(১) প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দিন নফল রোযা রাখা সুন্নত ও মুস্তাহাব। কারণ, তা ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। আর এই দুই দিন আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। মা আয়ি’শাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলেন, “আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।”
তিরমিযী, সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তারগীবঃ ১০২৭।
সুতরাং, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে মাসের যে কোন সোমবার অথবা বৃহস্পতিবারে ১টা, ২টা, ৩টা. . .এইভাবে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা, সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী যার যতগুলো ভালো লাগে, ততগুলো রোযা রাখা যাবে। এই ব্যপারে নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই, যত বেশি রোযা রাখা যায়, বান্দার জন্য তত উত্তম।
নিয়তঃ রাতের বেলা কিংবা সাহরী খাওয়ার পর “আজ আমি সোমবার কিংবা বৃহস্পতিবার দিনের নফল রোযা রাখবো” – মনে মনে এতোটুকু চিন্তা বা সিদ্ধান্ত থাকলেই নিয়ত করা হয়ে যাবে। এজন্য বিশেষ কোন আরবী দুয়া পড়তে হবে না। উল্লেখ্য, সাহরী খাওয়া সুন্নত, সাহররী খাওয়ার মাঝে অনেক বরকত রয়েছে। তবে সাহরী খাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি ঘুম থেকে উঠে খেতে না পারে, তাহলে কারো যদি সামর্থ্যে কুলায়, তাহলে নফল-সুন্নত রোযা সাহরী না খেয়েও, ভোরবেলা উঠে নিয়ত করে রাখা যায়। সহীহ মুসলিমঃ ১১৫৪।
(২) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, সোমবারেই তাঁকে নবুওয়ত দেওয়া হয় এবং সোমবার দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আবু কাতাদাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছিলো অথবা, এই দিনে আমার উপর (ক্বুরআন) নাযিল করা হয়েছে।” সহীহ মুসলিমঃ ১১৬২।
(৩) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রহমতের উসীলায় মুসলমানদের গুনাহ মাফ করেন। তবে এমন দুইজন মুসলমান, যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই গুনাহ থেকে তোওবা করে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করবে, তারা এই ফযীলত থেকে বঞ্চিত থাকবে। আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখতেন। একদিন তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলো, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখেন কেনো?” তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআ’লা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে (আল্লাহ বলেন), “তাদেরকে ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে।” ইবনে মাজাহঃ ১৭৪০। হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আত-তারগীবঃ ১০২৮।
(৪) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন ‘কেরামান কাতেবীন’ অর্থাৎ, সম্মানিত আমল লেখক ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করে থাকেন। এই হাদীসটিও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোযা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমলনামা (আল্লাহর) কাছে পেশ করা হয়।” তিরমিযীঃ ৭৪৭। হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আত-তারগীবঃ ১০২৭।
(৫) সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছিলেন সোমবারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে মৃত্যুবরণ করার কারণে সোমবার ফযীলতপূর্ণ হয় নি। বরং, সোমবারের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এই দিন তাঁকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিলো বা কুরআন নাযিল করা হয়েছিলো, এইদিনে বান্দার আমলনামা আল্লাহ তাআ’লার কাছে পেশ করা হয়, আল্লাহ তা’লা নিজ রহমতে সোমবার দিন মুসলিম বান্দাকে ক্ষমা করেন, এই কারণে। তবে মুসলিম বান্দা হিসেবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের জানা থাকা উচিত যে, “অধিকাংশ আলেমদের নিকট প্রসিদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগারো (১১) হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, রোজ সোমবার মৃত্যুবরণ করেছিলেন।”
সুহাইলী প্রণীত “আর-রওদুল উনফ” (৪/৪৩৯-৪৪০), ইমাম ইবনে কাসীর রাহি’মাহুল্লাহর “আস-সিরাহ আন-নববীয়্যাহ” (৪/৫০৯), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহি’মাহুল্লাহর “ফাতহুল বারী” (৮/১৩০)।