জামায়াতের সঙ্গে সালাত অাদায়ের অাবশ্যকতা

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে- অনুবাদ : সিরাজুল ইসলাম আলী আকবর সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান জামাতে সালাত আদায়ের আবশ্যকতা ﻋَﻦْ ﺃﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ – ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻪُ – ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺇﻥَّ ﺃﺛْﻘَﻞَ ﺻَﻠَﺎﺓٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﺻَﻠَﺎﺓُ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀِ ﻭَ ﺻَﻠَﺎﺓُ ﺍﻟﻔَﺠْﺮِ، ﻭَﻟَﻮْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ ﻣَﺎ ﻓِﻴْﻬِﻤَﺎ ﻟَﺄﺗَﻮْﻫُﻤَﺎ ﻭَﻟَﻮْ ﺣَﺒْﻮًﺍ، ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻫَﻤَﻤْﺖُ ﺃﻥْ ﺁﻣُﺮَ ﺑِﺎﻟﺼَّﻼﺓِ ﻓَﺘُﻘَﺎﻡَ، ﺛُﻢ ﺁﻣُﺮَﺭَﺟُﻼً ﻓَﻴُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎ ﺱِ، ﺛُﻢَّ ﺃﻧْﻄَﻠِﻖُ ﻣَﻌِﻲَ ﺑِﺮِﺟَﺎﻝٍ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﺰَﻡٌ ﻣِﻦْ ﺣَﻄَﺐٍ ﺇﻟَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﻟَﺎ ﻳَﺸْﻬَﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻓَﺄﺣْﺮِﻕَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺑُﻴُﻮْﺗَﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺭِ . ‏(ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ ) আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন—মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে এশা ও ফজরের সালাত। তাতে কি কল্যাণ ও সওয়াব নিহিত আছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে অংশগ্রহণ করত। কখনো কখনো আমার ইচ্ছা জাগে যে আমি সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করি, এবং তা কায়েম করা হয়, অত:পর এক ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করি, সে মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করবে ; আমি একদল লোক নিয়ে বের হব, যাদের সাথে থাকবে লাকড়ির বোঝা। আমরা খুঁজে বের করব এমন লোকদের, যারা উপস্থিত হয়নি সালাতে। আমরা তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব। [1] শব্দ প্রসঙ্গে আলোচনা : ﺃﺛْﻘَﻞَ ﺻَﻠَﺎﺓٍ : ﺃﺛﻘﻞ : শব্দটি নির্গত ﺍﻟﺜﻘﻞ হতে। আধিক্যজ্ঞাপক বিশেষ্য। অর্থ : ভারী, কষ্টকর। ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ : অভিধানে নিফাকের মৌলিক অর্থ গোপন করা, ঢাকা। এ নামে নামকরণ করার কারণ এই যে, প্রকাশ্যে ঈমান প্রচার করলেও তার অন্তরের আড়ালে থাকে গোপন কুফর ও অবিশ্বাস। এখানে মুনাফিক দ্বারা উদ্দেশ্য—যারা প্রকাশ্যে ইসলামকে আপন ধর্ম হিসেবে প্রচার করে এবং মনে লুকিয়ে রাখে কুফর ও অবিশ্বাস। ﻭَﻟَﻮْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ ﻣَﺎ ﻓِﻴْﻬِﻤَﺎ : অর্থাৎ, এ দুই সালাতের ফজিলত ও প্রাচুর্য বিষয়ে যদি তারা অবগত হত…। ﻟَﺄﺗَﻮْﻫُﻤَﺎ : অর্থাৎ, দু সালাতে উপস্থিত হত। তারা মসজিদে এসে জামাতের সাথে সালাতে অংশগ্রহণ করত। ﻭَﻟَﻮْ ﺣَﺒْﻮًﺍ : অর্থাৎ, হাঁটার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে তারা বুকে হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হত। আল্লামা নববী রহ. বলেন, যদি তারা এ উভয় সালাতের ফজিলত ও পরোকালিক পুরস্কারের ব্যাপারে অবগত হত, এবং কোন কারণে হামাগুড়ি ব্যতীত তাতে উপস্থিত হতে অপারগ হত, তবে তারা অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে তাতে উপস্থিত হত এবং জামাত ত্যাগ বরদাশত করত না। ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻫَﻤَﻤْﺖُ : ﺍﻟﻬﻢ মানে প্রত্যয়, দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ। কেউ কেউ বলেন, এর মানে দৃঢ় ইচ্ছার তুলনায় কিছুটা নিম্নস্তরের ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ করা। আহকাম ও ফায়দা : ফরজ সালাত মসজিদে আদায় আবশ্যক হওয়ার মৌলিক প্রমাণ হাদিসটি। কারণ রাসূল সা. উক্ত হাদিসে শরিয়ত সম্মত ওজর ব্যতীত জামাতে সালাত ত্যাগকারীর জন্য আগুনের শাস্তির উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য যে সকল নির্দেশ ও কোরআন-হাদিসের দলিল বিষয়টিকে আরো জোড়াল ও দৃঢ় করে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হল— ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - ﻗﺎﻝ ﺃﺗﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺟﻞ ﺃﻋﻤﻰ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﺇﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﻗﺎﺋﺪ ﻳﻘﻮﺩﻧﻲ ﺇﻟﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ، ﻓﺴﺄﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺮﺧﺺ ﻟﻪ ﻓﻴﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ، ﻓﺮﺧﺺ ﻟﻪ، ﻓﻠﻤﺎ ﻭﻟﻲ ﺩﻋﺎﻩ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻫﻞ ﺗﺴﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺟﺐ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ : 1044 আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সা.-এর নিকট এক অন্ধ ব্যক্তি উপস্থিত হল। বলল, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাকে মসজিদে উপস্থিত করার মত কেউ নেই—এই বলে সে রাসূলের নিকট গৃহে সালাত আদায়ের অনুমতি প্রার্থনা করল। রাসূল তাকে অনুমতি দিলেন। সে বের হয়ে পড়লে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও ? সে উত্তর দিল, হ্যা। তিনি বললেন, তবে তুমি আজানের ডাকে সাড়া প্রদান করো।[2] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন— ﻟﻘﺪ ﺭﺃﻳﺘﻨﺎ ﻭﻣﺎ ﻳﺘﺨﻠﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﻻ ﻣﻨﺎﻓﻖ ﻗﺪ ﻋﻠﻢ ﻧﻔﺎﻗﻪ ﺃﻭ ﻣﺮﻳﺾ، ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﺮﻳﺾ ﻟﻴﻤﺸﻲ ﺑﻴﻦ ﺭﺟﻠﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﻳﺄﺗﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 1045 আমি আমাদের দেখেছি এমন মুনাফিক ব্যতীত কেউ জামাতে সালাত আদায় বর্জন করত না, যার নেফাক সম্পর্কে সকলে অবগত হয়ে গিয়েছে কিংবা যে অসুস্থ—এমনকি প্রবল অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিও দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে সালাতে উপস্থিত হত।[3] জামাতে সালাত আদায়ের রয়েছে প্রভূত ফজিলত ও অসংখ্য সওয়াব। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সা. বলেছেন — ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺗﻀﻌﻒ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻭﻓﻲ ﺳﻮﻗﻪ ﺧﻤﺴﺎ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺿﻌﻔﺎ، ﻭﺫﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﺇﺫﺍ ﺗﻮﺿﺄ ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﺇﻟﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻻ ﻳﺨﺮﺟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﻢ ﻳﺨﻂ ﺧﻄﻮﺓ ﺇﻻ ﺭﻓﻌﺖ ﻟﻪ ﺑﻪ ﺩﺭﺟﺔ، ﻭﺣﻂ ﻋﻨﻪ ﺑﻪ ﺧﻄﻴﺌﺔ، ﻓﺈﺫﺍ ﺻﻠﻲ ﻟﻢ ﺗﺰﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﺼﻠﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺎ ﺩﺍﻡ ﻓﻲ ﻣﺼﻼﻩ، ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺻﻞ ﻋﻠﻴﻪ، ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺭﺣﻤﻪ، ﻭﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﻣﺎ ﺍﻧﺘﻈﺮ ﺍﻟﺼﻼﺓ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ : 611 ব্যক্তির জামাতে সালাত আদায় তার গৃহে একাকী কিংবা বাজারে সালাত আদায়ের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব বয়ে আনে। কারণ সে যখন উত্তমরূপে ওজু করে কেবল মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন প্রতি পদক্ষেপে একটি করে তার দরজা (মর্যাদা) বুলন্দ হয়, এবং ক্ষালণ হয় একটি করে পাপ। সালাত শেষে যতক্ষণ সে সালাতের স্থানে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন—আল্লাহ, তাকে দয়া করুন ; আল্লাহ তাকে রহমতে ভূষিত করুন। তোমাদের সালাতের অপেক্ষাও সালাতের অংশ হিসেবে ধর্তব্য।[4] মসজিদে এশা ও ফজরের সালাত আদায়ের রয়েছে প্রভূত সওয়াব ও ফজিলত। রাসূল সা. বিষয়টির গুরুত্ব ও পরোকালে এর মহান পুরস্কারের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এর ফজিলত বিষয়ে অবগতি লাভ করবে, শিশুর মত হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সে তাতে অংশগ্রহণে সচেষ্ট হবে। এশা ও ফজরের সালাত জামাতভুক্তিতে আদায়ের ফজিলত ও গুরুত্ব প্রমাণ করে ভিন্ন একটি হাদিস, যা উসমান বিন আফফান রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন— ﻣﻦ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ ﻓﻲ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﻗﺎﻡ ﻧﺼﻒ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﻭﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻓﻲ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻛﻠﻪ . যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধ রাত্রি এবাদতে কাটিয়ে দিল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন পুরো রাত্রিই সালাতে যাপন করল।[5] ফজরের সালাত আদায়কারীর পুরস্কার বর্ণনা প্রসঙ্গে জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন— ﻣﻦ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻓﻬﻮ ﻓﻲ ﺫﻣﺔ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻼ ﻳﻄﻠﺒﻨﻜﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺫﻣﺘﻪ ﺑﺸﻲﺀ، ﻓﺈﻧﻪ ﻣﻦ ﻳﻄﻠﺒﻪ ﻣﻦ ﺫﻣﺘﻪ ﺑﺸﺊ ﻳﺪﺭﻛﻪ، ﺛﻢ ﻳﻜﺒﻪ ﻋﻠﻲ ﻭﺟﻬﻪ ﻓﻲ ﻧﺎﺭ ﺟﻬﻨﻢ . যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহ যেন নিজের জিম্মা বিষয়ে তোমাদের থেকে কিছু তলব না করেন। কারণ, এ ব্যাপারে তিনি যার কাছ থেকে তলব করেন, তাকে তিনি পাকড়াও করেন, অত:পর জাহান্নামের আগুনের তাকে উপুর করে নিক্ষেপ করেন।[6] ফজরের সালাত জামাতের সাথে আদায়ের ক্ষেত্রে যা ব্যক্তির জন্য সহায়ক : সালাত আদায়ের জন্য ভোরে নিদ্রা হতে জাগরণের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়। এ ব্যাপারে সহায়তার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন। রাতের প্রথম ভাগে দ্রুত নিদ্রায় গমন, যাতে শরীর উৎফুল্ল ও সতেজ থাকে। ঘুমানো ও ঘুম হতে জাগরণকালীন দোয়া নিয়মিত আদায় করা। সহায়ক অন্যান্য উপায় অবলম্বন| যেমন : এলার্ম ইত্যাদির সহায়তা গ্রহণ, যাতে সঠিক সময়ে নিদ্রা হতে জাগতে পারে। শরয়ি বৈধ কোন কারণ ব্যতীত যে ব্যক্তি