গোনাহমুক্ত জীবনের জন্য যে আমল করবেন

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি ক্ষমা চাও, তোমার ও মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।’ (সুরা মুহাম্মদ : আয়াত ১৯) এ আয়াতের আলোকে বুঝা যায়, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে গোনাহ মাফে তার কাছে প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন।
দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও পরকালের সফলতায় গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনের বিকল্প নেই। তাই হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোনাহ থেকে মুক্ত থাকতে অনেক উপদেশ প্রদান করেছেন। এমন অনেক নসিহত আছে যা পালন করা সহজ কিন্তু উপকারিত অনেক বেশি।
নিয়মিত সহজ আমলে মানুষ গোনাহ থেকে মাফ পাবে। তা হতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর দিক-নির্দেশনায়। হাদিসে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর ৩৩ বার ( ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ) সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার ( ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪ ) আল-হামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার ( ﺍَﻟﻠﻪُ ﺍَﻛْﺒَﺮ ) আল্লাহু আকবার (তাসবিহ) পড়ে।
একশবার পূর্ণ করার জন্য একবার ( ﻟَﺎ ﺍِﻟَﻪَ ﺍِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻟَﺎ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَ ﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻴْﺊٍ ﻗَﺪِﻳْﺮ ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’ পড়ে তবে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় যদিও তা সাগরের ফেনার সমতুল্য হয়।’ (মুসলিম)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তারপরও আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছে, (হে নবি!) আপনার আগের ও পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হলো।’ আল্লাহ তাআলা তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও তিনি প্রতিদিন ৭০ মতান্তরে ১০০ বার আল্লাহর কাছে তাওবা করতেন।
প্রিয়নবির এ তাওবা শুধু তার জন্য মূলত তা ছিল উম্মতের জন্য শিক্ষা ও অনুকরণীয় আদর্শ। কেননা তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন, নেকি দান করেন এবং বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদিসে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন ৭০-এর চেয়েও অধিক আল্লাহর তাওবা ও ইসতেগফার করি।’ (বুখারি)
> অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার মনে অন্যমনস্কতার সৃষ্টি হয়, আমি নিশ্চয় প্রতিদিন একশত বার আল্লাহর কাছে ইসতেগফার করি।’ (মুসলিম)
সুতরাং গোনাহ মাফের নিয়তে নিয়মিত ছোট ইসতেগফার ( ﺍَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪ ﻭَ ﺍَﺗُﻮْﺏُ ﺍِﻟَﻴْﻪِ ) আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি’ পড়া। বিশেষ করে নামাজের সালাম ফেরানোর পর ৩ বার এ ইসতেগফার পড়া।
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’ (َﺍ ﺍِﻟَﻪَ ﺍِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻟَﺎ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚُ ﻭَ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻭَ ﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻴْﺊٍ ﻗَﺪِﻳْﺮ ) পড়বে-
– সে ১০টি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব লাভ করবে। আর
– তার নামে লেখা হবে ১০০টি নেকি এবং
– তার নাম থেকে দশটি গোনাহ মুছে ফেলা হবে। আর
– সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে শয়তানের (আসর বা ওয়াসওয়াসা) থেকে সংরক্ষিত থাকবে এবং
– কেয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না। একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার চেয়ে বেশি আমল করেছে।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার ( ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَ ﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ) ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে; যদিও তা পরিমাণের দিক থেকে সমুদ্রের ফেনার সমতুল্য হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সুখ-শান্তি এবং পরকালের সফলতায় গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও তাওবা ইসতেগফার করার মাধ্যমে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post