ে নিচ্ছে শত বছর
থেকে চর্চিত সভ্য সাংস্কৃতির ধারা, শালীনতা,
ভদ্রতা, ভব্যতা, ও লজ্জাসহ পর্দা প্রথা প্রায়
বিলুপ্তির পথে।
দারিদ্র বিমোচ শ্লোগানকে পুঁজি করে ঋণ
দেয়ার নাম করে সুদী ব্যবসা বর্তমানে
জমজমাট। কিস্তি পরিশোধ করতে করতে
দরিদ্র থেকে দরিদ্রতার পর্যায়ক্রমে সর্ব শান্ত
হচ্ছে গরীব জনগন আর এ সুযোগে
প্রাচুর্যের পাহাড় গড়ছে সুবিধা লোভী
ফোরাম। দারিদ্রকে পুঁজি করে শিক্ষা
সম্প্রসারণের নাম করে তাদের ধর্মীয় মতে
দীক্ষিত করছে হাজার হাজার মুসলিম শিশুকে। তাই
যে শিশু হওয়ার কথা ছিল মানবতা বোধে উদ্বুদ্ধ
আল্লাহ প্রেমী ঈমান দ্বীপ্ত খাঁটি মুসলিম, সে
শিশু হচ্ছে আধুনিকতার নামে উগ্র ও মুক্তমনার
নামে দিকভ্রান্ত নাস্তিক। ফলে ধর্মীয় দিক
থেকে আমাদের দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার
একটি বিশাল সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে
আধিপত্যবাদী একটি বিরাট শক্তি। এ ধারা অব্যাহত
থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমরা
মুসলমানরা নিজ দেশে পরবাসী। এক কথায়
দারিদ্রের কারণে আজ আমাদের ঈমান ও
স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন। আমাদের
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে একটু দৃষ্টি
দেয়া যাক। দারিদ্রের কারণে দাতা গোষ্ঠীর
বিভিন্ন অন্যায় ও অন্যায্য দাবী মেনে
সরকারকে সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ করতে হয়
ফলে সরকার জনগনের চাহিদা মোতাবেক
স্বাধীন ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না।
একদিকে দাতাদের চাপ অন্য দিকে জনগনের
দাবী, দো-টানায় পড়ে সরকারকে বিব্রত হতে
দেখা যায় প্রায়ই। দাতাদের দাবী মেটাতে
গিয়ে জনগনের বিপক্ষে পদক্ষেপ নেয়
ফলে জন অসন্তোষ বাড়ে, সরকার জনরায়ের
বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, জনগন প্রতিরোধের
সংকল্প করে ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে
পড়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। আইন শৃঙ্খলার
অবনতি ঘটে। ফলাফল দাড়ায় অরাজক পরিস্থিতির
সৃষ্টি আন্তর্জঅতিক সমীক্ষায় ব্যর্থ রাষ্ট্র।
সম্প্রতিঃ বাংলাদেশ সরকারকে জনমত উপেক্ষা
করে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার প্রেক্ষিতে
ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের
বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।
ফলে মিত্রদের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কে ফাটল ধরে ফলে সরকারের
জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।
স সুযোগে বিভিন্ন নাশকতা মূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি
পায়। সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হয়। আবারা
ক্ষমতা যেতে হলে বিদেশী সম্প্রদায়ের
সমর্থনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ফলে
ইসলাম বিরোধী ভূমিকা আরো জোরদার
ভাবে নিতে হবে মর্মে দাসখত দেয়ার যুক্তি ও
দাবী মজবুত হয়। বাধ্য হয়েই সরকারকে এমন
দাসখত দিতে হবে। ফলে ইসলামী
মূল্যবোধের বিকাশের রাস্তা আরো সংকুচিত
হবে। বরং নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা প্রদীপ
সম্পূর্ণ রূপে নিভিয়ে দেয়ার আয়োজন প্রায়
সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। এমন উদাহরণ বিশ্বের
সবগুলো মুসলিম দরিদ্র রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য। আর এসবেরই মূলে রয়েছে
দারিদ্রের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মোট
কথা দারিদ্রের কারণে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে
আমাদের স্বাধীন মূল্যবোধ। দারিদ্রের
কারণেই আজ আমাদের দেশীয় ও ধর্মীয়
পরিচয় হুমকির সম্মুখীন। তাই মানবিক ও ঈমানী
মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যকরী
পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করলে অচিরেই এর
চরম মূল্য দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে এ
অবক্ষয় রোধে একটি বিরাট উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা রাখতে পারেন ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ। তাদের
সাহায্য সহানুভূতি পেয়ে অন্নহীন অন্ন পাবে।
* শিক্ষার সু-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে দরিদ্র জনগন
শিক্ষার সুযোগ পাবে, ফলে খুন, রাহাজানী,
ধর্যন, চুরি, ডাকাতিসহ সকল নেতিবাচক কর্মকান্ড
পরিহার করে সুস্থ্য স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার
রাস্তা খুজে পাবে যুব সমাজ। দেশ পাবে
শক্তিশালী নীতিবান আলোকিত জনশক্তি। সে
নিজে পাবে ঈমানদীপ্ত সম্ভাবনাময় সুন্দর
জীবন।
* ভিক্ষা বৃত্তি, পতিতাবৃত্তি এবং ঘৃণ্য পেশা থেকে
ফিরে এসে সুস্থ ধারার জীবন গড়ার দিশা পাবে
আক্রান্ত নারী ও দরিদ্র জনশক্তি।
* সুদ ভিত্তিক সাহায্য প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা গুটাতে বাধ্য
হবে। ফলে তাদের থেকে নিস্কৃতি পাবে
অসহায় জনগন এবং সুদের মত মারাত্মক পাপ
থেকে বের হওয়ার রাস্তা পাবে নিরুপায় মুসলিম
সমাজ।
* অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হবে ফলে চারিত্রিক
অবক্ষয় থেকে মুুক্তি পাবে যুব সমাজ
ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী জন সাধারণ।
* আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের আধিপত্য
বিস্তারের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাবে। ফলে
স্বাধীনতা হুমকি মুক্ত থাকবে।
* সরকার স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনার নিশ্চয়তা
পাবে জনগনের মতের প্রতিফলন ঘটবে।
স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে। অন্যায়
অসন্তোষ বিলুপ্ত হবে। সুখ সমৃদ্ধির পথ
প্রশস্ত হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। নন্দিত
হবে বিশ্বময়। স্বাধীন সমৃদ্ধশালী জাতী
হিসাবে আমরা পরিচিতি পাবো বিশ্ব ব্যাপী।
* ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমানী চেতনা নিয়ে
মুসলমান মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপ করতে
পারবে। এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্বিঘেœ কাজ
চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। ফলে জাতি দিন
দিন উপহার পেতে থাকবে ন্যায় নীতি, সৎ,
চরিত্রবান, সৃজনশীল উন্নত, আলোকিত
প্রেমময় হৃদয়বান কাংখিত প্রজন্ম। ধরাতে চর্চা
হবে মহামহীমের চাহিদা মোতাবেক শান্তিময়
বিধান। সর্বোপরি সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ বনী আদম
কুফুরী থেকে মুক্ত থাকার পরিবেশ খুজে
পাবে। কারণ দারিদ্র মানুষকে কুফুরীর
নিকটবর্তী করে দেয়। এমনি ভাবে চেষ্টা
করলে সহানুভূতি প্রকাশের হাজারটি দ্বার খুলে
যাবে।
* এক্ষেত্রে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম
নিয়মিত যাকাত আদায় করে সুষ্ঠভাবে বন্টন
করলে উপরোক্ত সবগুলো ক্ষেত্রে
অবদান রাখা যায়। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ
প্রকৃতিতগত। সম্পদ উপার্জনে মানুষ আগ্রহ
বোধ করে কিন্তু ব্যয়ের ব্যাপারে অনুরূপ
সাচ্ছন্দ অনুভব করে না। আর সাহায্য সহানুভূতি ও
দান খয়রাত রীতিমত মনের বিরুদ্ধে একটি
সংগ্রাম। এক্ষেত্রে যাকাত আদায়চ্ছু ব্যক্তি যদি
যাকাত আদায়ে শরীয়তের বিধান স্মরণে
আনে তাহলে তার জন্য উক্ত কাজে সফল হওয়া
সহজ হবে। অর্থাৎ
* যাকাত আদায় ইসলামের মুলভিত্তি এটি ব্যতীত
ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না।
* যাকাত মূলত তার সম্পদ নয় বরং দারিদ্রক্লিষ্ট
বঞ্চিত ও প্রার্থীদের সম্পদ যা তার সম্পদের
সাথে যুক্ত হয়ে আছে। আল্লাহ বলেন-
ﻭَﻓِﻲ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﺣَﻖٌّ ﻟِﻠﺴَّﺎﺋِﻞِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺤْﺮُﻭﻡِ ﴿ ১৯﴾ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ
তাদের সম্পদের রয়েছে প্রার্থী ও
বঞ্চিতদের অধিকার। সূরা ঃ যারিয়াত-১৯
তাহলে যাকাত আদায় না করা প্রকারন্তরে আল্লাহর
বিধান লংঘন করার পাশাপাশি অন্যের অধিকার নষ্ট করা।
* যাকাত আদায়ে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কলুষমুক্ত হয়।
* যাকাত আদায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত
নিশ্চিত হয়।
* যাকাত আদায়ে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। পরকালে
জাহান্নামে যেতে হবে। সম্পদ বিষধর সাপে
