ইসলাম হলো শান্তি ও সুস্পষ্ট ধর্ম। এতে কোন অস্পষ্টতা নেই। প্রতিটি বিষয়েই ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছে। এমনকি নাম রাখার ক্ষেত্রে রয়েছে উত্তম বিধান। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) নবজাতকের সুন্দর, অর্থবহ, শ্রুতিমধুর নাম রাখার জন্য কি-না গুরুত্বারোপ করেছেন। মুসলমানিত্ব ফুটে ওঠে এমন নামকরণে যত্নবান হতে কতই না জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে সর্বজনীন ইসলামে। উপরন্তু মাতা-পিতা, অভিভাবকদের প্রতি অতীব তাৎপর্যময় গুরু দায়িত্ব হলো সন্তানের ভালো অর্থপূর্ণ ভারি মিষ্টি নাম রাখা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মাতা-পিতার হক কি, তাতো আমরা জানলাম। কিন্তু মাতা-পিতার ওপর সন্তানের হক কি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘মাতা-পিতা সন্তানের সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দিবে। ( আবু দাউদ: ৪৮৭০ )।
সর্বাপেক্ষা সুন্দর, পছন্দনীয় নাম হলো, আম্বিয়া, আউলিয়া বুজুর্গানে দীনের নামে সদ্যজাত শিশুর নামকরণ করা। তাহলে ঐ পুণ্যাত্মা মহামানবদের আলোকজ্বল আদর্শমালা শিশু জীবনকেও ছুঁয়ে যাবে। আলোয় উদ্ভাসিত হবে শিশুজীবন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নামকরণ করো, ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করো।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৮৪৩)।
কিছু কিছু নাম মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে খুবই ঘৃণিত। সেগুলো পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয়নবী (সা.)। বস্তুত এ নিষেধাজ্ঞা বাজে ও খারাপ অর্থবোধক নামের ক্ষেত্রে ছিলো। হারব (যুদ্ধ), মুররা (তিক্ত), আছরাম (কর্তনকারী) ইত্যাদি বাজে নামের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আসিয়া (বিদ্রোহী) নাম পরিবর্তন করে বললেন, ‘তোমার নাম জামিলা (সুন্দরী) রাখো।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৮২৭)।
সম্প্রতি বাংলা, সংস্কৃতি, হিন্দি, ইংরেজি শব্দের সঙ্গে আরবি, ফারসি শব্দযোগে মুক্তচিন্তার দাবীদার প্রগতিবাদীরা বিভিন্ন নাম যেমন: লেলিন আহমদ, ঝিনুক মাহমুদ, উর্মী রহমান, জুয়েল হাসান, এলস মুহাম্মদ ইত্যাদি নাম রেখে গর্ববোধ করে থাকেন। ভেবে দেখার বিষয়, আদৌ এসব নাম ইসলামি আদর্শানুকূল কি না? এভাবে একে একে অমুসলিম কৃষ্টি-কালচার বরণ করতে থাকলে একদিন হয়তো মুসলিম আদর্শ-স্বকীয়তাই বিলীন হয়ে যাবে বিশ্বচরাচর থেকে। আজকাল সংক্ষেপ নামের প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে।
অনেক সন্তানের আসল নামটি রাখে চমৎকার অর্থব্যঞ্জক। আর ডাকনামটি রাখে অর্থহীন ও সংক্ষিপ্ত। আসল নাম রেজাউল করিম কিন্তু ডাকনাম সেন্টু। কারো নাম অসুন্দর খারাপ অর্থবোধক হলে, সেটা বদলিয়ে সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখা মুস্তাহাব। এটা ফিকাহ শাস্তবিদদের অভিমত। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়শা (রা.) এর মতে সুন্নাত।
আর কুফরি ধরণের নাম হলে পরিবর্তন করা ফরজ। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) কারো মন্দ নাম দেখলে বদলে দিতেন। এমনিভাবে ভালো নামকে ব্যঙ্গ-বিকৃতি করে ডাকা কিংবা আংশিক নামে ডাকা মারাত্মক গুনাহ।
এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। তোমরা তাকে সে নামেই ডাকো। আর যারা নাম বিকৃত করে, তাদেরকে বর্জন করো। তাদের কৃতকর্মের ফল অতিশীঘ্র তাদের দেয়া হবে। (সুরা আরাফ: ১৮০)। তাই নাম বিকৃতির গুনাহ থেকে নিজেরা বাঁচতে হবে এবং বাঁচাতে হবে সমাজ ও জাতিকে।
Tags:
ধর্ম ও জীবন