পৃথিবীর সবচেয়ে
মূল্যবান সম্পদ
হিদায়াত প্রাপ্ত হৃদয়।
মহান আল্লাহ পাক
যাকে ভালোবাসেন
তাকেই হিদায়াতের
মতো মূল্যবান সম্পদ
দ্বারা সমৃদ্ধশালী করেন। এ সম্পদ যদি
আল্লাহ পাক কাউকে দান করতে চান তবে
কেউ তা রুখতে পারেনা। আর সে মূল্যবান
হিদায়াত যদি মহান আল্লাহ পাক তার
হাবীব হুজুর সা. এর দীদারের মাধ্যমে
কাউকে দান করেন তবে তা যে কত বড়
সৌভাগ্যের বিষয় তা সহজেই অনুমেয়। সে
সৌভাগ্যশীল মানুষদের একজন হলেন
ভারতের ৭০ কোটি হিন্দুর সাক্ষাৎ ভগবান
ড. শিবশক্তি স্বরুপজি। হিদায়াতের নূর
দ্বারা আলোকিত হয়ে পৃথিবীর সেরা
আলোকিত মানুষে পরিণত হলেন ড.
শিবশক্তি। তার ইসলাম গ্রহণের এ ঘটনায়
সারা বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে
গিয়েছিল। সারা দুনিয়ার স্বনামধন্য সব
মিডিয়া তা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ
করেছিল। তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী
যেকোন সত্যান্বেষী ও সত্যপ্রিয় মানুষের
জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। ড. শিবশক্তি
স্বরুপজীর বদলে যাওয়া জীবনের ঈর্ষণীয়
সে উপাখ্যান মাসিক আল-জান্নাত এর
পাঠক পাঠিকাদের সামনে তুলে ধরার
ব্যকুলতা হৃদয়ে অনুভব করছি। চলুন, শুনি সে
স্বার্থক জীবনের অভূতপূর্ব কাহিনী।
১৯৮৬ সালের রমজান মাস। এ পবিত্র
মাসেই ড. শিবশক্তি একটি স্বপ্ন
দেখলেন। যে স্বপ্নটি তার জীবনকে
পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।
স্বপ্নটির সারসংক্ষেপ এমন যে, তিনি
স্বপ্ন দেখার এক পর্যায়ে ভয়ে হাপাচ্ছেন
আর দৌঁড়াচ্ছেন। এমন সময় তিনি তার
সামনে এক নূরানী চেহারার সীমাহীন
ব্যক্তিত্ববান এক মানুষকে দেখতে
পেলেন, যিনি তাকে ভয় নেই বলে
আশ্বস্ত করলেন এবং তার পরিচয় পেশ
করলেন ড. সাহেবের কাছে যে, আমিই
শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) সে স্বপ্নের
মধ্যেই নবীজি সা. শিবশক্তিকে কালিমা
পড়ার আহ্বান জানালেন এবং কালিমা
স্বয়ং নিজেই পড়িয়ে দিলেন। এরপর
থেকেই তিনি ইসলামকে মনে প্রাণে কবুল
করে নিলেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন
করে ড. ইসলামুল হক রাখলেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঠিক একই স্বপ্নটি
তার বিদূষী স্ত্রী শ্রীমতি শ্রদ্ধাদেবীও দেখলেন, তিনিও কালিমার
আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামকে গ্রহণ
করে খাদিজা হক নাম ধারণ করলেন।
তাদের উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েট কন্যা
শ্রীমতি অপরাজিতা দেবীও ইসলাম গ্রহণ
করেছেন। তার নাম রাখা হলো আয়েশা
হক। তাদের আরেক কন্যাও স্বামীসহ
ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন
পিতার কাছে।
ড. সাহেব ভারতের বৃন্দাবনে জন্মগ্রহণ
করেছেন। আর এ বৃন্দাবনেই হিন্দুদের
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। হিন্দুসমাজ এ
বৃন্দাবনকে তাদের পবিত্র তীর্থভূমি
হিসেবে বিবেচনা করে। রাধা কৃষ্ণের
লীলাভূমি নামেও এটি সারা পৃথিবীতে
পরিচিত। ভারতের হিন্দুসমাজ মনে করত
রাধা কৃষ্ণের এ লীলাভূমি বৃন্দাবনেই
আরেক ভগবান জন্মগ্রহণ করে ‘শিবশক্তি’
নামধারণ করেছেন।
হিন্দুসমাজের এমন পূজনীয় ভগবান সমতুল্য
শিবশক্তির ইসলাম গ্রহণের এ ঘটনায়
ভারতীয় হিন্দুসমাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে
যায়। দুঃখে আর ক্ষোভে তাদের
জ্ঞানীয় শক্তি লোভ পেয়ে যায়।
ব্রাক্ষèণ্যবাদের পতাকাবাহী এক
শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক লোক ড.
