সফল মুমিনের নিজস্ব পরিচয় আছে। স্বকীয়তা আছে। আছে গুণাবলি। আল্লাহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে সফল মুমিনের বিবরণ তুলে ধরেছেন। কোথাও সফল মুমিনের পরিচয় দিয়েছেন এক কথায়। ‘যে তার আত্মাকে পবিত্র করেছে সে সফলকাম হয়েছে’ (সূরা আ’লা : ১৪)। কোথাও আবার দীর্ঘ বর্ণনায় নানা গুণাবলি উল্লেখ করেছেন।
মহান রাব্বুল আলামীনের একক সত্ত্বা, তাঁর প্রেরিত রাসূল, ফেরেশতা, কিতাব, পরকাল এবং তাকদিরের ওপর আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপনকারীকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুমিন বলা হয়।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘যারা মুমিন, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরে প্রশান্তি এসে থাকে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণ আসলে সেই জিনিস যার দ্বারা দিল পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে থাকে।’ (রা’দ ২৮)
‘আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেপে উঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, তারা আল্লাহর ওপর আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়ে থাকে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে ব্যয় করে। বস্তুত এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য আল্লাহর নিকট খুবই উচ্চমর্যাদা রয়েছে, আরও রয়েছে অপরাধের ক্ষমা ও অতি উত্তম রিযিক।’ (আনফাল ২-৪)
‘যখন তাদের মাঝে ফায়সালার জন্যে আল্লাহ ও রাসূলের (বিধানের) প্রতি ডাকা হয়, তখন তারা বলে- আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর এরূপ লোকেরাই প্রকৃত সফলকাম।’ (নূর ৫১)
‘তারা পরস্পরের বন্ধু সাহায্যকারী, একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়। অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক যাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবশ্যই নাযিল হবে।’ (তওবা ৭১)
‘তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর গোলামীর জীবন যাপনকারী, তাঁর প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য যমিনে পরিভ্রমণকারী, তার সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত, ন্যায়ের নির্দেশদানকারী, অন্যায়ের বাধাদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী। হে নবী, আপনি এসব মুমিনদের সুসংবাদ দিন।’ (তওবা ১১২)
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদীস :
হযরত নুমান ইবনে বশীর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মুমিনদেরকে পারস্পরিক দয়া ভালবাসা এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। দেহের কোন অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তাহলে অপর অঙ্গগুলোও জ্বর এবং নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে।’ (বুখারী-মুসলিম)
হযরত নুমান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন সব মুমিন একই ব্যক্তি সত্তার মত। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি তার মাথা ব্যথা হয় তবে তার গোটা শরীরই বিচলিত হয়ে পড়ে। (মিশকাত)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, যে কারো সঙ্গে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না। (মুসনাদে আহমদ)
(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন গ্রন্থ)