জামায়াতে সালাতের গুরুত্ব; প্রেক্ষিত বর্তমান সমাজ

আল্লাহ তাআলা সালাতের মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। পবিত্র কুরআনের বহু জয়গায় সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন । সালাতের প্রতি যত্নবান ও জামাআতভুক্ত হয়ে সালাত আদায়ের আদেশ করেছেন। সালাতকে গুরুত্বপূর্ন ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:— ﻭﺃﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺁﺗﻮﺍ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ ﻭﺍﺭﻛﻌﻮﺍ ﻣﻊ ﺍﻟﺮﺍﻛﻌﻴﻦ – ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ 43: আর সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাতে রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (বাকারা-৪৩) আর এর প্রতি অবমাননা এবং তা আদায়ে অলসতা মুনাফিকের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে :— ﺇﻥ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻴﻦ ﻳﺨﺎﺩﻋﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻫﻮ ﺧﺎﺩﻋﻬﻢ ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺎﻣﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺎﻣﻮﺍ ﻛﺴﺎﻟﻰ – ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ 142: মুনাফিকরা অবশ্যই প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে অথচ তারা প্রকারান্তরে নিজেদেরই প্রতারিত করছে । বস্তুতঃ তারা যখন সালাতে দাড়ায় তারা দাড়ায় একান্ত শিথিলভাবে। (সূরা নিসা-১৪২) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে :— ﻭﻻﻳﺄﺗﻮﻥ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﻻ ﻭﻫﻢ ﻛﺴﺎﻟﻰ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : 54 তারা সালাতে আসে আলস্যভরে (সূরা তওবা : ৫৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের প্রতি অচ্ছেদ্যভাবে যত্নবান ছিলেন। যুদ্ধ কি শান্তি, সুস্থ কি অসুস্থ সকল অবস্থায় এমনকি ওয়াফতের পূর্বে মৃত্যব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায়ও তিনি সালাত আদায়ে অবহেলা করেননি বিন্দুমাত্র । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ, ও পরবর্তীতে তাবেয়ীন ও উত্তম পূর্বপুরুষগণ সালাতের প্রতি ছিলেন বর্ণনাতীতভাবে ঐকান্তিক, একনিষ্ঠ । তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি রীতিমতো ঘাবড়ে দেবার মতো। বর্তমানে অনেক মুসলমানই সালাত আদায়ে দারুণভাবে উদাসীন। জুমার সালাতে মসজিদে উপচে-পড়া ভীড় হচ্ছে ঠিকই তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদের অধিকাংশ জায়গাই থাকে মুসুল্লিশূন্য। সালাত বিষয়ে মুসলমানদের অবহেলার আদৌ কোন কারণ থাকতে পারে না। সালাত বিষয়ে অবহেলার অর্থ ঈমানের একটি মৌলিক দাবি , ইসলামের একটি প্রধানতম নিদর্শন বিষয়ে অবহেলা । আর যারা এ ধরনের অবহেলা প্রদর্শনে অভ্যস্ত তাদের অপেক্ষায় থাকবে মর্মন্তুদ শাস্তি, কঠিন নারকীয় আযাব। আমাদের পূর্বপুরুষগণ জামা‘আতভুক্তিতে সালাত আদায়ের প্রতি খুবই যত্নশীল। তাদের নিকট এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ; এমনকি জামাত ছুটে গেলে খুবই মর্মাহত হতেন। তারা। মনোকষ্টে অশ্রু ঝরাতেন। সমবেদনা জানাতেন একে অপরকে জামাত ছুটে যাওয়ার কারণে । জামাআতভুক্তিতে সালাত না আদায়ের ফলে সালফে সালেহীনের মনোবেদনা মুহাম্মদ বিন মুবারক আ‘সম রহ. বলেন :— ‘আমি জামা‘আতে সালাত আদায়ে সক্ষম না হওয়ায় শুধুমাত্র আবু ইসহাক আল-বুখারীই সমবেদনা জানান। অথচ যদি আমার পিতা মারা যেত, তাহলে দশ হাজারেরও বেশী মানুষ আমাকে সমবেদনা জানাত। কেননা ধর্ম পালন করতে গিয়ে কষ্ট শিকার, তাদের নিকট, দুনিয়ার মুসীবতের চেয়েও সহজ মনে হত। জামা‘আতে সালাত আদায় তাদের নিকট দুনিয়ার সম্পদ অর্জনের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অথচ আমরা দুনিয়ার পিছনেই লেগে রয়েছি মরিয়া হয়ে। দুনিয়-অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভয়ে অনেক সময় সালাতও