মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, মনিব, মালিক, রিজিকদাতা। এক কথায় তিনি সমগ্র আসমান-জমিনের মালিক ও পরিচালক এবং তার জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই সংঘটিত হয় না। তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি কাউকে জন্ম দেনওনি, কারো থেকে জন্ম নেনওনি। তাঁর সমক কেউ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।
আল্লাহ শব্দটি তাঁর জাতি বা সত্তাবাচক নাম। এ শব্দের কোনো প্রতিশব্দ নেই। আল্লাহ নামে কোনো লিঙ্গান্তর বা কোনো বচন নেই। পৃথিবীর কোনো ভাষায় এর অনুবাদ করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র সৃষ্টি জগতের অধিকর্তা মহান মহীয়ান আল্লাহ নিজেই তাঁর পরিচিতির জন্য এই নাম ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ বলতে যে শুধু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে বোঝায় এটাই সঠিক। কারণ কোনো কাফের মুশরিক, বেদ্বিন কেউই এ কথা বলে না যে, আল্লাহ তাদের দেবতা। ভগবানকে আল্লাহ বলে না। আল্লাহ এমন এক সত্তা যার পরিচয় তাঁর রাসূল সা: মক্কায় কাফিরদের দিয়েছিলেন। সূরা ইখলাসে, আয়াতুল কুরসি ও কালামে পাকের আরো অনেক জায়গায় আল্লাহ পাক নিজেই তাঁর পরিচয় তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলতে আমারা শুধু অদ্বিতীয় এক সত্তাকে বুঝি, যাকে দেখা যায় না; কিন্তু বিপদে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। ঘোর বিপদে যখন পৃথিবীর কেউই সাহায্য করার মতা রাখে না, তখন তিনি সাহায্য করেন। আল্লাহ পাকের শান বলে শেষ করা যাবে না, তবে পবিত্র কুরআনে তার ৯৯টি নাম রয়েছে। আসমান ও জমিনে সব কিছুই তাঁর অধীন। তিনি কখনো ঘুমান না, তন্দ্রা বা ঘুমও তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনের সব কিছু তাঁর মতার অধীন। কেউ ইচ্ছা করেও তাঁর মতার বাইরে যেতে পারে না। এ সম্পর্কে সূরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে : ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সকল মতার মালিক’ (বাকারা-১৪৫)।
আল্লাহ যেহেতু সব কিছুর মালিক, অতএব সব সৃষ্টি একমাত্র তাঁর হুকুমমতো চলবে। তাঁরই আনুগত্য করবে। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে বাধ্য। আল্লাহ পাক বলেন : ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছেÑ ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক সবই আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে’ (আলে ইমরান-৮৩)।
সব নবী রাসূলের দাওয়াত ছিল : ‘হে আমার জাতি, তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত (দাসত্ব) কর। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো ইলাহ (মাবুদ) নাই।’
এই বিশাল পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, নত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, বৃলতা, মানব-দানব, পশু-পাখি, সাগর-পাহাড় সব কিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আল্লাহ তায়ালা। তিনি সর্বশক্তিমান অনন্ত মহিমায় অদ্বিতীয়। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রাকর্তা ও পালনকারী। খাওয়া পরা, রোগ-শোক মৃত্যু কোনো কিছুই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। হায়াত ও মউতের মালিক তিনিই। রিজিকদাতা, আইন এবং বিধানদাতাও একমাত্র তিনি। আমাদের মনের কোণে যে কথা লুকায়িত থাকে তিনি তাও জানেন। আর তাঁর মতায় বাধা দিতে বা প্রতিবাদ করতে পারে এমন শক্তিধর আর কেউ নেই। মহান আল্লাহ তায়ালার মধ্যে এসব অসীম গুণাবলি বিদ্যমান এবং তিনি ছাড়া আর কেউই ইলাহা বা ইবাদতের যোগ্য নেই।
সৃষ্টি জগতের সবাইকেই আল্লাহর ওপর ঈমান আনতে হয়। মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য মুখে স্বীকার করা এবং অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা যে মহান সত্তা আল্লাহ নামে পরিচিত। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। এই ঈমানের দাবি হলোÑ আর সব কিছুকে বর্জন করে কেবল তাঁরই প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপন করা, তাকেই ভালোবাসা, তাঁকেই ভয় করা, তাঁরই কাছে প্রার্থনা করা, তাঁরই কাছে কামনা করা, সর্বাবস্থায় তাঁরই ওপর ভরসা রাখা, সর্বদা মনে রাখা একদিন তাঁর কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে এবং ভালো বা মন্দ পরিণতি তাঁর ফয়সালার ওপরই নির্ভরশীল। ঈমানদারগণ কিয়ামতের দিন এই মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করে ধন্য হবেন।
