শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ অপরিহার্য।
কারণ মায়ের বুকের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য
প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ও উপাদানযুক্ত আল্লাহ
প্রদত্ত এমন তৈরি খাবার, যা শিশু সহজেই
হজম করতে পারে এবং সহজেই শিশুর দেহ
বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাইতো আল্লাহ তাআলা
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জন্মের পর
তাঁর মাকে নির্দেশ দেন, ‘আমি মুসার মায়ের
অন্তরে ইঙ্গিতে নির্দেশ দিলাম, তাকে দুধ
পান করাও।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭)
জন্মের পর শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার হলো
মায়ের বুকের দুধ। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক
নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকে দুধ সৃষ্টি
করে রাখেন। যা হালকা মিষ্টি ও উষ্ণ; যা
নবজাতক শিশুর নাজুক অবস্থার জন্য বিশেষ
উপযোগী।
নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান
করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে প্রিয়নবি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবর্তী মহিলা
থেকে রমজানের রোজা রাখার
বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (আবু
দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মিশকাত)
বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিশুকে
মাতৃদুগ্ধ দানের ব্যাপারে যে গুরুত্বের কথা
বলে, সে গুরুত্বের কথা ইসলাম আজ থেকে
দেড় হাজার বছর পূর্বেই ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআনেই নবজাতক শিশুকে
মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে
সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা বিধান ঘোষণা
করেছেন।
আল্লাহ তাআলা সুরা লোকমানের ১৪নং
আয়াতে বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার
পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ
দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্ট স্বীকার করে
গর্ভে ধারণ করে। অতঃপর তার দুধ ছাড়ানো
হয় দুই বছরে।’
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ
পান করাবে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৩৩)
কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বুঝা
যায়-
শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়সীমা হল,
জন্মের পর থেকে চন্দ্র মাসের হিসাব
অনুযায়ী পূর্ণ দুই বছর। শিশুর প্রয়োজনে এ সময়
আরো ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে।
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, ‘তাকে
গর্ভধারণ করতে ও দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ
মাস। (সুরা আহকাফ : আয়াত ১৫)
মা ও শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কথা
বিবেচনা করে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে
চিকিৎসা বিজ্ঞান নবজাতক শিশুকে মায়ের
বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকার
কথাও বলা হয়েছে।
তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের
সন্তানদের দেহপসারিণী (ব্যভিচারী নারী)
ও পাগল মহিলার দুধ পান করানো থেকে দূরে
রাখ।’
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা
যায় যে, দেহপসারিণীর (ব্যভিচারী নারীর)
দুধ পানে ‘হেপাটাইটিস বি’ ও ‘এইডস’-এর মতো
ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে শিশু।
তাই ক্ষেত্র বিশেষ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ
পান করানো থেকে বিরত রাখার কথাও বলা
হয়েছে ইসলামে।
সর্বোপরি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান
করালে শিশু ও মায়ের মধ্যে এমন একটি
মানসিক বন্ধন তৈরি হয়, যা চিরস্থায়ী।
মুসলিম উম্মাহর সব শিশুর মায়ের উচিত
কুরআনের হুকুম অনুযায়ী তাঁর সন্তানকে পূর্ণ
দু’বছর দুধ পান করানো। পূর্ণ দু’বছর দুধ পান
করানোর পর প্রয়োজনে অতিরিক্ত আরো ছয়
মাস শিশুকে দুধ পান করানো যেতে পারে।
আল্লাহ তাআলা সব মাকে কুরআন ও
হাদিসের বিধান অনুযায়ী শিশুদেরকে
নিজেদের বুকের দুধ পান করিয়ে আল্লাহর
হুকুম পালন করার ও শিশুর যথাযথ যত্ন নেয়ার
তাওফিক দান করুন। আমিন।