আদায় করছি দেরী করে। শুধু তাই নয় বরং আমাদের মাঝে এমন অনেকই আছেন, যারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের পিছনে তড়িত হয়ে সালাত আদায়ই ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে। মায়মুন বিন মেহরান রহ. মসজিদে এলে তাকে বলা হল, সমস্ত লোক চলে গিয়েছে। তিনি বললেন :— ﺇﻧﺎ ﻟﻠﻪ ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺭﺍﺟﻌﻮﻥ ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এই সালাতের মর্যাদা আমার নিকট ইরাকের গভর্ণর হওয়ার চেয়েও অধিক প্রিয়। ইউনুস বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, আমার যদি মুরগী হারিয়ে যায়, তবে আমি তার জন্য চিন্তিত হই, অথচ সালাত ছুটে গেলে তার জন্য চিন্তিত হই না!সালফে সালেহীনগণ সালাতের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে মসজিদে যাবার জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। ইমামের সাথে প্রথম তাকবীরে উপস্থিত হবার জন্য তারা সকলে ছিলেন প্রচন্ড আগ্রহী । সাঈদ নি মুসায়্যিব রহ. বলেন : পঞ্চাশ বৎসর ধরে আমার প্রথম তাকবীর ছুটেনি, পঞ্চাশ বৎসর পর্যন্ত আমি ফরয নামাযে মানুষের ঘাড় দেখিনি। অর্থাৎ তিনি পঞ্চাশ বৎসর ধরে প্রথম কাতারেই শমিল ছিলেন। ওয়াকী বিন জারাহ রহ. বলেন : প্রায় সত্তর বৎসর পর্যস্ত আ’মাশ রহ. এর প্রথম তাকবীর ছুটেনি। ইবনে সামাআহ রহ. বলেন : চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত আমার তাকবীরে উলা ছুটেনি। শুধু যে দিন আমার মায়ের মৃত্যু হয়, সে দিন ছুটেছিল। প্রিয় ভাই ! আমাদের অবস্থা আর সালফে সালেহীনের অবস্থার মাঝে অনেক ব্যবধান তাদের নিকট সালাতের গুরুত্ব ছিল আপরিসীম, আর আমরা এর অবমাননা করছি হরহামেশা। তারা এর প্রতি যত্নবান ছিলেন। আর আমারা করছি অলসতা। তারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের উপর সালাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর আমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি এবং একে (সালাতকে) পিছনে ফেলে রেখেছি। এর গুরুত্বপূর্ণ ছাওয়াব ও অফুরন্ত ফযীলতের প্রতি তাদের উৎসাহ ছিল অপরিসীম। আর আমরা এ থেকে বিমুখ। জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত ও ফলাফল :— জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত ও মর্যাদা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :- ১। সালাত পাপমোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ :— ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻗﺎﻝ : ﺃﻻ ﺃﺩﻟﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﻳﻤﺤﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﺍﻟﺨﻄﺎﻳﺎ ﻭﻳﺮﻓﻊ ﺑﻪ ﺍﻟﺪﺭﺟﺎﺕ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺑﻠﻰ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﺇﺳﺒﺎﻍ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻜﺎﺭﻩ ﻭﻛﺜﺮﺓ ﺍﻟﺨﻄﺎ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻧﺘﻈﺎﺭﺍﻟﺼﻼﺓ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﺬﻟﻜﻢ ﺍﻟﺮﺑﺎﻁ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ 48: আবূ হুরায়রা t থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদের এমন বিষয় জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ? সাহাবায়ে কিরাম বললেন : হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন : তা হচ্ছে কষ্টের সময়ে যথাযথভাবে অযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচারণ করা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাক। ‌এটাই হল সীমান্ত প্রহরা। (তিরমিযী : ৪৮) অন্য হাদীসে এসেছে : ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺭﺍﺡ ﺇﻟﻰ ﻣﺴﺠﺪ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﺨﻄﻮﺓ ﺗﻤﺤﻮ ﺳﻴﺌﺔﻭﺧﻄﻮﺓ ﺗﻜﺘﺐ ﻟﻪ ﺣﺴﻨﺔ ﺫﺍﻫﺒﺎ ﻭﺭﺍﺟﻌﺎ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺻﺤﺢ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﻩ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺃﺣﻤﺪ ﺷﺎﻛﺮ : 6311 আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তার আসা এবং যাওয়ায় প্রতি পদক্ষেপে গুনাহ মিটে যায় এবং প্রতি পদক্ষেপে নেক ‘আমল লেখা হয়। (আহমাদ : ৬৩১১) ২। সালাত বান্দাকে শয়তান থেকে হিফাজত করে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিরাপদ রাখে: ﻓﻌﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﻣﺎ ﻣﻦ ﺛﻼﺛﺔ ﻓﻲ ﻗﺮﻳﺔ ﻭﻻﺑﺪﻭ ﻻ ﺗﻘﺎﻡ ﻓﻴﻬﻢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺇﻻ ﻗﺪ ﺍﺳﺘﺤﻮﺫ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ، ﻓﻌﻠﻴﻜﻢ ﺑﺎﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻳﺄﻛﻞ ﺍﻟﺬﺋﺐ ﺍﻟﻘﺎﺻﻴﺔ – ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : 460 আবূ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে গ্রামে বা মরুপ্রান্তরে তিনজন লোক অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, শয়তান তাদের উপর চরে বসে। কাজেই জামা‘আতে সালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলছুট বকররীটিকেই উদরস্থ করে (আবূ দাউদ : ৪৬০) ৩। নিফাক থেকে পরিত্রাণ এবং জাহান্নাম খেকে মুক্তি :— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ﺃﺛﻘﻞ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻴﻦ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ ﻭﺍﻟﻔﺠﺮ – ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ : 1411 এশা ও ফজরের সালাত মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে বেশী ভারী বোঝা বলে মনে হয়। (বুখারী ও মুসলিম : ১৪১১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻳﻮﻣﺎ ﻓﻲ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻳﺪﺭﻙ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮﺓ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ ﺑﺮﺍﺀﺗﺎﻥ : ﺑﺮﺍﺀﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭﻭﺑﺮﺍﺀﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﻔﺎﻕ – ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : 224 যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাতে আদায় করে, তার জন্য দু’টি মুক্তি রয়েছে : জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর নিফাক থেকে মুক্তি। (তিরমিযী : ২২৪) ইবনে মাসউদ বলেন : ﻭﻟﻘﺪ ﺭﺍﻳﺘﻨﺎ ﻭﻣﺎ ﻳﺘﺨﻠﻒ ﻋﻨﻬﺎ ﺇﻻ ﻣﻨﺎﻓﻖ ﻣﻌﻠﻮﻡ ﺍﻟﻨﻔﺎﻕ - ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ : 1046 এক সময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ব্যতীত আর কেউ জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকেনি। (মুসলিম : ১০৪৬) ৪। কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ :— ﻋﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻗﺎﻝ : ﺑﺸﺮ ﺍﻟﻤﺸﺎﺋﻴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﻈﻠﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﺑﺎﻟﻨﻮﺭ ﺍﻟﺘﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ - ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﻭﺍﺅﺩ ﻭﺻﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ 447: বুরাইদাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অন্ধকার রাতে মসজিদে গমনকারীদের জন্য ক্বিয়ামত দিবসে পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (আবূ দাউদ : ৪৪৭) ৫।