রাসুলের (সা.) দাওয়াতি মিশন

রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রতিটি আচার-আচরণই আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্যায় ও ধাপ ছিল আলোকবিভায় উদ্ভাসিত। আলোর এ ফোয়ারা থেকে কেউ ছিটেফোঁটা আহরণ করলেও সাফল্যের দিগন্তচূড়ায় পৌঁছে যেতে পারবে অনায়াসে। নবী জীবনের প্রধান মিশন ছিল দিগ-দিগন্তে আসমানি বার্তা ছড়িয়ে দেয়া। যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসুলরা যে শিক্ষা ও আদর্শ নিয়ে এসেছিলেন সেগুলোর পূর্ণতা দেয়া। এ জন্য পৃথিবীতে প্রেরিত সব নবী-রাসুলের কর্মের ক্ষিপ্রতা ও কৌশল একা রাসুলুল্লাহর (সা.) আয়ত্তাধীন ছিল। কারণ আল্লাহ তাঁকে এমন অলৌকিক শক্তিতে বলীয়ান করেছিলেন, যা অন্য কোনো নবী-রাসুলের ছিল না।
দ্বীনের প্রচার-প্রসার ছিল রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবনের অন্যতম প্রধান কাজ। তাঁর দায়িত্বের পরিধি যেমন অন্য নবী-রাসুলের তুলনায় ব্যাপৃত ছিল, তেমনি দায়িত্বানুভূতিও ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি তাঁর দাওয়াতি মিশনে সাফল্যের শীর্ষ চূড়া স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে দায়িত্ব ও কর্মের ভার তাঁর ওপর অর্পিত হয়েছিল, তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। তাঁর এ সফলতার নেপথ্যে ছিল আদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব। নিঃসম্বল ও অনাড়ম্বরভাবে মক্কায় ইসলামের যে আদর্শ অঙ্কুরিত হয়েছিল মদিনায় তা বিশাল মহীরুহে রূপ লাভ করে। শক্তি ও প্রাচুর্যের বলে নয়, আদর্শই ছিল এর মূল প্রাণশক্তি। রহমতের আধার ও শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী মহানবী (সা.) দ্বীনের এ মহান দায়িত্ব পালন করতে সামান্য সময়ের জন্যও আদর্শচ্যুত হননি। তিনি মন্দের জবাব দিয়েছেন ভালো দিয়ে। বিশাল ক্ষমতা হাতে পেয়েও প্রতিপক্ষকে অনৈতিকভাবে ঘায়েল করার ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করেননি।
রাসুলুল্লাহর (সা.) দাওয়াত পদ্ধতি ছিল অনুপম, নীতি ও আদর্শে বলীয়ান। মানবতাকে পরিশীলিত করার নিরন্তর যে প্রয়াস তাঁর মধ্যে কার্যকর ছিল, এর কোনো নজির পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত দেখা যায় না। পৃথিবীময় শান্তির সুবাস ছড়িয়ে দেয়াই ছিল তাঁর মিশন ও ভিশন। আদর্শিক ও ফলপ্রসূ দাওয়াত পদ্ধতির কারণেই তাঁর দ্বীন অল্প সময়ে বিশ্ব জয় করতে সক্ষম হন। তাঁর কৌশল ও সাধনার ফলেই তা চিরন্তনতা লাভ করে। কেয়ামত পর্যন্ত এ দ্বীন টিকে থাকবে তাঁর আদর্শের অফুরন্ত শক্তির গুণে, স্থূল কোনো সামর্থ্যে নয়। দ্বীনের আলোকশিখা যতদিন মিটমিট করে জ্বলবে, ততদিন জয় হবে আদর্শের, আদর্শকামী মানুষের। কারণ বাহ্যিক উপকরণ কখনোই আদর্শের সমকক্ষ হতে পারে না।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post