আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের ইবাদত হচ্ছে ‘নামাজ’



নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদত। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাজের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় বা ফরজ করা হয়েছে। নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্‌ বা বিশ্বাসের পর নামাজই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সালাত-এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি।

পারিভাষিক অর্থ : ‘শরিয়ত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকট বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে সালাত বলা হয়, যা তাকবিরে তাহরিমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল হল ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা। (বোখারি) রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, বান্দার ইমান ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য হল নামাজ ত্যাগ করা। (আহমদ)

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে চল্লিশ দিন যাবৎ প্রথম তাকবিরের সাথে জামাতে নামাজ পড়বে, তার জন্য দু’টি পরওয়ানা লেখা হয়, একটি জাহান্নাম থেকে অপরটি মোনাফেকি থেকে মুক্তির। (তিরমিযী) রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে নামাজ পড়ার আশায় মসজিদের দিকে যায়, অথচ মসজিদে গিয়ে দেখে জামাত শেষ, তবু সে জামাতের সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ)

রাসুলুল্লাহ (সা) আরও এরশাদ করেন, যতক্ষণ মানুষ নামাজের প্রতীক্ষায় থাকে, ততক্ষণ নামাজের সওয়াব লাভ করতে থাকে। (বোখারি ও মুসলিম)

নিম্নে আরো পড়ুন: ‘যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে তারাই জান্নাতি হবে’

তাওবা (توبة) একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। কোরআন-হাদিসে শব্দটি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার নিষেধকৃত বিষয়সমূহ ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়সমূহের দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যাবহার করেছেন। পাঠকদের জানবো তাওবার ৬ উপকারতিা সম্পর্কে-

(১) তাওবাহ দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি অর্জনের মাধ্যম: পবিত্র কোরআনুল কারিমের এক আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যারা তাওবাহ করে, ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে আশা করা যায় তারাই সফলকাম হবে।’ (সূরা: কাসাস, আয়াত: ৬৭)। অপর এক আয়াতে এসেছে ‘পক্ষান্তরে যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে ও আমলে সালেহ করবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, কোনো প্রকার জুলুম করা হবে না।’ (সূরা: মারইয়াম, আযাত: ৬০)।

(২) তাওবাহ গোনাহ বিদূরক: আল্লাহর হাবিব রাসূল (সা.) বলেন, ‘গোনাহ থেকে তাওবাহকারী এমনভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেন সে গোনাহটি করেইনি।’ (ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ৪২৫০)।

(৩) গোনাহকে নেকিতে রূপান্তরকারী: মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘কিন্তু যারা তাওবাহ করে, ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে, এদের সকল পাপরাশি নেকিতে রূপান্তর করে দেন আল্লাহ তায়ালা। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা: আল ফুরকান, আয়াত: ৬৯)।

(৪) তাওবাহ হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন করে: প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দা যখন কোনো গোনাহের কাজ করে তখন তার অন্তরে একধরনের কালো দাগ পড়ে যায়। যদি ইস্তেগফার করে তাহলে এই দাগ দূরীভূত করে তার অন্তর সূচালু, ধারালো, ও পরিশীলিত হবে। আর এই দাগের কথা কোরআনেই আছে, খবরদার! তাদের অন্তরে দাগ রয়েছে যা তারা কামাই করেছে।’ (তিরমিযি, আসসুনান : ৩৩৩৪)।

(৫) তাওবাহ দেয় সুন্দর জীবনের গ্যারান্টি: মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তার সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অন্তর তারই প্রতি মনোনিবেশ করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং তিনি অধিক আমলকারীকে বেশি করে দেবেন।’ (সূরা: হুদ, আয়াত: ৩)

(৬) তাওবাহ রিজিক ও শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যম: মহান রাব্বুর আলামিন আল্লাহ তায়ালা নুহ আলাইহিস সালামের কথা উদ্ধৃত করেন-

‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র ধারায় বৃষ্টির নহর ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা: নুহ, আয়াত: ১০-১২)।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post