মেধা ও সামাজিক মর্যাদা স্রষ্টার অনুগ্রহ



অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ছাত্ররা শুধু ধনীর ঘর থেকে নয় বরং ধনী-গরীব উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে কোন জনসংখ্যার মাত্র ২.৪% ঈর্ষণীয় মেধাসম্পন্ন। একটি মানুষের সমস্ত জীবনকে যেহেতু ডিএনএ নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি মেধা বা বুদ্ধিমত্তা ক্রমোজোমের অন্তর্গত ডিএনএ দ্বারা নির্ধারিত। যখন বাবার শুক্রানুর সঙ্গে মায়ের ডিম্বানুর মিলনে জাইগোট তৈরি হয়, তখন মা ও বাবার জিনের মধ্যে অকল্পনীয় মাত্রায় পুনর্বিন্যাস ঘটে। সম্ভাবনার সূত্র অনুযায়ী বাবার ২৩টি ক্রোমোজোম ও মায়ের ২৩টি ক্রোমোজোম মিলে ২২৩ অর্থাৎ ৬৪ ট্রিলিয়ন (৬৪ হাজার মিলিয়ন বা ৬৪০০ কোটি) ধরনের সমন্বয় ঘটতে পারে। এখানে মানুষের কোন হাত নেই। আল্লাহই মায়ের ক্রোমোজোম ও বাবার ক্রোমোজোমকে ভেঙ্গে সুনিব্যস্ত করে জেনেটিক কোডের ৬৪০০ কোটি সমন্বয়ের সম্ভাবনার মধ্য থেকে একটি সম্ভাবনাকে পরিণতির দিকে নিয়ে যান, যাতে নবাগত শিশু অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়। শুধু মেধা থাকলেই সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছা যায় না। যারা বড় হয়েছেন তারা সমাজের উঁচু স্তরে ওঠার জন্য বা বিশেষ ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রচণ্ড তাড়না অনুভব করেছেন।


সৃষ্টিকর্তাই মেধা, প্রেরণা ও সামাজিক যোগাযোগের সমন্বয় ঘটিয়ে একজন সাধারণ মানুষকে ঈর্ষণীয় সামাজিক মর্যাদায় নিয়ে যান। তিনিই দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)কে সামাজিক মর্যাদার শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলিতে অভিষিক্ত করেছিলেন।

‘তবে আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এবং তারা বলেছিল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে তার বহু মুমিন বান্দার ওপরে সম্মানিত করেছেন।’ (সূরা নামল ২৭/১৫)

‘অতঃপর আমি সুলাইমানকে মীমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষিকূলকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। আমিই এসব করে দিয়েছিলাম।’ (সূরা আম্বিয়া ২১/৭৯)

আসুন আমরা যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, স্থপতি, বিজ্ঞানী, লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তারা একটিবারের জন্য চিন্তা করি গ্রামের সেই প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ বা ভার্সিটিতে কত সহপাঠী, বন্ধুকে পেছনে ফেলে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। তাদের মধ্যে অনেকে শারীরিক গঠন, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান বা মেধায় আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল। তারা ব্যর্থতার কারণে বা জীবনের বিবিধ পারিপার্শ্বিক কারণে, প্রেরণা বা পরিশ্রমের প্রচণ্ডতার অভাবে বা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যর্থতর কারণে বা জীবনের উন্নতির জন্য সঠিক ক্ষেত্র গ্রহণের ব্যর্থতার পাকে পড়ে পিছিয়ে গেছে। আল্লাহই পরম মমতায় আমাকে বা আপনাকে ওইসব বন্ধুর পথ অতিক্রম করে সমাজের উঁচু মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছেন।

তাই আসুন, শ্রদ্ধায় ও কৃতজ্ঞতায় আনত হয়ে যাই তার প্রতি যিনি শামুকের ভেতরে লুকানো বালুকণাকে মুক্তোয় রূপান্তরিত করার মতো আমাদের ক্ষুদ্র ও নগণ্য নাম গোত্রহীন অস্তিত্বকে সাফল্য, প্রাচুর্য ও খ্যাতিতে ভরে দিয়েছেন, যাতে আমরা আমাদের ভেতরে প্রস্ফ‍ুটিত প্রতিভার স্ফ‍ুলিঙ্গকে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারি।

(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ গ্রন্থ থেকে)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post