জামা‘আতে সালাত আদায়কারী আল্লাহর হিফাজতে :— ﻓﻌﻦ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺛﻼﺛﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﺿﺎﻣﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻭﻣﻨﻬﻢ ‏( ﻭﺭﺟﻞ ﺭﺍﺡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻬﻮ ﺿﺎﻣﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﺘﻮﻓﺎﻩ ﻓﻴﺪﺧﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺃﻭ ﻳﺮﺩﻩ ﺑﻤﺎ ﻧﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﺟﺮ ﻭﻏﻨﻴﻤﺔ – ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : 21 3 3 উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন : তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায়, তন্মধ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। সে আল্লার জিম্মায় থাকে ; এমনকি, তার মৃত্যু হলে তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা তাকে ছাওয়াব বা গনীমত প্রদান করে (বাড়ীতে) ফিরিয়ে দিবেন। (আবূ দাউদ : ২১৩৩) তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :— ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻓﻲ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻓﻬﻮ ﻓﻲ ﺫﻣﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻤﻦ ﺃﺧﻔﺮ ﺫﻣﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺒﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻟﻮﺟﻬﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻲ : 3367 যে ব্যক্তি সকালের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে। যে আল্লাহর জিম্মাকে অবমাননা করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (দারামী : ৩৩৬৭) একটু ভেবে দেখুন ! যে ব্যক্তি সকল ফরয- সালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে আদায় করে তার অবস্থা কত কল্যাণময় হতে পারে ? ৬। ঘরে সালাত আদায়ের চেয়ে মসজিদে সালাত আদায় অধিক ছাওয়াবের উপযোগী বানায় :— রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻲ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺗﻀﻌﻒ ﻋﻠﻰ ﺻﻼﺗﻪ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ ﻭﻓﻲ ﺳﻮﻗﻪ ﺧﻤﺴﺎ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺿﻌﻔﺎ ﻭﺫﻟﻚ ﺃﻧﻪ ﺇﺫﺍ ﺗﻮﺿﺄ ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﺛﻢ ﺧﺮﺝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻻ ﻳﺨﺮﺟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﻢ ﻳﺨﻂ ﺧﻄﻮﺓ ﺇﻻ ﺭﻓﻌﺖ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺭﺟﺔ ﻭﺣﻂ ﻋﻨﻪ ﺑﻬﺎ ﺧﻄﻴﺌﺔ ﻓﺈﺫﺍ ﺻﻠﻰ ﻟﻢ ﺗﺰﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺎ ﺩﺍﻡ ﻓﻲ ﻣﺼﻼﻩ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺻﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺭﺣﻤﻪ ﻭﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﻣﺎ ﺍﻧﺘﻈﺮ ﺍﻟﺼﻼﺓ – ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ : 611 জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় ঘরে বা বাজারের সালাতের চেয়ে ২৫ গুণ বেশী ছাওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে অযু করে খুব সুন্দর করে । এবং (সালাতের জন্য) মসজিদের উদ্দেশো বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে, প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে সালাত আদায় করতে থাকে, ফেরেস্তাগণ তার জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকেন। যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দু’আ করেন যো, হে আল্লাহ ! এই ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ ! এর উপর দয়া কর। আর যতক্ষণ সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে সালাতের অর্ন্তভুক্ত থাকে।’ (বুখারী ও মুসলিম : ৬১১) রাসূল (সা:) বলেন : ﻣﻦ ﻏﺪﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺃﻭ ﺭﺍﺡ ﺃﻋﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻣﻨﺰﻻ ﻛﻠﻤﺎ ﻏﺪﺍ ﺃﻭ ﺭﺍﺡ - ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ : 622 যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন, যতবার সে সকালে বা সন্ধ্যায় গমন করে ততবারই। (বুখারী ও মুসলিম : ৬২২) ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻪ ﻣﺘﻄﻬﺮﺍ ﺇﻟﻰ ﺻﻼﺓ ﻣﻜﺘﻮﺑﺔ ﻓﺄﺟﺮﻩ ﻛﺄﺟﺮ ﻩ ﺍﻟﺤﺎﺝﺍﻟﻤﺤﺮﻡ – ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : 471 আবূ উমামাহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে পবিত্র হয়ে ফরয সালাতের জন্য বের হয়, তার ছাওয়াব একজন হজ্জ পালনকারীর ছাওয়ারেবর সমান।