মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, 'প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে যদি 'বিসমিল্লাহ' বলা না হয়, তাহলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।' (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)।
প্রতিটি মুসলিমের উচিত বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করা। এতে কাজের স্পৃহা ও অফূরন্ত বরকত নিহিত রয়েছে।
বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরুর মানেই হলো এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহই আমাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। যদি এ কাজে আল্লাহর সায় না থাকত, আমি কখনোই তা করতে পারতাম না। হে আল্লাহ, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটা করছি। আপনি এ কাজে বরকত দিন।
কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে। এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বিনয় ভাব প্রকাশ পায়। এ বাক্যের মাধ্যমে কাজ শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত হুজায়ফা রা. বলেন- নবী করিম সা. বলেছেন, 'শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।' (মুসলিম, আবু দাউদ)।
বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে রহমত দান করেন, যে কোনো ধরনের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহ কাজটিকে হেফাজত করেন। আর দান করেন অসান্য বরকত।
হজরত আনাস রা. বলেন- রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, 'যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, 'বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।' অর্থাৎ 'আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আল্লাহ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই, ক্ষমতা নেই; আল্লাহ তখন ওই ব্যক্তিকে শয়তানের হাত থেকে পথ রক্ষা করেন।'
কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবধারিত হয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের সা. কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এই উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, 'জিবরাইল আ. সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সা. এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল আ. বললেন, হে মুহাম্মদ, আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ সা. বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।
অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন, হে নবী, আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অতঃপর জিবরাইল আ. বললেন, ইকরা বিস্মি। অর্থাৎ আপনি পড়ূন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, 'এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহতায়ালা জিবরাইলের আ. মাধ্যমে মুহাম্মদ সা. এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।' (ত্বাবারি, তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩)
বিসমিল্লাহর মর্মকথা আসলে আলোচনা করে শেষ করার মতো নয়। এর মধ্যে মহান আল্লাহ পাক অফূরন্ত নেয়ামত রেখেছেন। এই বিসমিল্লাহর ফজিলত অগণন। তাই আসুন, সব ভালো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করি। আর ঘর থেকে বের হওয়ার আগে অবশ্যই 'বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ' পাঠ করি।