চিন্তামুক্ত থাকার বিশেষ আমল


চিন্তা মানুষের অজস্র নাম না জানা ব্যাধির কারণ। চিন্তার কারণেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন মানুষ। দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে চিন্তামুক্ত থাকার উপায় বলে দিয়েছেন। পৃথিবীর বাতেনি এইসব চিন্তা থেকে মুক্তি না পেলে আমরা কখনোই আখিরাতের পরের জীবনে সুখী হতে পারব না। চিন্তামুক্ত থাকার জন্য কোরআন-হাদিসে বেশ কিছু আমলের কথা এসেছে, কয়েকটি সংক্ষেপে দেওয়া হলো।

🔯০১) তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। তাকদিরে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। তাকদিরের সারমর্ম উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১০৭)

🔯০২) দুনিয়ার বিপদ-আপদের বিনিময়ে পরকালে মিলবে আল্লাহর অনুগ্রহ। পরকালের বিভীষিকার সামনে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কিছুই নয়। তাই সেদিকটা কল্পনা করে দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৪৬)

🔯০৩) আপনার চেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত মানুষের কথা ভাবুন। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি রাসুলের কাছে দুঃখ-কষ্টের অভিযোগ করেন। তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকদের এই অবস্থা ছিল যে, একজন মানুষকে ধরে আনা হতো, এবং গর্ত খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হতো। তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দ্বি-খণ্ড করে দেওয়া হতো এবং মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার ইসলাম থেকে ফেরাতে পারত না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬১৬)

🔯০৪) আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তার ওপর ভরসা রাখুন। তিনি নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

🔯০৫) দুশ্চিন্তা দূর করার নিয়তে নফল নামাজ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও …।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

🔯০৬) বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

🔯০৭) প্রিয়নবী (সাঃ)-এর প্রতি অধিকহারে দরুদ পাঠ করুন। দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, উবাই ইবনে কাব (রা.) দরুদ পড়া প্রসঙ্গে নবীজিকে বললেন, আমি আমার সবটুকু সময়ে আপনার প্রতি দরুদ পড়ব। তখন নবী (সাঃ) বলেন, ‘তাহলে তা তোমার চিন্তামুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গোনাহ মাফ করা হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

🔯০৮) দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য রাসুল (সাঃ)-এর শেখানো দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। দোয়ায়ে ইউনুস ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’ পড়ুন। এই দোয়া পড়লে আল্লাহ বিপদ-আপদ দূর করে দেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন দালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’

অর্থ : হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post