(আবূ দাউদ : ৪৭১) ﻭﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺃﺭﺍﺩ ﺑﻨﻮ ﺳﻠﻤﺔ ﺃﻥ ﻳﺘﺤﻮﻝ ﺇﻟﻰ ﻗﺮﺏ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻗﺎﻝ : ﻭﺍﻟﺒﻘﺎﻉ ﺧﺎﻟﻴﺔ ﻓﺒﻠﻎ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﺑﻨﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺩﻳﺎﺭﻛﻢ ﺗﻜﺘﺐ ﺁﺛﺎﺭﻛﻢ ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺮﻧﺎ ﺃﻥ ﻛﻨﺎ ﺗﺤﻮﻟﻨﺎ – ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 1069: জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : বনু সালামাহ গোত্র মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হতে মনস্থ করল। তিনি বলেন : জায়গা খালি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌছলে তিনি তাদেরকে বললেন : হে বনী সালামাহ ! তোমরা তোমাদের বর্তমান বাসস্থানগুলো ধরে রাখ। মসজিদে গমনাগমনের পদক্ষেপগুলো তোমাদের জন্যে লিখে রাখা হবে। তারা বললেন : স্থানান্তরিত হওয়া আমাদের কিই-বা আনন্দত দিতে পারে ! (মুসলিম: ১০৬৯) ৭। জামা‘আতে সালাত আদায়কারী কিয়ামত দিবসে আরশের নীচে ছায়া পাবেন :— ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺳﺒﻌﺔ ﻳﻈﻠﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﻇﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﻻ ﻇﻞ ﺇﻻ ﻇﻠﻪ . ﻭﺫﻛﺮ ﻣﻨﻬﻢ ﻭﺭﺟﻞ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ : 620 ‏) সাহাবী আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ছায়া দান করবেন ঐ দিন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না … তাদের মধ্যে একজন হল ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় মসজিদের সাথে লাগানো। অর্থাৎ সালাত ও জামা‘আতের প্রতি অচ্ছেদ্যভাবে আগ্রহী। (বুখারী ও মুসলিম : ৬২০) ৮। আল্লাহ তা‘আলা মুসল্লির আগমনে খুশী হন :— রাসূল (সা:) বলেন : ﻻ ﻳﺘﻮﺿﺄ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻴﺤﺴﻦ ﻭﺿﻮﺀﻩ ﻭﻳﺴﺒﻐﻪ ﺛﻢ ﻳﺄﺗﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻻ ﻳﺮﻳﺪ ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻪ ﺇﻻ ﺗﺒﺸﺒﺶ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻴﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺒﺸﺒﺶ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻐﺎﺋﺐ ﺑﻄﻠﻌﺘﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ﻭﺃﺣﻤﺪ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ 8131: তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পরিপূর্ণভাবে অযূ করে, অতঃপর শুধুমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি এমন খুশি হন যেরূপ খুশি হয় নিরুদ্দেশ ব্যক্তির আচম্বিতে ফেরে আসায় তার পরিবারের সদস্যরা । (ইবনু খুযাইমাহ : ৮১৩১) ৯। জামা‘আতে সালাত একাগ্রতা অর্জন ও অন্তর বিগলিত হওয়ার উপকরণ :— কোন মুসলিম যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়, অতঃপর সে মসজিদে আগত মুসল্লিদের আল্লাহর সামনে রুকু-সিজদারত অবস্থায় দেখে। যিকির এবং কুরআন তিলাওয়াত প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর কালাম স্বকর্ণে শোনার সুযোগ পায়। এ সব থেখে সে বুঝতে পারে এ ময়দান আল্লাহ ও তার জান্নাত লাভের উদ্দেশে প্রতিযোগিতার ময়দান। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাকারীরাই আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়। ১০। জামাতের সাথে সালাত আদায় মুসলমানদের মাঝমাঝে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও মহব্বত সৃষ্টি করে :— জামা‘আতে সালাতে আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানগণ দিন ও রাতে পাঁচবার পরস্পর মিলিত হয়। তাদের মাঝে সালাম বিনিময় হয়। একে অপরের খোজ-খবর নেয়। হাসিমুখে একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করে। এ সব বিষয় পারস্পরিক মহব্বত, ভালবাসা এবং একে অপরের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়। ১১। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের নিকট মুসল্লীদের নিয়ে গর্ব করেন :— ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺃﺑﺸﺮﻭﺍ ﻫﺬﺍ ﺭﺑﻜﻢ ﻗﺪ ﻓﺘﺢ ﺑﺎﺑﺎ ﻣﻦ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻳﺒﺎﻫﻲ ﺑﻜﻢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻳﻘﻮﻝ : ﺍﻧﻈﺮﻭﺍ ﺇﻟﻰ ﻋﺒﺎﺩﻱ ﻗﺪ ﻗﻀﻮﺍ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻭﻫﻢ ﻳﻨﺘﻈﺮﻭﻥ ﺃﺧﺮﻯ – ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ : 793 আব্দূল্লাহ বিন ‘আমর রা. থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের প্রভু আসমানের দরজাসমূহের একটি দরজা খুলেছেন। সেখানে তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ আমার বান্দাদেরকে, তারা একটি ফরয আদায় করেছে এবং আরেকটি ফরযের জন্য অপেক্ষা করছে। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ্ : ৭৯৩ ) ১২। এতে অজ্ঞ লোকের জন্য রয়েছে শিক্ষা এবং বিজ্ঞলোকের জন্য রয়েছে উপদেশ :— যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে মসজিদে সালাত আদায় করে, সে সালাতের আহকাম, আরকান, সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়গুলো আহলে ইলম থেকে শিখতে পারে । আহলে ইলমের সালাত দেখে উক্ত ব্যক্তি নিজের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে নেয়। এমনিভাবে ওয়াজ-নসীহত শুনে ভাল কাজে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এতে সে অনেক উপকৃত হয়, যা ঘরে সালাত আদায় করে আদৌ সম্ভব নয়। ১৩। আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত আদায়ে মুগ্ধ হন : কতই না সৌভাগ্য ঐ ব্যক্তির, যার আমল দেখে সৃষ্টিকর্তা মুগ্ধ হন। ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﻌﺠﺐ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﻊ – ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : নিশ্চই আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত আদায় করাতে মুগ্ধ হন। (আহমাদ) ১৪। জামা‘আতে সালাত আদায়ের ছাওয়াব লিখা এবং আসমানে উঠানোর ব্যাপারে ফেরেশতাগণ বির্তক করেন :— ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ : ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺃﺗﺎﻧﻲ ﺍﻟﻠﻴﺔ ﺭﺑﻲ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ﺃﺣﺴﻦ ﺻﻮﺭﺓ ﻗﺎﻝ : ﺃﺣﺴﺒﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺎﻡ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻫﻞ ﺗﺪﺭﻱ ﻓﻴﻢ ﻳﺨﺘﺼﻢ ﺍﻟﻤﻶ ﺍﻷﻋﻠﻰ ؟ ﻗﻠﺖ ﻻ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻮﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺑﻴﻦ ﻛﺘﻔﻲ ﺣﺘﻰ ﻭﺟﺪﺕ ﺑﺮﺩﻫﺎ ﺑﻴﻦ ﺛﺪﻱ ﺃﻭ ﻗﺎﻝ : ﻓﻲ ﻧﺤﺮﻱ ﻓﻌﻠﻤﺖ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻭﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻗﺎﻝ : ﻣﺤﻤﺪ ﻫﻞ ﺗﺪﺭﻱ ﻓﻴﻢ ﻳﺨﺘﺼﻢ ﺍﻟﻤﻶ ﺍﻷﻋﻠﻰ؟ ﻗﻠﺖ ﻧﻌﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭﺍﺕ ﻭﺍﻟﻜﻔﺎﺭﺍﺕ : ﺍﻟﻤﻜﺚ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﻭﺍﻟﻤﺸﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻗﺪﺍﻡ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺎﺕ ﻭﺇﺳﺒﺎﻍ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻜﺎﺭﻩ ﻭﻣﻦ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻋﺎﺵ ﺑﺨﻴﺮ ﻭﻣﺎﺕ ﺑﺨﻴﺮ ﻭﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺧﻄﻴﺌﺔ ﻛﻴﻮﻡ ﻭﻟﺪﺗﻪ ﺃﻣﻪ – ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : 3157 ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একরাতে আল্লাহ তা‘আলা এক