প্রস্রাবের পর পোশাকের পবিত্রতা নিয়ে সন্দেহ হলে যা করবেন

সাধারণত পবিত্রতা সচেতন সকল মুসলিম পুরুষই প্রস্রাব শেষ করে লজাস্থান স্থান ধৌত করে নেয়। কিন্তু অনেকেরই এমন হয়- যখন সে নড়াচড়া করে ও দাঁড়ায়, তখন মনে হতে থাকে আরও এক-দুই ফোটা প্রস্রাব যেন বের হয়েছে। অফিস/কর্মস্থলে থাকাবস্থায় এই ভেবে অনেকেই কয়েক ওয়াক্ত ফরয নামাযও ছেড়ে দেয়। ঈমানী দুর্বলতার দরুণ যার কাযাও পরবর্তীতে আর আদায় করা হয় না। এভাবে সে বিশাল গুনাহে নিমজ্জিত হয়। আর কেউ এ সমস্যার কারণে দীর্ঘ সময় প্রস্রাবের স্থানে বসে থাকে আর বলে : কি করব ?
আসুন জেনে নেই এখন সে কি তার এ অনুভূতি ও ধারণা ত্যাগ করে অযূ পূর্ণ করে নেবে এবং নামায আদায় করবে, না পরিপূর্ণ প্রস্রাব বন্ধ হওয়া বা ধারণা দূর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?
এ বিষয়টি ওয়াসওয়াসা ও সন্দেহ থেকে সৃষ্টি হয়। আর এগুলো তৈরি হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে কারো কারো ব্যাপারে প্রকৃত পক্ষেই এমন ঘটে। আর প্রকৃত হলে, সে তাড়াহুড়ো করবে না, বরং প্রস্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, ভালো হয় টিস্যু নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে অতঃপর পানি দ্বারা প্রস্রাবের পেশাবের স্থান ধৌত করবে। এরপর যদি কোন কিছুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে লজ্জাস্থানের আশপাশে লুঙ্গি বা পায়জামায় পানি ছিটিয়ে দেবে। অতঃপর অযূ শেষ করার পর যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সে দিকে সে ভ্রুক্ষেপ করবে না। ওয়াসওয়াসা ত্যাগ করার জন্য এ পদ্ধতি তার জন্য সহায়ক হবে।
আর যদি শুধুই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা হয়, যার কোন বাস্তবতা নেই, তবে তার প্রতি মোটেই ভ্রক্ষেপ করবে না। মুমিনদের জন্য এ সমস্ত জিনিসে দৃষ্টি না দেয়া উচিত। কারণ, এগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান চায় মানব জাতির সালাত-ইবাদত নষ্ট করতে। অতএব, তার ষড়যন্ত্র ও ওয়াসওয়াসা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। আল্লাহকে আকড়ে থাকা এবং তার উপর ভরসা করা। আর এসব যা কিছু সৃষ্টি হয়, তা শয়তানের পক্ষ থেকে মনে করা, যাতে অযূ এবং তার পরবর্তী সালাতে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ সৃষ্টি না হয়। আর নিশ্চিতভাবে কিছু বের হলে, পুনরায় পবিত্র হবে ও অযূ করবে।
আর ধারণার কোনই গ্রহণ যোগ্যতা নেই। যদিও ৯৯% ভাগ ধারণা হয়, তার প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। এগুলো শয়তানের প্ররোচনা। যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস না হবে, সে তার অযূ, সালাত ও অন্যান্য কাজ করে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল : “হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির ধারণা হয় যে, তার সালাতে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন : ﻟَﺎ ﻳَﻨْﺼَﺮِﻑْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺴْﻤَﻊَ ﺻَﻮْﺗًﺎ ﺃَﻭْ ﻳَﺠِﺪَ ﺭِﻳﺤًﺎ “সালাত ত্যাগ করবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে, অথবা গন্ধ পায়।” (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাযাহ)
এখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়াজ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত, কেবল ধারণার উপর নির্ভর করে সালাত ত্যাগ করবে না। তদ্রূপ মানুষ যখন অযূ থেকে ফারেগ হয়, অতঃপর কোন কিছু অনুভূত হলে, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, এবং তার প্রতি ফিরে যাবে না। বরং, সে তার পবিত্রতা, সালাত ও আমল করে যাবে, যতক্ষণ না ১০০% ভাগ ধারণা হয় যে, কিছু বের হয়েছে। কারণ, কিছু বের না হওয়াই নিয়ম। আরো স্মরণ রাখবে যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, তার প্ররোচনা ও তার সৃষ্ট সন্দেহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমিনকে ক্লান্ত করা ও তাকে কল্যাণকর এসব কাজ থেকে বিরত রাখা। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাচ্ছি।
(শাইখ আবদুল্লাহ ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ-এর ফতোয়া অবলম্বনে লিখিত)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post