কীসে আছে সুখ, প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি?

এই মহাবিশ্বের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা কতগুলো নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছেন- যেগুলোকে আমরা সুন্নাতুল্লাহ বলি। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, মহাবিশ্বের সমগ্র বস্তুজগতকে এসব নিয়ম মেনে চলতেই হয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
ﺛﻢ ﺍﺳﺘﻮﻯ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻭﻫﻲ ﺩﺧﺎﻥ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻬﺎ ﻭﻟﻸﺭﺽ ﺍﺋﺘﻴﺎ ﻃﻮﻋﺎ ﺍﻭ ﻛﺮﻫﺎ، ﻗﺎﻟﺘﺎ ﺃﺗﻴﻨﺎ ﻃﺎﺋﻌﻴﻦ .
অর্থঃ “অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধুম্র বিশেষ। এরপর তিনি ধুম্রকে এবং যমীনকে বললেন- তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।” (হামীম সিজদাহ, আয়াত: ১১)
এছাড়া প্রাণীজগতের অধিকাংশেরও আল্লাহর বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে বেছে নেবার তেমন কোন ক্ষেত্র নেই। অথচ, সবচেয়ে স্বতঃসিদ্ধ যে ব্যপারটা, সেটাই তিনি আপাত দৃষ্টিতে বেঁধে দেন নি; কেবল তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করলেই জীবনে শান্তি, সমন্বয়, প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারবে মানুষ। তাকে দেখে বোঝা যাবে যে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমের সূরা ত্বীনে
ﻟﻘﺪ ﺧﻠﻘﻨﺎ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻓﻲ ﺃﺣﺴﻦ ﺗﻘﻮﻳﻢ
অর্থঃ “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম আকৃতিতে” বলে তার কথাই বলেছেন। তথাপি ব্যপারটা তিনি বেঁধে না দিয়ে মানুষকে বেছে নেবার স্বাধীনতা দিয়েছেন। অন্যথায় নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে না পারলে অতৃপ্তির গোলক ধাঁধায় জীবনকে আকণ্ঠ পান করার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে নিজেকে ক্ষয় করতে করতে মানুষ এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে, সুধা ভেবে গরল গলধঃকরণ করতে করতে নিজেই এক সময় বিষাক্ত নীল হয়ে যাবে। সে যেদিকে তাকাবে, চাইনিজ উপকথার ড্রাগনের মত তার নিঃশ্বাসের উত্তাপে, বিষবাষ্পে সব জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বীনে
ﺛﻢ ﺭﺩﺩﻧﺎﻩ ﺃﺳﻔﻞ ﺳﺎﻓﻠﻴﻦ
অর্থঃ “অতঃপর আমি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছি নিচতমদেরও নিচে।” বলে এধরণের মানুষের কথাই যে বুঝিয়েছেন, একটু ভেবে দেখলেই যে কেউ তা বুঝতে পারবেন ৷
একটি উদাহরণ দেই- যেহেতু গণিত ও পদার্থ বিদ্যার নিয়মাবলী সহ যাবতীয় কার্যকারণের সমূহ ব্যপার সুন্নাতুল্লাহ-এর আওতায় পড়ে, তাই বলছি- সুন্নাতুল্লাহের অংশ বিশেষ, পদার্থ বিদ্যার একটা বিষয় হচ্ছে চুম্বক এবং চুম্বক ক্ষেত্র। এই চুম্বক ক্ষেত্রের নিয়মাবলী ঘেঁটে দেখলে আমরা যেমন দেখি যে, একটি চুম্বক শলাকা যতক্ষণ চুম্বক রেখা বা চৌম্বক ক্ষেত্রের ঐ অক্ষ বরাবর নিজেকে সংযুক্ত বা স্থাপন করতে না পারে, ততক্ষণ সে স্থিতি অবস্থায় বা সাম্য অবস্থায় পৌঁছায় না। বরং তার অস্থায়ী বিভিন্ন অবস্থান বা অক্ষে সে অস্থিতিশীলভাবে কাঁপতে থাকে।
ঠিক তেমনি মানুষ যতক্ষণ আল্লাহর অক্ষ বরাবর বা আল্লাহর আদেশ নিষেধ, নিয়ম নীতির অক্ষ বরাবর নিজেকে স্থাপন না করবে, ততক্ষণ তার জীবনে সাম্য বা স্থিতিশীল অবস্থা আসতে পারে না। সে অতৃপ্ত বাসনার অস্থির চিত্ত এক অভিশপ্ত আত্মার প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা যেনো ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা করি এবং আল্লাহর চাওয়ার কাছেই নিজেদের পরিপূর্ণ রুপে সমর্পণ করি। তবেই আমাদের জীবনে আসবে শান্তি, সমন্বয়, প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি- আমরা লাভ করব ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post