রূপান্তরিত করে গালদেশে ঝুলিয়ে দেয়া
হবে। উক্ত সর্পরূপী সম্পদ তিরস্কার সহ দংশন
করে চলবে।
* যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে
অংশ গ্রহণ করে একটি অধঃপতিত জাতিকে সনির্ভর
ও স্বাধীন জাতিতে উন্নত করা যায়।
* দারিদ্রক্লিষ্ট হয়ে ঈমান হারাতে বসা চরম
বিপর্যস্ত একটি গোষ্ঠীকে যাকাত আদায়ের
মাধ্যমে এমন বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়।
বরং উপরোল্লেখিত সকল বিপদ মোকাবেলায়
যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। যাকাতের মাধ্যমেই
উক্ত সকল ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেয়া যায়।
আজ যদি যাকাত আদায়ের সুষ্ঠু নীতিমালা থাকত।
বন্টনের ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবস্থা থাকত তাহলে
অবস্থা হয়ত এত করুন হত না। যদি দেশের ধনবান
ব্যক্তিবর্গ হৃদয় দিয়ে সহানভূতির সাথে একটু চিন্তা
করেন তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় দেশী
বিদেশী সুবিধালোভী সুদ ব্যবসায়ী
আধিপত্যবাদীরা লেজ গুটাতে বাধ্য হবে।
আমাদের এ আশা কল্পনা নির্ভর নয় বরং যুক্তির
নিরিখে একটু হিসাব করি।
ধরে নেই বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি
মূল্যবান যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিকের সংখ্যা
এক হাজার, তাহলে তাদের সম্পদের যাকাতের
পরিমাণ হবে প্রতি বছর ১২৫০০ কোটি টাকা।
(১২৫০০০০০০০০) উক্ত টাকা যদি জনপ্রতি ৫০ হাজার
করে বন্টন করা হয় তাহলে ২৫ লক্ষ
লোকের মধ্যে বন্টন করা যাবে। প্রতি বছর
যদি ২৫ লক্ষ লোক দারিদ্র মুক্তির সুযোগ পায়
তাহলে গোটা বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করে
সনির্ভর করতে কয়দিন লাগবে? এতো শুধুমাত্র
৫০০ জনের হিসাব। প্রকৃত হিসাব আরো অনেক
বেশী।
সম্মানিত পাঠক! যাকাত আদায় ও বন্টনের সুষ্ঠু ও
নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে মুক্তি পেত দেশ।
সরকার জনগন, শংকামুক্ত থাকত ঈমান, আক্বীদা,
আমল। বৈষম্যদূর হয়ে সম্প্রীতি ও ভালবাসা থাকত
সকলের মাঝে বিরাজমান। গোটা সমাজই হতে
যেত জান্নাতের একটি বাগিচা।
তাহলে আমরা বলতে পারি যাকাত আদায় যেমনি
করে দয়াময় পালনকর্তার শুকরিয়া আদায়ের
অন্যতম মাধ্যম, বিনিময়ে সুখময় জান্নাত প্রাপ্তির
নিশ্চয়তা। অনুরূপ ভাবে দারিদ্র বিমোচনের
মাধ্যমে ভাইয়ের পতি ভাইয়ের মতত্ববোধ
প্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্থা। পরিশেষে
যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে ইসলামের
দৃষ্টি ভঙ্গি কি? এ মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ
করে আলোচনার ইতি টানব।
ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর “আওসাত ও সাগীর”
গ্রন্থে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেন।
ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺮﺽ ﻋﻠﻰ ﺃﻏﻨﻴﺎﺀ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻓﻲ ﺃﻣﻮﺍﻟﻬﻢ، ﺑﻘﺪﺭ
ﺍﻟﺬﻱ ﻳﺴﻊ ﻓﻘﺮﺍﺀﻫﻢ، ﻭﻟﻦ ﻳﺠﻬﺪ ﺍﻟﻔﻘﺮﺍﺀ، ﺇﺫﺍ ﺟﺎﻋﻮﺍ ﺃﻭ
ﻋﺮﻭﺍ، ﺇﻻ ﺑﻤﺎ ﻳﺼﻨﻊ ﺃﻏﻨﻴﺎﺅﻫﻢ، ﺃﻻ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﺎﺳﺒﻬﻢ ﺣﺴﺎﺑﺎ
ﺷﺪﻳﺪﺍ، ﻭﻳﻌﺬﺑﻬﻢ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﺃﻟﻴﻤﺎ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻷﻭﺳﻂ
(৩৬০৩) ﻭﺍﻟﺼﻐﻴﺮ (৪৪৪ ) ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ
(৩/৬২)
আল্লাহ তাআলা ধনী মুসলমানদের সম্পদে এ
পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের
দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট।
দরিদ্র মুসলিম বৃন্দ অভুক্ত ও বিবস্ত্র থাকার যে
কষ্ট করে যাচ্ছে। এটি তাদের ধনীদের
সৃষ্ট। শুনে রাখ আল্লাহ তাআলা তাদের হিসাব কঠিন
করে নিবেন এবং যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি
দিবেন।
হাদীস দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে সুষ্ঠভাবে
যাকাত আদায় হলে মুসলমানদের মাঝে দারিদ্র
থাকবে না। দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা
কত অপরিসীম এ হাদীস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব
আদায় করার তাওফীক দিন। আমীন।