কেমন হবে মুমিনের ব্যবহার?

ইসলামী শরিয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনপদ্ধতি, যা সব দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে, এসব দিকের মধ্যে গুণাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এ দিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। তাইতো আকিদা ও আখলাকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে, যেমন নবী করিম সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)
সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ছাড়া ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং প্রিয়নবী সা: সুসংবাদ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকগুলো পরিপূর্ণ করে দেয়া। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকগুলো পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।’ ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারি আদাবুল মুফরাদে বর্ণনা করেছেন।
এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবিব সা:-এর প্রশংসা করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল, কালাম : ৪)
কোথায় এ চরিত্র বর্তমান বস্তুবাদী মতবাদ ও মানবতাবাদী মানুষের মনগড়া চিন্তা-চেতনায়?
যেখানে চরিত্রের দিককে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, তা শুধু সুবিদাবাদী নীতিমালা ও বস্তুবাদী স্বার্থের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও তা অন্যদের ওপর জুলুম বা নির্যাতনের মাধ্যমে হয়। অন্য সব জাতির সম্পদ লুণ্ঠন ও মানুষের সম্মানহানির মাধ্যমে অর্জিত হয়।
একজন মুসলমানের ওপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সাথে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে, অন্য মানুষের সাথে, এমনকি নিজের সাথে কী ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে। যখনই একজন মুসলমান বাস্তবে ও তার লেনদেনে ইসলামী চরিত্রের অনুসরণ করে তখনই সে অভীষ্ট পরিপূর্ণতার অতি নিকটে পৌঁছে যায়, যা তাকে আরো বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উচ্চমর্যাদার সোপানে উন্নীত হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে, যখনই একজন মুসলমান ইসলামের চরিত্র ও শিষ্টাচার হতে দূরে সরে যায় সে বাস্তবে ইসলামের প্রকৃত প্রাণচাঞ্চল্য, নিয়মনীতির ভিত্তি হতে দূরে সরে যায়। সে যান্ত্রিক মানুষের মতো হয়ে যায়, যার কোনো অনুভূতি এবং আত্মা নেই।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দারা উন্নত চরিত্রের দ্বারা সারা রাত নামাজ আদায়কারী এবং সারা বছর রোজা পালনকারীর মর্যাদায় অতি সহজে পৌঁছে যেতে পারে (আবু দাউদ শরিফ)। দয়া, ক্ষমা, সবর, বিনয়, সৎ স্বভাব, সুন্দর আচরণ মানবচরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই উত্তম চরিত্রবানই উত্তম ঈমানদার।
উত্তম চরিত্র বা আখলাক তিন প্রকার
১. আখলাকে হাসানা : কেউ জুলুম করলে সমপরিমাণ বদলা নেয়ার আখলাক।
২. আখলাকে কারিমা : আখলাকে কারিমা হচ্ছে জুলুম করলে তা মাফ করে দেয়া।
৩. আখলাকে আমিমা : জালেমের জুলুম মাফ করে দেয়ার পর তার প্রতি ইহসান বা উপকার করা। উত্তম চরিত্রবান আল্লাহর রেজামন্দির বাসনায় রাগ গিলে ফেলে, সৎ কর্মশীল লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, মানুষের সঙ্গে কটুবাক্য ব্যবহার করে না।
এখানে একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্ব কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:
Ñ মুসলিম ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলবে। মিথ্যা কখনোই বলবে না।
Ñ সে কখনো প্রতারণার আশ্রয় নেবে না। সে হবে বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন।
Ñ সে অগোচরে কারো সমালোচনা করবে না বা কারো সম্পর্কে খারাপ
মন্তব্য করবে না।
Ñ সে হবে সাহসী। কাপুরুষতাকে সে ঘৃণা করবে।
Ñ ন্যায়ের পক্ষে সে অত্যন্ত দৃঢ়তার পরিচয় দেবে। সত্য এবং বাস্তব ব্যাপারে দ্বিধাহীনভাবে নিঃসঙ্কোচে কথা বলবে।
Ñ সে হবে ন্যায়-নিষ্ঠাবান, যদিও এতে তার ক্ষতি হয় বা তার বিপক্ষে যায়।
Ñ সে অন্যের অধিকারে কখনো হস্তক্ষেপ করবে না।
Ñ কেউ তার প্রতি অন্যায় করুক বা জুলুম করুক তাও সে কখনোই বরদাশত করবে না।
Ñ সে হবে শক্তিশালী। অন্যের পক্ষ থেকে সে লাঞ্ছনার শিকার হতে আদৌ রাজি নয়।
Ñ মুসলিম ব্যক্তি সব কাজে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ নেবে। আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সিদ্ধান্তে অবিচল থাকবে।
Ñ সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাসাধ্য পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করবে।
Ñ সে হবে বিনয়ী এবং দয়ালু। ভালো এবং জনকল্যাণমূলক কাজ নিজে করবে এবং অন্যকে তা করার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে এবং অন্যকে তা থেকে নিষেধ করবে।
Ñ সে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
Ñ একজন মুসলিম নারী হিজাব পরিধান করবে এবং পরপুরুষের সামনে নিজেকে পূর্ণাঙ্গরূপে ঢেকে রাখবে।
আসুন আমরা শুদ্ধির পথে অগ্রসর হই। নিজের ভালো ব্যবহার দিয়ে শত্র“কে বন্ধু বানাই। প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই সবাই।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post