শিবশক্তির বিরুদ্ধে মিছিল বের করে তার
ফাসির দাবিতে উস্কানিমূলক শ্লোগান
দিতে থাকে। তারা ‘নব ভারত টাইমস’ ‘নব
ভারত সমাচার’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার
বিরুদ্ধে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে
থাকে। ড. সাহেব সীমাহীন ধৈর্য আর
সহিষ্ণুতার সাথে এ সমস্ত বিদ্বেষপূর্ণ
প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছেন তার
লিখিত দুটি পুস্তক হিন্দি ভাষায় লিখিত
‘খোলাপত্র’ ও উর্দু ভাষায় লিখিত
‘লিজিয়ে আপ ভি সৌচিয়ে’ দ্বারা।
অপরদিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত
পৈতৃক আশ্রমের স্বর্ণসিংহাসনের মোহ
ত্যাগ করে তিনি যখন ইসলামকে কবুল
করেছেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর
সচেতন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক
আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সারা জাহানের
জ্ঞানী গুণীরা তাকে মোবারকবাদ
জানিয়ে পত্র লিখতে থাকেন। তাদের হৃদয়
নিংড়ানো ভালোলাগার কথা জানান।
ড. শিবশক্তি উত্তর ভারতের মথুরা
জেলার বৃন্দাবনে ১৯৩৬ সালে এক
ঐতিহ্যবাহী মোহন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন। তারা বংশানুক্রমেই সর্বস্বামী বা
মোহন্ত। তার পিতার নাম প্রিতমদাস
উদাসেন এবং মায়ের নাম ভানুমতি কর।
তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ
সন্তান হলেন শিবশক্তি।
পিতার আশ্রমেই শিবশক্তি প্রাথমিক
শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে এলাহাবাদ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরিয়ান্টালিজম এ
মাস্টার্স করেন। গুরু কুল কাংড়ি থেকে
‘আচারিয়া’ পদবি, অক্সফোর্ড
ইউনিভার্সিটি থেকে বিশ্বের দশটি
প্রধান ধর্মের উপর ডক্টরেট অব
ডিভাইটিটি এবং অরিয়ান্টালিজম এ
আরেকটি ‘পি এইচ ডি লাভ করেন।
পৃথিবীর বারটি ভাষায় তিনি পা-িত্য
অর্জন করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো
ইংরেজি, সংস্কৃতি, গ্রিক, উর্দু, পালি,
মারাঠি, গোরমুখি, গুজরাটি, আরবী
প্রভৃতি ভাষা।
সমকালীন ধর্মগুরু ও প-িতদের সাথে তাঁর
সুসম্পর্ক ছিল। বালঠাকুর, নানা সাহেব
দেশমুখ, বাব সাহেব দেশমুখ, পুরীর
শংকরার্চার্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল
বিহারী বাজপেয়ী প্রমুখের সাথে তাঁর
প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও হৃদত্যাপূর্ণ সম্পর্ক
ছিল।
তিনি যখন ভ্যার্টিকানের পোপ পল-৬ এর
বৃত্তি নিয়ে ইটালি যান তখন তাকে
সেখানকার নাগরিকত্ব দেয়া হয়। পোপ
জন পলের পক্ষ থেকে তাকে খ্রীষ্টধর্ম
গ্রহনের আহ্বান জানালে তিনি তা
উপেক্ষা করে ভারতে এসে উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্ত ভগবানের আসনে আরোহন
করেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মোহন্তগিরি
পেশা ছিল তাঁর অঢেল তীর্থ উপার্জনের
উৎস। অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী অঢেল
বিত্ত, সম্মান আর সেবাযত্ন তাকে ধরে রাখতে পারেনি। কালিমার
শ্বাশত আহবান তাকে বিমোহিত করতে
সক্ষম হয়েছিল বিধায় তা সম্ভব হয়েছে।
আর্কষণীয় চেহারার শ্বেতশুভ্র চুল-
দাড়িশোভিত ড. ইসলামুল হক বর্তমানে
তাঁর ভাগ্যবতী স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে
ভূপালের ১৫নং নীলম কলোনির একটি
ভাড়া বাসার দোতলায় থাকেন। ভবনের
পাশেই জাওয়াবিত মসজিদ। সেখানে
তিনি ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন।
পাওয়ার থেরাপির আয়ুর্বেদ শাস্ত্র
দ্বারা চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি
জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর জীবনে
এতো প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও তিনি
সীমাহীন নির্ভীক মানুষ। তিনি বলেছেন,
এক আল্লাহকে ছাড়া কাউকে তিনি ভয়
করেন না।
একজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিল
যে, “ভারতীয় হিন্দুদের ভগবানের আসনে
সমাসীন হবার সৌভাগ্য লাভ করেও
আপনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেছেন?
জবাবে ড. সাহেব বলেছিলেন, ‘আমি
ভারতের আর ১০ জন হিন্দুর মত নই। আমি
ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। ভালো-মন্দ
সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান হয়েছে।
বিশ্বের প্রধান ১০ টি ধর্মের উপর
পড়াশোনা করে আমি অক্সফোর্ড থেকে
পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছি।
ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই
আমি ইসলামের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি।
মানবীয় জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র
ইসলামই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে।
অন্য কোন ধর্মের এ দুঃসাহস নেই।
ইসলামের সৌন্দর্য ও মানসিকতা আমাকে
ইসলাম গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করেছে।
তাছাড়া গভীর রাতে হযরত মুহাম্মদ সা.
আমাকে ও আমার বিদূষী স্ত্রীকে ইসলাম
গ্রহনের নির্দেশও দেন। হাদীসের
ভাষ্যনুযায়ী এ স্বপ্ন মিথ্যা হয়না।
স্বপ্নযোগে হযরত মোহাম্মদ সা. এর
দীদার কয়জনের ভাগ্যে জোটে?’ তিনি
আরো বলেন, “নবীজি সা. এর নির্দেশ
আমরা পালন করেছি মাত্র। কাজেই
আমাদের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে কোনরূপ
প্রশ্ন তোলা ঠিক হবেনা বলে আমি মনে
করি। ইসলাম গ্রহণ করতে পেরে আমরা
নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ”