শিক্ষা বিস্তারে রসূল (সা.) এর আদর্শ

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। মেরুদণ্ডহীন মানুষ যেমন দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ব্যতিত কোন জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত যে গুনাবলী ও প্রতিভা সুপ্ত রয়েছে, তার বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনের প্রথম কথাই হল 'পড়'। মানবজাতির উদ্দেশ্যে এটিই হল আল্লাহর প্রথম নির্দেশ। যদি আমরা মানুষের আদি ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য করি তবে দেখব যে, হযরত আদম (স.) কে সৃজন করার পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সর্বপ্রথম যা দান করেছিলেন তা-ও শিক্ষা। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আবির্ভাবের প্রাক্কালে আরববাসী গোমরাহীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়াতের জন্য দু'টি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন: এক. প্রিয় নবী (স.) এর শুভাগমণ হল। দুই. পবিত্র কুরআন নাজিল হল। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে: 'আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এসেছে একটি নূর ও একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থ। (৫:১৫) (সূত্র: তাফসীরে জালালাইন) এবং সুস্পষ্ট গ্রন্থ হল পবিত্র কুরআন। পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) হাতে-কলমে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রেরিত হয়েছেন বিশ্বমানবের জন্য মহান শিক্ষক রূপে। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে মহান আদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে মানবতাকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং জ্ঞান-গরিমা, ন্যায়-নীতি ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সর্বোত্তম আদর্শ মণ্ডিত এক মানবগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তার মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়েছিল তাঁর সেই আদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব। হেরা পর্বতের গুহা থেকে আলোকচ্ছটা নিয়ে-যে মহান জ্যোতি ও অনুপ্রেরণায় তিনি তাঁর মিশন শুরু করেছিলেন, তাঁর প্রথম কথাই ছিল—'পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃজন করেছেন'। (৯৬:০১) বস্তুত: ইসলাম হচ্ছে আলোর ধর্ম, অন্ধকারের বিনাশ সাধন এবং শিক্ষার মহান ব্রতে মানবতার সার্বিক কল্যাণময়ী সত্তার উজ্জীবন ও উদ্বোধন। তাইতো আমরা দেখতে পাই ইসলামের কষ্ঠিপাথরের পরশে আরবের অসভ্য বর্বর জাতি পরিণত হলো সভ্যতার নিশান বরদার হিসেবে। আরবের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মিতে তামাম দুনিয়া আলোকিত হলো এবং মহনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ (উসওয়াতুন হাসানা) হিসেবে।
শিক্ষা বিস্তারে রসূল (স.) এর আদর্শ নীতি:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মাত্র তেইশ বছরে সমগ্র মানব জাতির এক অপূর্ব জাগরণ এনে দিয়েছেন। যারা একদিন তাঁর প্রাণের শত্রু ছিল, তারাই তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে। এটি নি:সন্দেহে তাঁর শিক্ষানীতির বিরাট সাফল্য যে, তিনি সমগ্র বিশ্বে তাঁর মহান বাণী পৌছে দিয়েছেন। যারা পরস্পর শত্রু ছিল, তারাই তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে আপন ভাইয়ে পরিণত হয়েছিল। যেখানে সর্বত্র রক্তক্ষয়ী সংঘাত, খুন-খারাবির অগ্নি দাবানলের ন্যায় জ্বলে উঠেছিল, সেখানে তাঁর শিক্ষার কারণেই শান্তি ও মীমাংসার ফুল ফুটেছিল। যে সমাজে প্রস্তর নির্মিত মূর্তিগুলোকে সেজদা করা হচ্ছিল, সেখানেই তাওহীদের পতাকা উড্ডীন করা হয়েছিল। এসবই রসূল (স.) এর মহান শিক্ষার ফলশ্রুতিস্বরূপ। মানব জাতির ইতিহাসে এটিই হল সর্বাধিক বিস্ময়কর ঘটনা। প্রিয়নবী (স.) যে পন্থায় মানুষকে সত্যের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তন্মধ্যে একটি হল মানুষের প্রতি দয়া-মায়া, তাদের কল্যাণ কামনা এবং তাঁর বিনম্র স্বভাব। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে রসূল (স.) এর বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন এভাবে-''আল্লাহপাকের অনুগ্রহে (হে রসূল!) আপনি তাদের জন্য কোমল হূদয়ের অধিকারী হয়েছেন, আর যদি আপনি রূঢ় মেজাজ ও কঠিন হূদয় বিশিষ্ট হতেন তাহলে এসব লোক আপনার চারিপার্শ্ব থেকে দূরে সরে যেত"। (৩: ১৫৯) এ কারণেই অন্যায়কারীকে দেখে প্রিয়নবী (স.) তার প্রতি রাগাম্বিত হওয়ার স্থলে তার জন্য আক্ষেপ করতেন, তার জন্য তাঁর দয়া হতো, সর্বদা তিনি এ বিষয়ে চিন্তা করতেন যে, কিভাবে এই পথভ্রষ্ট মানুষদের পথ-প্রদর্শন করবেন এবং তাদের সঠিকভাবে পরিচালিত করবেন। একবার জনৈক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে প্রশাব করতে শুরু করল, সাহাবায়ে কেরাম তাকে ধমক দিতে উদ্যত হলেন। প্রিয়নবী (স.) সাহাবাগনকে এ ব্যাপারে বারণ করলেন এবং ঐ ব্যক্তিকে কাছে ডেকে এনে অত্যন্ত বিনম্র ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন যে, এটি আল্লাহ পাকের ঘর, ইবাদতের স্থান, এ স্থানকে কোন অবস্থাতেই অপবিত্র করা যায় না। নবী (স.) আদৌ তার প্রতি রাগ করলেন না। এরপর তিনি হযরত আলী (রা.) কে আদেশ দিলেন, যেন পানি ঢেলে ঐ স্থানটিকে পবিত্র করা হয়। এ ছিল নবী (স.) এর শিক্ষাদানের একটি পন্থা।
দ্বিতীয়ত: প্রিয়নবী (স.) মানুষকে যে কাজের শিক্ষা প্রদান করতেন, তিনি নিজেও সে কাজ করতেন। অর্থাত্ তাঁর উপদেশ বা নসিহত শুধু মানুষের জন্য ছিলনা বরং নিজে এর ওপর সর্বপ্রথম আমল করতেন। যেমন তিনি মানুষকে নামাজের শিক্ষা দিতেন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post