যে কারণে নামায ও নামাযী শ্রেষ্ঠ

প্রখ্যাত সাহাবি হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, জমিনের যে অংশের ওপর নামায পড়া হয়, সেই অংশটা তার পাশের অন্যান্য অংশের ওপর গর্ব করে এবং এতটাই আনন্দিত হয় যে, তার আনন্দের রেশ সপ্ত জমিন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। (কানযুল উম্মাল)
ইমাম শারানী রহ. বলেন, যখন কোন মুসলমান নামায পড়ে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন।
তখন সে নামাযের নূর হতে একজন ফেরেশতা সৃষ্টি হয়, যার দায়িত্ব হবে, সে কিয়ামত পর্যন্ত নামায পড়তে থাকে, যাতে তার নামাযের সওয়াব ঐ নামাযী ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে থাকে। (লাতায়িফুল মান্নান)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যোহরের চার রাকাত সুন্নাতের পর আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। তার অর্থ হল, এই নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হয় এবং তার ওপর রহমতের নূর বর্ষিত হয়। (মিশকাত শরীফ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানবের শরীরে ৩৬০টি জোড়া থাকে। প্রতিটি জোড়ার জন্য সদকা করা মানবজাতির জন্য বাঞ্চনীয়। সাহাবায়ে কেরামগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর নবী! এত বেশি পরিমাণ সদকা করার সামর্থ আমাদের নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মসজিদের ভিতর যদি থুথু ইত্যাদি ময়লা-আবর্জনা থাকে, সেগুলো পরিষ্কার করা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাও সদকাহ। যদি তোমরা এমন কিছু না পাও যা ৩৬০ জোড়ার সদকার সমপরিমাণ হয়, তাহলে ইশরাক এর দুই রাকাত নামাযই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (মিশকাত শরীফ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায থেকে ফারেগ হয়ে নামাযের জায়গাতেই বসে রইল এবং ইশরাকের নামায পড়েই সেখান থেকে উঠল। মাঝখানের এই সময়টিতে পার্থিব কোন কথাবার্তাও বলেনি, শুধু আল্লাহর যিকিরেই মশগুল ছিল অথবা কুরআনের অনুবাদ ইত্যাদি শুনে শুনেই কাটিয়ে দিল, সে ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদিও তার পাপের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনা অপেক্ষা বেশি হয়। (আবু দাউদ শরিফ) 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা নামায পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়। যখনই সে মসজিদে যায়, ঐ সময় আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেন। (মিশকাত শরিফ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন সাত প্রকারের মানুষকে তাঁর বিশেষ ছায়াতলে স্থান দিবেন- ছায়াতলে স্থান দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কেয়ামতের কষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং (বিশেষ রহমত) আরশের নিচে স্থান দিবেন। (ক) ন্যায়-পরায়ণ বিচারক নেতা এবং বাদশা। (খ) ঐ যুবক যে তার যৌবন কাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে।
(গ) এমন দুজন ব্যক্তি যাদের পরস্পর ভালবাসা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহর মহব্বতেই তারা পরস্পর মিলিত হয় এবং পৃথক হয়। (ঘ) ঐ নামাযী ব্যক্তি যে নামায পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়েছে কিন্তু অন্তরটা পরবর্তী নামায পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে মসজিদেই থেকে যায় এবং সময় মতো নামায আদায় করে। (ঙ) ঐ যিকিরকারী ব্যক্তি যে নির্জনে কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে স্মরণ করে। (চ) ঐ যুবক যে কোন সুন্দরী রমণীর পক্ষ থেকে ব্যভিচারের প্রস্তাব পায় কিন্তু সে আল্লাহর ভয়ে বিরত থাকে। (ছ) যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করল যে, তার ডান হাত কী দিল এ খবর বাম হাত জানে না। অর্থাৎ ঐ দানশীল এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে, তা বাম হাতও জানে না। (মিশকাত শরিফ) 
হযরত দানিয়াল আ. তাঁর যামানার উম্মতে মুহাম্মদীর নামাযের প্রশংসা করে বলতেন, তারা এমন নামায পড়বে, যদি এমন নামায নূহ আ. এর উম্মত পড়ত, তাহলে মহা প্লাবনে ডুবে যেত না, আর যদি হুদ আ. এর জাতি পড়ত, তাহলে ঝড়ের কারণে ধ্বংস হয়ে যেত না। হযরত দানিয়াল আ. এর কথার অর্থ হলো- যদিও এ উল্লিখিত ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাতি ঈমান আনেনি কিন্তু তারপরেও যদি তারা এমন নামায পড়ত, তাহলে পৃথিবীতে তারা ধ্বংস হতো না। কেননা, উম্মতে মুহাম্মদীয় নামাযের বৈশিষ্ট্য হল, কোন কাফেরও যদি এই নামাযের পাবন্দী করে, তাহলে সে এ ধরণের আযাবের সম্মুখীন হবে না। তবে হ্যাঁ, পরকালে কাফেরদের জন্য এই নামায কোন উপকার বয়ে আনবেনা। (রূহুল বয়ান)
আল্লহ তায়ালা সকলকে কুরান হাদিসের আলোকে নামায পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post