ইসলাম ও মুসলিম: পর্ব- ২

ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দ্বীন। ইসলাম ছাড়া আর কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এর প্রমাণ হলো আল্লাহ পাক তাঁর কিতাব কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেনঃ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼﻡُ ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীম দ্বীন হলো ইসলাম।’ (আল ইমরান, ৩ : ১৯) ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ‘কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (আল ইমরান, ৩ : ৮৫) ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন : ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম। আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণতা দিলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (মায়েদা, ৫ : ৩) সুতরাং যে দ্বীনকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের মাধ্যমে যে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন তার ভিতরে নতুন কিছু সংযোজন করার অধিকার কারও নেই। যদি করা হয় তা হবে বিদআ’ত। আর বিদআ’তের ব্যাপারে রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম বলেছেন, ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ বিদআ’ত সবই গোমরাহী। এ কারণেই হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেনঃ ﻣﻦ ﺍﺑﺘﺪﻉ ﺑﺪﻋﺔ ﻓﻴﺮﺍﻫﺎ ﺣﺴﻨﺔ ﻓﻘﺪ ﺯﻋﻢ ﺍﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﺎﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ﻻﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﻓﻤﺎ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﻮﻣﺌﺬ ﺩﻳﻨﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺩﻳﻨﺎ ‏( ﺍﻻﻋﺘﺼﺎﻡ ) “যে ব্যক্তি কোন বিদআ’ত আবিস্কার করে আবার সেটাকে বিদআ’তে হাসানাহ বা ভালো বিদআ’ত মনে করে সে যেনো দাবী করলো যে, হযরত মুহাম্মদ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম রিসালাতের ভিতরে খিয়ানত করেছেন, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ “আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং যে সব কাজ তখন দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত ছিল না তা বর্তমানেও দ্বীন নয়। পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺩْﺧُﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴِّﻠْﻢِ ﻛَﺎﻓَّﺔً ﻭَﻻ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍ ﺧُﻄُﻮَﺍﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﻋَﺪُﻭٌّ ﻣُﺒِﻴﻦٌ “হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা, ২ : ২০৮) পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গরূপেই গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং কিছু মানবো কিছু মানবো না, এমন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না। ﻭَﻭَﺻَّﻰ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑَﻨِﻴﻪِ ﻭَﻳَﻌْﻘُﻮﺏُ ﻳَﺎ ﺑَﻨِﻲَّ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﺻْﻄَﻔَﻰ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻓَﻼ ﺗَﻤُﻮﺗُﻦَّ ﺇِﻻ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ‏( 132 ) “এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আলøাহ্ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না। (বাকারা, ২ : ১৩২) ﺃَﻓَﺘُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺗَﻜْﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺒَﻌْﺾٍ ﻓَﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀُ ﻣَﻦْ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺇِﻻ ﺧِﺰْﻱٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳُﺮَﺩُّﻭﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺷَﺪِّ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ﻭَﻣَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻐَﺎﻓِﻞٍ ﻋَﻤَّﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ “তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দাংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দাংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শা¯িÍর দিকে পৌঁÍছে দেয়া হবে। আলøাহ্ তোমাদের কাজ-কর্ম স¤পর্কে বে-খবর নন। (বাকারা, ২ : ৮৫) ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻜْﻔُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ ﻭَﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥْ ﻳُﻔَﺮِّﻗُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭُﺳُﻠِﻪِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻧُﺆْﻣِﻦُ ﺑِﺒَﻌْﺾٍ ﻭَﻧَﻜْﻔُﺮُ ﺑِﺒَﻌْﺾٍ ﻭَﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَّﺨِﺬُﻭﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺫَﻟِﻚَ ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ ‏( 150 ‏) ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ ﺣَﻘًّﺎ ﻭَﺃَﻋْﺘَﺪْﻧَﺎ ﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ ‏( 151 “যারা আলøাহ্ ও তার রসূলের প্রতি অ¯¦ীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আলøাহ্ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি কিন্তূ কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবল¤¦ন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব। (নিসা, ৪ : ১৫০-১৫১) ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বা মতবাদ বাতিল বর্তমানে কিছু আধুনিক শিÿিত এবং তথাকথিত পীরদেরকে বলতে শুনা যায় যে, “পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়” যেমন ‘আল্লাহ কোন পথে?’ নামক বইয়ের ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে, পৃঃ ১১৩-১১৪ ও ১২৫-১২৬ এবং ‘মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত’ নামক বইয়ের পঞ্চদশ প্রকাশ : জুলাই -২০০২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২ তে বলা হয়েছে পরকালে মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আবশ্যকতা আছে বলে মনে করি না। বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান যে কোন ধর্মের লোক নিজ নিজ ধর্মে থেকে সাধনা করে মুক্তি পেতে পারে। তাদের এই কথিত ‘তাওহীদে আদইয়ান বা সকল ধর্মের ঐক্য’ এর স্বপÿে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করে থাকে : ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭﺍ ﻭَﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ ﻭَﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺌِﻴﻦَ ﻣَﻦْ ﺁَﻣَﻦَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮِ ﻭَﻋَﻤِﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻓَﻠَﻬُﻢْ ﺃَﺟْﺮُﻫُﻢْ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﻻ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻ ﻫُﻢْ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ অর্থাৎ যারা মু’মিন, যারা ইয়াহুদী, এবং খৃষ্টান ও সাবিঈন- (এদের মধ্যে) যারাই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। (সূরা বাকারা, ২ : ৬২) অথচ এ আয়াতে যে কোন ধর্মের লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ঈমান আনলে এবং নেক কাজ করলে তারা পরকালে মুক্তি পাবে। আর একথা স্পষ্ট যে, ইসলাম ধর্ম আগমনের পর রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে আখেরী নবী না মানলে তার ঈমান পূর্ণ হবে না। আর রাসূল সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে আখেরী নবী মানলে অন্যান্য সব ধর্মের বিধানকে রহিত মানতে হয়। তাহলে অন্য কোন ধর্মে থেকে মুক্তির অবকাশ রইল কোথায়? কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺒْﺘَﻎِ ﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼﻡِ ﺩِﻳﻨًﺎ ﻓَﻠَﻦْ ﻳُﻘْﺒَﻞَ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﺎﺳِﺮِﻳﻦ “যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কসি¥ণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্র¯Í। (আল ইমরান, ৩ : ৮৫) ﺃَﻓَﻐَﻴْﺮَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ “তারা কি আল্লাহদ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে ¯ে¦চছায় হোক বা অনিচছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (আল ইমরান, ৩ : ৮৩) অমুসলিমরা ইসলাম না গ্রহণ করে যত ভাল কাজই করুক না কেন, পরকালে তারা মুক্তি পাবে না। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে : ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻬُﻢْ ﻛَﺴَﺮَﺍﺏٍ ﺑِﻘِﻴﻌَﺔٍ ﻳَﺤْﺴَﺒُﻪُ ﺍﻟﻈَّﻤْﺂَﻥُ ﻣَﺎﺀً ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪْﻩُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻭَﺟَﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻓَﻮَﻓَّﺎﻩُ ﺣِﺴَﺎﺑَﻪُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﺮِﻳﻊُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏِ ‏( 39 ‏) ﺃَﻭْ ﻛَﻈُﻠُﻤَﺎﺕٍ ﻓِﻲ ﺑَﺤْﺮٍ ﻟُﺠِّﻲٍّ ﻳَﻐْﺸَﺎﻩُ ﻣَﻮْﺝٌ ﻣِﻦْ ﻓَﻮْﻗِﻪِ ﻣَﻮْﺝٌ ﻣِﻦْ ﻓَﻮْﻗِﻪِ ﺳَﺤَﺎﺏٌ ﻇُﻠُﻤَﺎﺕٌ ﺑَﻌْﻀُﻬَﺎ ﻓَﻮْﻕَ ﺑَﻌْﺾٍ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺧْﺮَﺝَ ﻳَﺪَﻩُ ﻟَﻢْ ﻳَﻜَﺪْ ﻳَﺮَﺍﻫَﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺠْﻌَﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻓَﻤَﺎ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧُﻮﺭٍ অর্থাৎ যারা কাফের, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকা সমতুল্য, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। কিন্তু সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অত:পর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রæত হিসাব গ্রহণকারী। অথবা (তাদের আমলসমূহ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতি নেই। (সূরা আন-নূর, ২৪ : ৩৯-৪০) এর জ্বলন্ত প্রমাণ আবু তালেব। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)- এর আপন চাচা। হযরত আলী (রাঃ) এর আব্বাজান। যিনি সারা জীবন রাসূল (সাঃ) কে ভাতিজা হিসাবে দেখা- শুনা করেছেন, সাহায্য-সহযোগীতা করেছেন। এমনকি তিন বৎসর পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মৃত্যুর পরেও তার জন্য দোয়া করতে থাকলেন, ফলে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করে দিলেন : ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﻟِﻠْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﺃُﻭﻟِﻲ ﻗُﺮْﺑَﻰ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻬُﻢْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢِ “নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আতœীয় হোক একথা সু¯পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী। (তাওবা, ৯ : ১১৩) আরো বলা হলো : ﺇِﻧَّﻚَ ﻻ ﺗَﻬْﺪِﻱ ﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺖَ ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺎﻟْﻤُﻬْﺘَﺪِﻳﻦَ “আপনি যাকে পছন্তদ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আলøাহ্ তা’আলাই যাকে ইচছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে স¤পর্কে তিনিই ভাল জানেন। (কাসাস, ২৮ : ৫৬) এ বিষয়টি হাদীস শরীফে আরো স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে : ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﻴﻦ ﺍﻧﺎﻩ ﻋﻤﺮ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻧﺎ ﻧﺴﻤﻊ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﻣﻦ ﻳﻬﻮﺩ ﺗﻌﺠﺒﻨﺎ، ﺃﻓﺘﺮﻯ ﺃﻥ ﻧﻜﺘﺐ ﺑﻌﻀﻬﺎ؟ ﻓﻘﺎﻝ : )) ﺃﻣﺘﻬﻮﻛﻮﻥ ﺃﻧﺘﻢ ﻛﻤﺎ ﺗﻬﻮّﻛﺖ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ؟ ! ﻟﻘﺪ ﺟﺌﺘﻜﻢ ﺑﻬﺎ ﺑﻴﻀﺎﺀ ﻧﻘﻴّﺔ، ﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﻣﻮﺳﻰ ﺣﻴﺎ ﻣﺎ ﻭﺳﻌﻪ ﺇﻻ ﺍﺗﺒﺎﻋﻰ (( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻓﻰ ﻛﺘﺎﺏ )) ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ )) হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত উমার (রাঃ) একবার আল্লাহর রাসূলের কাছে এসে বললেনঃ (ইয়া রাসূলালøাহ) আমরা ইহুদীদের কাছে এমন কিছু কথা-বার্তা শুনতে পায়, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে, আমরা তাদের (তাওরাতের) কিছু কথা লিখে রাখবো? আল্লাহর (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি বিভ্রান্তির মধ্যে আছো?! যেমনিভাবে বিভ্রান্তিতে আছে ইয়াহুদী এবং খৃষ্টানরা। নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার (একটি দ্বীন), যদি হযরত মুসা (আঃ) (তাওরাত যার উপর নাজিল হয়েছে) তিনি জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ، ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ، ﺃﺗﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻨﺴﺨﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻮﺭﺍﺓ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻫﺬﻩ ﻧﺴﺨﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻮﺭﺍﺓ، ﻓﺴﻜﺖ ﻓﺠﻌﻞ ﻳﻘﺮﺃ ﻭ ﻭﺟﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺘﻐﻴﺮ . ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ : ﺛﻜﻠﺘﻚ ﺍﻟﺜﻮﺍﻛﻞ! ﻣﺎ ﺗﺮﻯ ﻣﺎ ﺑﻮﺟﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ! ﻓﻨﻈﺮ ﻋﻤﺮ ﺇﻟﻰ ﻭﺟﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﻋﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻏﻀﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻏﻀﺐ ﺭﺳﻮﻟﻪ، ﺭﺿﻴﻨﺎ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺭﺑّﺎ، ﻭﺑﺎﻻﺳﻼﻡ ﺩﻳﻨﺎ، ﻭﺑﻤﺤﻤﺪ ﻧﺒﻴﺎ . ﻓﻘﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : )) ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻧﻔﺴﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻴﺪﻩ، ﻟﻮ ﺑﺪﺍ ﻟﻜﻢ ﻣﻮﺳﻰ ﻓﺎﺗﺒﻌﺘﻤﻮﻩ ﻭﺗﺮﻛﺘﻤﻮﻧﻰ ﻟﻀﻠﻠﺘﻢ ﻋﻦ ﺳﻮﺍﺀ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ، ﻭﻟﻮ ﻛﺎﻥ ﺣﻴّﺎ ﻭﺃﺩﺭﻙ ﻧﺒﻮﺗﻰ ﻻﺗﺒﻌﻨﻰ .(( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻰ হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুলøাহ সালøঅলøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম এর নিকট তাওরাত লিখিত একখন্ড কাগজ নিয়ে আসলেন। অতঃপর বললেনঃ ইয়া রাসূলুলøাহ! এটা তাওরাতের থেকে লিখিত একখন্ড বাণী। অতপরঃ রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম চুপ থাকলেন এবং উমার (রাঃ) তা পড়তে আরম্ভ করলেন, তার পড়া শুনে রাসূলূলøাহ এর চেহারা পরিবর্তন হতে লাগল। অতপরঃ আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হে ওমর! তুমি সড়ে যাও (চুপ হয়ে যাও), তুমি কি রাসুলুলøাহ সালøালøাম এর চেহারার অবস্থা দেখতে পাচ্ছনা? অতপরঃ উমার (রাঃ) রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম এর চেহারার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি থেকে পানাহ চাচ্ছি। তিনি আরো বললেনঃ আমরা আল্লাহকে রাব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। অতপরঃ রাসূল সালøালøাহু বললেনঃ সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! যদি তোমরা মুসা (আঃ) কে পেতে অতপরঃ তার অনুসরণ করতে ও আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে সঠিক পথ বা দ্বীন থেকে দুরে চলে যেতে (পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে)। যেনে রাখ! যদি মুসা (আঃ) ও জীবিত থাকত এবং আমাকে পেত; তবে আমার অনুসরণ করতো। (দারেমী, মেশকাত বা: এ’তেছাম) মেশকাত শরীফের আরো একটি হাদীসে আছে, রাসূলুলøাহ সালøালøাহু আলাইহি ওয়া সালøাম বলেনঃ “সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এই উম্মাতে ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্য হতে কেউ যদি আমার কথা জানে-শুনে এবং আমি যা কিছু সহ প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান না আনে, তাহলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।” (মেশকাত-মুসলিম)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post