জামাতে এশা ও ফজরের সালাত আদায় বর্জন করল, সে নিজেকে ঠেলে দিল এক ভয়াবহ বিপদ ও পাপের মুখে। দলভুক্ত হল মুনাফিকদের। এ দু সালাত ত্যাগকারীদের ব্যাপারে রাসূল সা. ছিলেন অত্যন্ত ক্রোধান্বিত| তিনি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এদের ঘরবাড়িসহ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার। নিফাক খুবই মন্দ স্বভাব ও ভয়াবহ চারিত্রিক বিপদের কারণ। এমন কোন ব্যক্তি বা দল নেই, এ মন্দতায় আক্রান্ত হওয়ার পরও আল্লাহ যাদের ধ্বংস করেননি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন— ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪَّﺭْﻙِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻔَﻞِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করবে।’[7] মুনাফিকদের দোষগুলো কী কী— নিম্নে সে ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা হবে— অন্তরে কুফরকে স্থান দিলেও প্রকাশ্যে নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় প্রদান করা। এবাদত পালন খুব ভারী বোঝা মনে হওয়া— বিশেষত: এশা ও ফজর সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ, এ সময় শয়তান ক্রমাগত মন্ত্রণা দেয় তা বর্জন করার জন্য। তা ছাড়া এশা হচ্ছে প্রশান্তি ও বিশ্রামের সময়, ফজরের সময়ে নিদ্রার স্বাদ অতুলনীয়। মুনাফিকরা তাদের যে কোন ধর্মীয় কর্ম পালন করে প্রশংসা কুড়ানো ও লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে। তারা যাকে উত্তম মনে করে তাকে আরো উত্তম হিসেবে লোকসমাজে প্রকাশের জন্য লালায়িত হয়। লোক-সমাবেশের স্থলে তারা হাজির হয়, সকলের সামনে নিজেকে প্রদর্শনীয় করে উত্থাপন করে। যখন কেউ দেখে না, তিরোহিত হয় বিন্দুমাত্র প্রশংসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা—তখন তারা অন্তর্হিত হয়। পার্থিব উপার্জনের জন্য তারা প্রবলভাবে হয়লালায়িত—যদিও তা হয় এবাদত পালনের মাধ্যমে। এক রেওয়ায়েতে এসেছে— ﻭﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻟﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺃﺣﺪﻫﻢ ﺃﻧﻪ ﻳﺠﺪ ﻋﺮﻗﺎ ﺳﻤﻴﻨﺎ ﺃﻭ ﻣﺮﻣﺎﺗﻴﻦ ﺣﺴﻨﺘﻴﻦ ﻟﺸﻬﺪ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ ! তাদের কেউ যদি জানত যে, মসজিদে এলে গোশত ভর্তি উটের হাড় পাওয়া যাবে, কিংবা পাওয়া যাবে বকরির ক্ষুর-দ্বয়ের মধ্যবর্তী উৎকৃষ্ট মাংস, তবে সে অবশ্যই এশার সালাতে উপস্থিত হত। [8] কল্যাণ সাধনের তুলনায় অকল্যাণ রোধ প্রথমে আবশ্যক—শরিয়তের এ এক মৌলিক নীতি। রাসূল সা. তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে দেননি কেবল এ কারণেই যে, এর ফলে অসহায় নারী-শিশুরা আক্রান্ত হবে, যারা এ হুকুমের আওতাভুক্ত নয়। ইসলাম—নি:সন্দেহে, মুসলমানদের জন্য প্রণীত একটি পূর্ণাঙ্গ মৌলিক পদ্ধতি, জীবনের প্রতিটি অনুসঙ্গে মুসলমানগণ যাকে আঁকড়ে ও লালন করে জীবনযাপন করবে। এ পদ্ধতির সূচনাতেই যার অবস্থান, তা হচ্ছে এবাদত—যার মাধ্যমে বান্দা মাওলার নৈকট্যের পরম স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হয়। এ পদ্ধতির অন্যতম অংশ হচ্ছে দিবস ও রজনির সালাতগুলো সঠিক সময়ে, নিয়মবদ্ধরূপে জামাতের সাথে আদায় করা। শরয়ি কোন কারণ ব্যতীত তা বর্জনের দু:সাহস না করা। সমাপ্ত [১] বোখারি৬৫৭, মুসলিম-৬৫১ [২] মুসলিম-১০৪৪ [৩] মুসলিম-১০৪৫ [৪] মুসলিম-৬১১ [৫] মুসলিম- ৬৫৬ [৬] মুসলিম- ২৬১, তিরমিজি-৩৯৪৬ [৭] সূরা নিসা : আয়াত ১৪৫ [৮] বোখারি

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post