আল্লাহ এক তাঁর কোনো অভাব নেই। তিনি কাকেও জন্ম দেননি এবং তিনি কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমক কেউ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তিনি তন্দ্রা ও নিন্দ্রা গ্রহণ করেন না। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।
পবিত্র কুরআন পাকে উল্লেখ করা হয়েছে : তিনিই একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সব বিষয়েই পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন, (সূরা হাশর-২২)। অন্যত্র বলা হয়েছে : তিনি সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যবর্তী স্থানের সব কিছুর সৃষ্টিকারী। তিনি আলিমুল গায়িব। তিনি সব জায়গায়ই বিরাজমান। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছুই দেখেন ও খবর রাখেন। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ আল্লাহ সব দৃশ্য-অদৃশ্য ও উপস্থিত-অনুপস্থিত সব বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞাত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সব প্রাণীর রিজিকদাতা। কোনো সৃষ্টিকেই তিনি রিজিক থেকে বঞ্চিত করেন না। সব প্রাণী সৃষ্টির পূর্বেই তিনি তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সব প্রাণীকেই তিনি রিজিক দেন এবং প্রতিপালন করেন। কুরআন পাকে উল্লেখ আছে : এই দুনিয়াতে এমন কোনো বিচরণশীল জীব বা প্রাণী নেই যার খাদ্যের দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি। অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই সব প্রাণীর খাদ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
মহান আল্লাহতায়ালা মাশীল। তাঁর সৃষ্টি জীবের মধ্যে কেউ অন্যায় বা ভুল করে যদি আবার তাঁরই কাছে মা প্রার্থনা করে, তিনি তাকে মা করে দেন। কেউ তাঁর কাছে মা প্রার্থনা করলে তিনি ফিরিয়ে দেন না, তাই পবিত্র কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ গাফুরুর রাহিম। আল্লাহ পরম মাশীল’ (আলে ইমরান-৩১)।
যদি মহান আল্লাহ একক না হতেন তাহলে এ বিশ্ব পরিচালনায় গোলমাল দেখা দিত। একজন সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত হতে বলতেন, আর অন্যজন পশ্চিম দিকে উদিত হতে বলতেন। আল্লাহপাক যে একক এর বহু প্রমাণ দুনিয়াতে রয়েছে। যদি মানুষ চিন্তা করে তা হলে বুঝতে পারবে। পবিত্র কালামে পাকে বর্ণিত হয়েছে : ‘আসমান ও জমিনে যদি এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ থাকত তা হলে আসমান ও জমিন বিপর্যস্ত হয়ে যেত’ (সূরা আম্বিয়া-২২)।
মহান আল্লাহ তায়ালা এমনই এক সত্তা, যার কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে কেউই বিফল হয় না। মানুষের যা কিছু প্রয়োজন কেবল আল্লাহ পাকের কাছেই তা কামনা করা বা প্রার্থনা করা কর্তব্য। এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম যে, সৃষ্টি তার স্রষ্টার কাছে তার প্রয়োজন পূরণের জন্য কামনা করবে। যিনি সৃষ্টি করেছেন কেবল তিনি পারেন তার বান্দার আশা-আকাক্সা পূরণ করতে। এই জন্য পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমার কাছে প্রার্থনা করে তখন আমি তার প্রার্থনা কবুল করি’ (বাকারা-১৩৬)।
মূলত কোনো মানুষের পে মহান আল্লাহর পরিচয় দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য পবিত্র কুরআন মজিদের সূরা এখলাসে তিনি নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন। যুগ-যুগান্তর ধরে দুনিয়ার মানুষ আল্লাহর স্বরূপ নির্ধারণ বা উদঘাটন করতে গিয়ে যেসব ভ্রান্ত ধারণা-বিশ্বাসের শিকার হয়েছে, এ সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সেসব ধারণা বিশ্বাসের মূল উৎপাটন করেছেন।