মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)

আল্লাহর ওহী যাঁর ওপর নাজিল হয়েছে তিনি হলেন আল্লাহর নবী। আর আল্লাহর কেতাব যাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে তিনি হলেন আল্লাহর রসূল। আল্লাহ মানব জাতিকে সঠিকপথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে তাঁর মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন যে, হে ফেরেশতাগণ আমি জগতে মানুষকে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি। আল্লাহর
এই ঘোষণা হতে এটাই প্রমাণিত হয় আল্লাহ যুগে যুগে মানবকূল হতে নবী বা রসূল প্রেরণের প্রথা প্রচলিত রেখেছেন। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী অজ্ঞতার যুগে পরিণত হয়েছিল। হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রচারিত আসল ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীতে একত্ববাদের নামগন্ধ পর্যন্ত ছিল না। তখনকার যুগে পৃথিবীতে অন্যায়, পাপ এবং কুসংস্কারের মাত্রা এতোই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, মানুষ তার প্রকৃত লক্ষ্য পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল। আরব দেশ তখন সব ধরনের পাপ আর অধর্মের কেন্দ্রস্থল ছিল। মদ, জুয়া যেমন আরবদের গৌরবের ব্যাপার ছিল তেমনি খুন-খারাবি, লুটতরাজও তাদের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ বলে গণ্য করত। তাছাড়া পরনিন্দা ও আত্মপ্রশংসা তাদের মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। এমনি সময় পৃথিবীতে একজন নবীর আবির্ভাব আবশ্যক হয়ে উঠে। আরব জাতির এমন ভয়াবহ সময়ে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে আরবের শ্রেষ্ঠ কোরায়েশ বংশের সরদার আবদুল মোতালেবের সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র হযরত আবদুল্লাহ-এর ঔরশে বিবি আমেনার গর্ভে যে সন্তান জন্মলাভ করে তিনি হলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (স.)। হযরত মুহাম্মদ (স.) মাতৃগর্ভে থাকতেই এ পৃথিবীর বুকে অনেক আলৌকিক এবং আশ্চর্য ধরনের ঘটনা ঘটে যায়। স্বপ্নযোগে বিবি আমেনাকে জানানো হলো যে, তিনি সৃষ্টির সেরা মানবকে গর্ভে ধারণ করেছেন। যখন তিনি ভুমিষ্ট হয় তখন তাঁর নাম 'মুহাম্মদ' রাখার জন্যও স্বপ্ন দেশ পেলেন বিবি আমেনা। তিনি বলেন, 'হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন তাঁর সাথে এমন এক অপূর্ব আলো বিচ্ছুরিত হয় যা পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের সবকিছুকে আলোকিত করে ফেলে। হযরত মুহাম্মদ (স.) মাতৃগর্ভে থাকতেই অথবা তার বহু আগে এ পৃথিবীতে তাঁর শুভাগমন সম্পর্কে বিভিন্ন
ধর্মীয়গ্রন্থে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপিটক এ উল্লেখ করা হয়েছিল যে, মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলে যাবে তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন। তাঁর নাম হবে মৌত্রিয় (শান্তি) ও করুনার বুদ্ধ। 'তাওরাত' ইহুদী ধর্মীয়গ্রন্থেও ১৮শ' অধ্যায়ের ১ম শ্লোকে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আগমন সম্পর্কে উল্লেখ আছে যে, আমি তোমাদের মতো তাদের বংশেও একজন পয়গম্বর পাঠাব এবং তার মুখে আমার বাণী প্রদান করব। খৃষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেল এ হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আগমন সম্পর্কে হযরত ঈসা (আ.) বলেন, যদি তোমরা আমাকে ভালবাস তবে আমার উপদেশ পালন কর। আমি স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনা করব। তিনি যেনো তোমাদেরকে আর একজন শান্তিদাতা প্রদান করেন। যিনি চিরদিন তোমাদের সাথে থাকতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবনী পাঠ করলে স্পষ্ট বুঝা যায় এসব ভবিষ্যদ্বাণী তাঁরই উদ্দেশে প্রচার করা হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জম্মের তারিখ এবং সময়কাল সর্ম্পকে জানা যায় ৫৭০ খৃষ্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার ভোরে তিনি মক্কা নগরীতে জম্মগ্রহন করেন। তাঁর জম্মের পূর্বে পিতা আবদুল্লাহ্ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) জম্মের পর থেকে তখনকার আরবী প্রথা অনুযায়ী ধাত্রীদের হাতে পালিত হন। হালিমা নামে একজন ধাত্রী তাঁকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত লালন-পালন করেন। তিনি যখন ছয় বছর বয়সে উপনীত হন তখন তাঁর মাতা বিবি আমিনা ইন্তেকাল করেন। (সংক্ষেপায়িত)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post