ইনসাফপূর্ণ সমাজ ও মুত্তাকি

অদৃশ্য ব্যথা আমরা অনুভব করি অথচ দেখা যায় না। অনুরূপ অদৃশ্য আল্লাহকেও ঈমানদারেরা প্রতিনিয়ত অনুভব করি। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, সাহায্য চাই, সুখ-দুঃখে স্মরণ করি। আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য ভেদ করা সম্ভব নয়। কেননা আমরা নিজেরাই মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকুলের একটি ুদ্র প্রাণী। তাঁরই ইচ্ছায় ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করেছেন নূর দিয়ে, আদম আ:কে সৃষ্টি করেছেন Churned Soil বা মথিত মাটি দিয়ে, ইবলিসকে আগুন দিয়ে, আকাশকে ধোঁয়া থেকে এবং ভূমিকে পানির ফেনা থেকে। আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের আসনে মানুষকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে জ্ঞান দান করে। জ্ঞানার্জনে যে চিন্তাশক্তি ও ধৈর্যের প্রয়োজন তা মানুষকে আল্লাহ পাক দান করেছেন। বিভিন্ন কাওম বা জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাঁর মনোনীত বান্দা নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন ঐশী গ্রন্থ। সব মানবগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন করার পেছনে নবী-রাসূলগণের ত্যাগই হচ্ছে সব কিছুর মূলে। অর্থাৎ নবী কেরামগণই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। সেই শিক্ষা দেয়ার Motto নিঃসন্দেহে আসমানি কিতাব। আমাদের কাছে আসমানি কিতাব বলতে যেমন হজরত দাউদ আ:-এর ওপর জাবুর, মুসা আ:-এর ওপর তাওরাত, হজরত ঈসা আ:-এর ওপর ইঞ্জিল এবং সর্বশেষ হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর ওপর অবতীর্ণ মহাগ্রন্থ আল কুরআনকেই জানি। সহিফাসহ অন্যান্য আসমানি কিতাবে আমরা বিশ্বাস করি। আর সর্বশেষ কিতাব হচ্ছে আল কুরআন। এটিই চূড়ান্ত আসমানি কিতাব, কেননা এর পরে আর কোনো আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হবে না এবং নবীও আসবেন না। সুতরাং কুরআনের বাণী কী বলে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআন শরিফের দ্বিতীয় সূরার প্রথমেই বর্ণনাটি এভাবে এসেছে, ‘(জিব্রাইল আ:-এর মাধ্যমে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর কাছে আল্লাহর প্রেরিত) এটি ওই কিতাব যেখানে কোনো সন্দেহ নেই, আর মুত্তাকিদের জন্য পথ প্রদর্শক বা হেদায়াতকারী।’ আমরা পদচ্যুত হতে চাই না। চাই না মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব হারাতে, তাই কুরআন শরিফে বর্ণিত আয়াতগুলোর অনুসরণ করি। ডারউইন মতামত দিয়েছেনÑ আমরা বানর ছিলাম, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হয়েছি। অথচ কুরআন পাকের ঘোষণা হচ্ছে, আমরা এক স্ত্রী ও পুরুষ হজরত আদম-হাওয়া আ: থেকে সৃষ্টি হয়েছি। ন্যূনতম জ্ঞানের মাপকাঠিতে কুরআন শরিফের কথাই বিশ্বাসযোগ্য। যেখানে আরো বলা হয়েছে, মানুষের কল্যাণমুখী জীবনধারার কথা। দোলনা থেকে কবর এবং পরকালের অনন্ত জীবনের পুরস্কার অথবা তিরস্কারের (ফয়সালা) কথাও এ পবিত্র গ্রন্থে বর্ণনা এসেছে। তাই ‘তিবয়ানাল লিকুল্লি সাইয়িন’ বলে এখানে বোঝানো হয়েছে সব ধরনের সমস্যার সমাধান (ইহকালীন, পরকালীন বিষয়গুলো)। অতএব খুব সহজভাবে কুরআনে বর্ণিত মুত্তাকি বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে, যারা কুরআনের ফায়সালা বা হুকুম-আহকামকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রিয় নবীর রেজামন্দি হাসিলের অপেক্ষায় থাকেন। হেদায়াতপ্রাপ্ত আল্লাহর প্রিয় নবী-রাসূলগণ তাকওয়া অবলম্বন করেছেন। পবিত্র কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, যদি তোমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হতে চাও তাহলে রাসূল সা:-এর আনুগত্য করো। এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হেদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া ও তাকওয়া অবলম্বন পরিপূরক। হেদায়াতপ্রাপ্ত যারা তারা মুত্তাকি। আবার মুত্তাকিরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। নবী পাকের পর ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি, অলি আল্লাহ, পীর-মাশায়েখ, সুফি সাধক সবারই তাকওয়া ছিল বলে তারা মুত্তাকি। সুতরাং তারাই উত্তম। প্রিয়নবী সা:-এর ইহকাল ত্যাগের পরবর্তী ২৯ বছর স্বর্ণযুগ হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। খোলাফায়ে রাশেদিনের সেই স্বর্ণযুগ-পরবর্তী অর্ধশতাব্দীরও কম সময়ে সুফি-সাধকগণ আমাদের ভারতবর্ষে আসতে শুরু করেন। শ্মশ্রুমণ্ডিত দাড়ি, টুপি, পাগড়ি ও জুব্বা পরিহিত এসব ইসলাম প্রচারকই রাসূল সা:-এর মিশন সত্যকে প্রতিষ্ঠা করে ইসলামকে এ অঞ্চলে প্রসার ঘটিয়েছেন। ইসলাম, যে বিশ্বাসী (Believers) তার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সমগ্র জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আংশিক কিংবা খণ্ডিত অনুশীলনের মাধ্যমে হলেও স্পর্শ করে যায়। যতই নিরপেক্ষতার জন্য দাড়ি, টুপি, মসজিদ এমনকি নামাজ ত্যাগ করি না কেন, কোনো ব্যক্তি যদি তার চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিশ্বাস, আচরণ ও কর্মে কোনোভাবে পরকালের শাস্তি অথবা পুরস্কারের সংশ্লিষ্টতা রাখেন তাহলে সে ধর্মহীন হতে পারেন না। মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রাখেন, এমন লোকেরা শিক্ষাদীক্ষা পেয়েছেন নবী-রাসূল সা:, সাহাবায়ে কেরাম, আলেমে দ্বীন ও বুজুর্গানে কেরামের মাধ্যমে, যাতে তাকওয়া অবলম্বন ছিল মুখ্য। উপরন্তু সর্বাবস্থায় যেন মানুষ সাহায্য প্রার্থনা করে ওই আরশের মালিকের কাছে, হোক সে নিঃস্ব অসহায়।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post