ধৈর্য ও নামাজে সব সমস্যার সমাধান



মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ উপরি-উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবতসহ যাবতীয় প্রয়োজন ও সব সংকটের নিশ্চিত প্রতিকার দুটি বিষয়ে নিহিত। একটি ‘সবর’ বা ধৈর্য, অপরটি ‘সালাত’ বা নামাজ। এখানে সাহায্য প্রার্থনা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার ফলে এটাই বোঝায় যে, মানবজাতির যে কোনো সংকট বা সমস্যার সমাধানে ধৈর্য ও নামাজ নিশ্চিত প্রতিকারক। মানুষ যে কোনো প্রয়োজনে এ দুটির দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে।

সবরের অর্থ ও শাখা: সবরের অর্থ হচ্ছে, সংযম অবলম্বন করা এবং নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় সবরের তিনটি শাখা রয়েছে। ১. নফসকে হারাম ও নাজায়েজ বিষয়গুলো থেকে বিরত রাখা। ২. ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা। ৩. সব ধরনের বিপদ-আপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা।

অর্থাৎ, যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয়, সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেওয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা।

যাবতীয় সমস্যার সমাধানে নামাজ: মানুষের যাবতীয় সমস্যা, বিপদ-আপদ ও সংকট দূর করার এবং যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে আরেকটি পন্থা হচ্ছে নামাজ। প্রকৃতপক্ষে সব ধরনের ইবাদতই সবরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর পরও নামাজকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো, সব ইবাদতের মধ্যে পরিপূর্ণ বিনয়ীপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে একমাত্র নামাজ। আর তা বারবার পড়া হয়।

এছাড়াও নামাজ এমন একটি ইবাদত, যাতে সবর তথা ধৈর্যের পরিপূর্ণ নমুনা বিদ্যমান। কেননা, নামাজের মধ্যে একাধারে যেমন নফস তথা রিপুকে আনুগত্যে বাধ্য রাখা হয়, তেমনি যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ, নিষিদ্ধ চিন্তা এমনকি অনেক হালাল ও মোবাহ বিষয় থেকেও সরিয়ে রাখা হয়। সে মতে নিজের নফসের ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করে সব ধরনের গোনাহ ও অশোভনীয় আচার-ব্যবহার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে সবরের যে অনুশীলন করতে হয়, তা একমাত্র নামাজের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে সম্ভব।

নামাজ কখন যাবতীয় প্রয়োজন দূর করে: আমরা যখন নামাজকে যথাযথ আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে আদায় করব, তখন আমাদের বিপদমুক্তি অবধারিত। তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব ধরনের প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারেও সুনিশ্চিত ফল লাভ হবে।

রাসুল (সা.) এর অভ্যাস: আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো কঠিন সমস্যায় সম্মুখীন হতেন, তখনই নামাজ আরম্ভ করে দিতেন। আর আল্লাহ তায়ালা সে নামাজের বরকতেই তাঁর যাবতীয় বিপদ-আপদ দূর করে দিতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) কে যখনই কোনো বিষয় চিন্তিত করে তুলত, তখনই তিনি নামাজ পড়া শুরু করে দিতেন।

আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পন্থা: উপরি-উক্ত আলোচনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম, নামাজ ও সবরের মাধ্যমে যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সব ধরনের সংকটের প্রতিকার হওয়ার একমাত্র কারণ হলো, এ দুই পন্থায়ই আল্লাহর প্রকৃত সান্নিধ্য লাভ হয়।
আগের আয়াতে ‘আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন’ দ্বারা একথা বোঝানো হয়েছে যে, তিনি নামাজি এবং সবরকারীদের সঙ্গে সাহায্যের মাধ্যমে আছেন। অর্থাৎ, যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাহায্য আসে, তার মোকাবিলায় দুনিয়ার কোনো শক্তি কিংবা কোনো সংকটই যে টিকে থাকতে পারবে না, তা বলার প্রয়োজন রাখে না।

বান্দাকে যখন আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করেন, তখন তার গতি অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায়। তাই তার অগ্রগমন প্রতিহত করার মতো শক্তি কারও থাকে না। বলাবাহুল্য, সব ধরনের উদ্দেশ্য হাসিল করা এবং সংকট উত্তরণের নিশ্চিত উপায় একমাত্র আল্লাহর সাহায্য লাভ করা। (অনলাইন থেকে সংগৃহীত)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post