সবাইকে চলে যেতে হয়। যাওয়ার সময় কেউ সঙ্গে যাবে
না। যাবে শুধু নিজের কৃত আমল। কিয়ামতের দিন কঠিন
সময়ে তারাই মুক্তি ও সফলকাম হবে যাদের সৎ আমলের
পাল্লা ভারি হবে। আর মৃত্যুর পরও সৎ আমলের পাল্লা
ভারি হতে পারে একমাত্র সদকায়ে জারিয়ার
মাধ্যমে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হাদিসে পাকে ইরশাদ করেন, ‘মানুষের জীবনে এমন
তিনটি কাজ রয়েছে। যা শুধু জীবিত থাকা অবস্থায়ই
কল্যাণমূলক কাজ নয় বরং মৃত্যুর পরও বান্দা এর
উপকারিতা লাভ করবে।
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুনিয়ার জীবনের সব আয়োজন বন্ধ হয়ে
যাবে। কিন্তু তিনটি কাজ মানুষের কল্যাণে মৃত্যুর পরও
সঙ্গী হবে। যার প্রমাণ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস-
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে
অনুসরণ করে থাকে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার
(মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো-
তার পরিবার; তার ধন-সম্পদ ও তার আমলনামা। এর
মধ্যে পরিবার ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে
শুধুমাত্র আমলনামাই থেকে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)
যেহেতু মানুষের মৃত্যুর পর পরিবার, ধনসম্পদ ও
আমলনামা মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করবে। আমলনামা
সঙ্গে থাকবে আর পরিবার ও ধনসম্পদ কবরে যাবে না।
সেহেতু মানুষের উচিত তার জীবদ্দশায় পরিবার
প্রতিপালনে ধর্মীয় অনুভূতি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা
পালনা করা।
পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে পরকালের
জবাবদিহিতার মানসিকতা সম্পন্ন লোক হিসেবে
তৈরি করা। তাকওয়া ও দ্বীন সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান
অর্জনের ব্যবস্থা করা। তবেই পরিবারের পক্ষ থেকে
মৃত্যুর পরও প্রতিফল পাওয়ার আশা করা যায়।
আবার দুনিয়ার জীবনে ধনসম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে
অন্যায় ও পরের হক গ্রাস করা থেকে বিরত থাকা।
কারণ অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থ মানুষের মৃত্যুর কোনো
কাজে আসবে না, বরং পরকালে এ সম্পদ তার জন্য মহা
বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই হালাল ও বৈধ
উপায়ে সম্পদ অর্জন করা আবশ্যক।
এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম অন্য হাদিসে মানুষকে সতর্ক করতেই উল্লেখ
করেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু প্রিয়নবি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি কাজ ছাড়া
মানুষের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথম: অর্জিত ধন-সম্পদ থেকে সাদকা করা, যে দানের
সাওয়াব অবিরাম দানকারী মৃতবক্তির আমল নামায়
পৌঁছবে।
দ্বিতীয়: এমন জ্ঞান অর্জন করা; যার দ্বারা মানুষ
উপকৃত হবে। আর তৃতীয়টি হলো এমন নেক সন্তান রেখে
যাওয়া; যে সন্তান মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তির জন্য আল্লাহর
নিকট প্রার্থনা করবে। (মুসলিম)
শেষ: এ দুনিয়া মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়।
দুনিয়া হচ্ছে আখিরাতের শস্য ক্ষেত্র। তাই দুনিয়াতে
পরিবার প্রতিপালনের পাশাপাশি ধন-সম্পদ অর্জন
করে পরকালের পাথেয় আমল অর্জন করা একান্ত
কর্তব্য। এ আমলই হলো মানুষের শেষ সম্বল।
তাই আমাদের পরিবারকে দিতে হবে সঠিক শিক্ষা ও
পথের সন্ধান। ধন-সম্পদ অর্জন করতে হবে হালাল
উপায়ে। তাহলে এ পরিবার এবং ধন-সম্পদ কিয়ামাত
পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে। মৃত ব্যক্তির
পরকালীন জিন্দেগির জন্য আমলে পরিণত হবে।
মানুষের পরকালীন জীবনের সফলতায় এ জিনিসগুলোর
চিন্তা ও অনুভূতিই যথেষ্ট।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ
মোতাবেক পরিবার প্রতিপালন এবং ধন-সম্পদ অর্জন
করে পরকালের চিরস্থায়ী সম্পদ আমল অর্জনের
তাওফিক দান করুন। আমিন।