আল্লাহ্ আমাদের কেন পরীক্ষা করেন ?



জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমরা নানা অসুস্থতা, দুঃখকষ্ট, দুর্যোগ ও বিপদ আপদের সম্মুখীন হই। এ সবকিছুই মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ পরীক্ষা। কিন্তু কেন আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন? এ প্রশ্নেরই উত্তর নিয়ে এর মৌলিক চারটি কারণ এ নিবন্ধে সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

গুনাহ মাফ  পুরস্কার প্রদান

ইবরাহীম (আ.) কে আল্লাহ প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কুরবানী করার আদেশ দিয়ে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। এ ঘটনা বর্ণনা করে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

“অতপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম তাকে বলল, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখো। সে বললো, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম,  তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা সাফফাত, আয়াত: ১০২-১০৫)

হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো,
“মানুষের মধ্যে দুনিয়াতে কাকে বেশি পরীক্ষা করা হয়?” রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, “নবী-রাসূলদের, তারপর ন্যায়পরায়ন বান্দাদের, তারপর তাদের অনুরূপ ব্যক্তিদের, তারপর তাদের অনুরূপ ব্যক্তিদের। একজন ব্যক্তিকে তার ন্যায়পরায়নতা ও বিশ্বাসের মাত্রা অনুপাতে পরীক্ষা করা হয়। তার বিশ্বাসের চর্চা যদি উত্তম হয়, তবে তার পরীক্ষার মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তার বিশ্বাসের চর্চা যদি দুর্বল হয়, তবে তার পরীক্ষার মাত্রা হ্রাস করা হয়। একজন বান্দাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপমুক্ত অবস্থায় পৃথিবীতে বিচরণ করে।” (আহমদ, তিরিমিযি)

সুতরাং, পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ যেমন আমাদের গুনাহকে মাফ করিয়ে নেন, ঠিক তেমনি জীবনের পরবর্তী ধাপে আমাদের উত্তম প্রতিদান ও পুরষ্কার দান করেন।

পরিশুদ্ধ করা

পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ উত্তমকে মন্দ থেকে পৃথক করে নেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তোমরা যে অবস্থায় আছো সে অবস্থায় আল্লাহ্ কোনোক্রমেই বিশ্বাসীদের ফেলে রাখবেন না, যে পর্যন্ত না তিনি ভালোদের থেকে মন্দদের পৃথক করেন। আর আল্লাহ্ অদৃশ্য সন্বন্ধে তোমাদের কাছে গোচরীভূত করবেন না, তবে আল্লাহ্ তাঁর রসূলদের মধ্যে থেকে যাঁকে ইচ্ছা করেন, নির্বাচিত করেন। অতএব আল্লাহ্‌তে ও তাঁর রসূলগণে ঈমান আনো। আর যদি তোমরা বিশ্বাস করো ও ভয়শ্রদ্ধা করো তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরস্কার।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৭৯)

মানবতার স্বরূপ প্রকাশ

“মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করবো অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয়তো কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।” (সূরা ইনসান, আয়াত: ২-৩)

মূলত মানুষের প্রকৃত রূপ তার কাছে স্পষ্ট করার জন্য আল্লাহ তার বিভিন্ন পরীক্ষা গ্রহন করেন।

ধৈর্যশীলদের বাছাই করা

বিপদরূপী পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ মূলত তার ধৈর্য্যশীল বান্দাদের বেছে নেন। পরীক্ষার মাধ্যমেই তিনি তাদের পৃথিবীতে উচ্চ দায়িত্ব ও মর্যাদার জন্য তৈরি করে নেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)

এছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পরীক্ষা নেন। আল্লাহ আমাদেরকে তার নেওয়া সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মত যোগ্য হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post