প্রসঙ্গঃ জায়নামাজে মক্কা মদিনার ছবি

ইন্নি ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।  অর্থ : নিশ্চয়ই আমি আমার মুখমণ্ডল একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে ফিরালাম।  যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।  আর আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।  সূরা আন আমের ৭৯ নং আয়াতটি পড়ে পবিত্র জমিনের ওপর কিছু বিছিয়ে নামাজিরা নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যান।  নিয়তে পবিত্র কাবা শরিফের দিকে মোতাওয়াজ্জা হওয়ার কথা জানান।  মহান রাব্বুল আলামিনকে রাজি-খুশি করার তাঁর পবিত্র

গৃহের দিকে মুখ করে নামাজে দাঁড়ান।  অথচ সেই ঘরের ছবিটি যদি নামাজিদের পায়ের নিচে থাকে তা হলে বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার। 

আমাদের প্রিয় রাসূল (সা.) পবিত্র জমিনের ওপর কিছু না বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে পছন্দ করতেন।  বুখারি শরিফের ২৫৮ নং হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন- আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামাজ পড়তাম।  মাটি উত্তপ্ত হওয়ার দরুন আমাদের অনেকে সেজদার স্থানে (পরিহিত) কাপড়ের অংশ বিশেষ রেখে তার ওপর সেজদা করতেন।  নামাজিদের চেহারায় সেজদার নিশান থাকা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে ‘মুমেনের চেহারায় সেজদার নিশান হল তাদের পরিচয়’ [পারা-২৬, রুকু-১২] কারও কারও মতে এখানে সেজদার চিহ্ন বলে সেই ধুলোবালি বোঝানো হয়েছে, যা সেজদা করার সময় মুখমণ্ডলে লেগে যায়।  ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মাটি ছাড়া অন্য কিছুর ওপর সেজদা করতেন না।  সেজদার মধ্যেই বান্দা আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে থাকে। 

বর্তমানে বাহারি বিভিন্ন রকমের জায়নামাজ নামাজিরা ব্যবহার করে থাকেন।  তাতে তেমন কিছু আসে যায় না।  তবে সেই জায়নামাজের ওপর যদি পবিত্র মক্কা-মদিনা শরিফের ছবি অঙ্কিত থাকে তবে কি তাদের মুখের উচ্চারণের সঙ্গে কাজের মিল থাকল? এটা গর্হিত কর্ম নয় কি? এর পেছনে অজ্ঞতা কাজ করে।  নামাজে দাঁড়িয়ে তোতা পাখির মতো বুলি আওড়িয়ে যান।  আরবিতে কী বলছেন তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করেন না।  সেই কারণেই বিধর্মীরা আমাদের এমনি করে কাবু করে ফেলছে।  খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের সর্বনাশ করে চলেছে তারা। 

যুগশ্রেষ্ঠ সুফি সাধক আওলাদে রাসূল হজরত সৈয়দ রশীদ আহমেদ জৌনপুরী (র.) ইসতাফসর ওয়া জওয়াব গ্রন্থে লিখেছেন : মক্কা-মদিনার ছবিসহ জায়নামাজ তৈরি হয় সর্বপ্রথম স্পেনের মুসলিম সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার পর এবং সেটি হয়েছিল বিধর্মীদের মাধ্যমে।  মক্কা-মদিনার ছবি যিনি প্রথম ছেপে জায়নামাজ প্রস্তুত করেন তার নাম হ্যারিস অ্যাকলয়েড় এবং সেটি হয়েছিল স্পেনেই।  মক্কা-মদিনার ছবিসহ জায়নামাজ ব্যবহারকে আমি বেআদবি মনে করি।  আমার অনুসারী কিংবা আমার মসজিদে আগত মুসল্লিদের কেউই এ ধরনের জায়নামাজ ব্যবহার করেন না।  মক্কা-মদিনা শরিফের ছবি আমরা শ্রদ্ধাভরে দেয়ালের উঁচু স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে স্থাপন করি।  অথচ জায়নামাজের ব্যাপারটি অনেকেই বুঝেও বুঝতে চান না।  কারণ খোদ সৌদি আরবে প্রচুর পরিমাণে মক্কা-মদিনার ছবিসহ জায়নামাজ বিক্রি হয়।  ছবি ছাড়া জায়নামাজ দোকানে চাইতে গেলে নিগৃহীত হতে হয়।  দোকানদাররা বিরক্তি প্রকাশ করে জানান মক্কা-মদিনার ছবিওয়ালা জায়নামাজের কাটতি বেশি।  সবাই তো এটাই চায়।  বিধর্মীদের কারসাজিতে আমরা আজ ইবাদতে লক্ষভ্রষ্ট হচ্ছি।  অনেকেই আফসোস করে বলেন এত নামাজ পড়ছি কই তার তো কোনো সুফল পাচ্ছি না।  কী করে সুফল আসবে।  মহান রাব্বুল আলামিনের পবিত্র গৃহ এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (সা.)-এর পবিত্র গম্বুজ সংবলিত জায়নামাজ পদতলে রেখে নামাজ কতটুকু কবুল হতে পারে? ভেবে দেখা দরকার। 

সূরা আল ইমরানের ৯৬, ৯৭ নং আয়াতে প্রেমময় প্রভু জানিয়েছেন : নিশ্চয় মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত, তা বরকতময় ও বিশ্ব জগতের দিশারী।  তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে।  যেমন মাকামে ইবরাহিম।  আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ।  মানুষের মধ্যে সেখানে যার যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ওই গৃহের হজ করা তার অবশ্যই কর্তব্য।  এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। 

আল্লাহ ও তার রাসূলের শানের সঙ্গে বেআদবি করা মোটেও সমীচীন নয়।  মক্কা-মদিনার ছবিসহ জায়নামাজ যারা ব্যবহার করছেন তাদের বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।  হে আল্লাহ আমাদের জীবনকে ইবাদতময় করুন। 

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post