আল্লাহর বন্ধু হবেন যেভাবে

আল্লাহর বন্ধু হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহর বন্ধু তারা, যারা ইসলামের সব রুকনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আমল করে আর সবক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে তার বন্ধুদের পরিচয় ঘোষণা করেছেন এভাবে-
‘জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা তাকওয়ার পথে চলেন। তাদের জন্যই দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতে সুসংবাদ। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন নেই। এটিই মহা সফলতা।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ৬২-৬৪)
কুরআনুল কারিমের এ আয়াতে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য দু’টি কাজের দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। একটি হলো পরিপূর্ণ ঈমান লাভ করা আর অপরটি হলো তাকওয়া অবলম্বন করা।
প্রত্যেক ঈমানদার মুমিনই আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। ঈমান ও তাকওয়ার পরিপূর্ণতা যার মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হবে সে ততবেশি আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হবে।
ওলামায়ে আহনাফ বলেন, ‘সব মুমিন ব্যক্তিই করুনাময় আল্লাহ তাআলার বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসারি সে ততবেশি আল্লাহর কাছে সম্মানিত ও (বেলায়েতের অধিকারী)।
আল্লাহর বন্ধু হওয়ার উপায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কাজকে আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার উপায় হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। একটি হলো আল্লাহ নির্ধারিত ফরজ হুকুমগুলো যথাযথ পালন করা। অতঃপর নফল ইবাদতে নিজেদেরকে বেশি বেশি নিয়োজিত করা।
ফরজ ইবাদত পালনের পর যে যতবেশি নফল ইবাদতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে, সে ততবেশি আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন করতে বা বন্ধু হতে বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি যে কাজ আমি ফরয করেছি। (ফরয কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ)।
এরপর (ফরজ ইবাদত পালনের পর) বান্দা যখন নিয়মিত নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জনের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালবাসি।
আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হয়, যা দিয়ে সে শুনতে পায়। আমি তার চোখে পরিণত হই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়।
আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার তা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কোনো কিছু চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভয় করার মাধ্যমে নিষিদ্ধ বিষয়মূহ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখাই হলো আল্লাহর বন্ধু হওয়ার চূড়ান্ত উপায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইমান লাভের পর ফরজ ইবাদতসমূহ যথাযথ পালন পূর্বক বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাঁর একান্ত অনুগত বান্দা হিসেবে তৈরির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।’

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post