জ্যোর্তিময় অবস্থায় আমার নিকট এলেন । তিনি বলেন, সম্ভবতঃ তা নিদ্রায় হবে। এসে বললেন : হে মুহাম্মদ ! ঊর্ধ্বজগতে কি নিয়ে বিতর্ক হয় তুমি জান ? আমি বললাম না। তিনি বলেন : অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তার শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। (অথবা বললেন আমার গলায়) তখন বুঝতে পারলাম আসমান যমীনের মাঝে কি হচ্ছে ? তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ ! তুমি জান উপর আসমানে কি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে ? আমি বললাম : হ্যাঁ, কাফফারা সম্পর্কে। কাফফারা হল সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে জামা‘আতের জন্য গমন করা, কষ্টের সময়েও পুরোপুরি অযু করা। যে ব্যক্তি এটা করবে সে কল্যাণময় জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যু মঙ্গলময় হবে । তার গুনাহগুলো মিটে এমন হবে যেন সে তার মায়ের উদর থেকে আজই জন্মগ্রহণ করল। (তিরমিযী : ৩১৫৭) ১৫। এটা মানুষকে ভাল কাজের প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত করে এবং নফলের প্রতি উৎসাহিত করে :— ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻟﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﻭﺍﻟﺼﻒ ﺍﻷﻭﻝ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺠﺪﻭﺍ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﺴﺘﻬﻤﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻻ ﺳﺘﻬﻤﻮﺍ ﻭﻟﻮ ﻳﻌﻠﻤﻮﻥ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﻬﺠﻴﺮ ﻻ ﺳﺘﻬﻤﻮﺍ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﻟﻮ ﻳﻌﻠﻤﻮﻥ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺘﻤﺔ ﻭﺍﻟﺼﺒﺢ ﻵﺗﻮﻫﻤﺎ ﻭﻟﻮ ﺣﺒﻮﺍ ‏(ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ 580: ‏) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি লোকেরা জানত আযান এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি আছে, আর লটারীর মাধ্যম ছাড়া তা অর্জন করার অন্য কোন পথ না থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই লটারী করত। যদি তারা জানত গরমের সময় ভর দুপুরে মসজিদে যাওয়ার কি ফযীলত, তাহলে অবশ্যই তার জন্যে প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা এশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে কি মর্যাদা আছে জানতে পারত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দু’টি সময়ের সালাতে শামিল হত। (বুখারী ও মুসলিম: ৫৮০) অনুরূপভাবে সালাতের সাথে সালাত আদায় ব্যক্তিকে নফল সালাত আদায়েও অভ্যস্ত করে তুলে। যে ব্যক্তি সালাত কায়েমের পূর্বে মসজিদে আসে, সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের সুযোগ পায়, সুন্নাত পড়ার সুযোগ পায়, কুরআন তিলাওয়াত, দু‘আ ইসতিগফার ইত্যাদির সুযোগ পায়। আর কিছু না করলেও অন্তত সালাতের অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকতে পারে। আর এ সময় ফেরেশতাগণ তার জন্য এই বলে দু‘আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি রহম কর। আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত একিট হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন — ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻣﺎ ﻗﻌﺪ ﻳﻨﺘﻈﺮ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺤﺪﺙ ﺗﺪﻋﻮ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺭﺣﻤﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 1063: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সালাতের জন্য নিজের মসল্লায় অপেক্ষা করতে থাকে, তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য দু‘আ করতে থাকে যতক্ষণ তার অযু ভঙ্গ না হয়। ফেরেশতাগণ বলতে _ আল্লাহ ! তুমি একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ ! তুমি এর উপর রহম কর। (মুসলিম : ১০৬৩)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post