ইসলাম ও মুসলিম: পর্ব- ১

ইসলাম ‘ইসলাম’ একটি আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, কারো কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পণ করা। শরীয়তের পরিভাষায় ‘ইসলাম’ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দ্বীনের নাম। যা আমাদের রাসূল (সাঃ) মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। অনেকে বলেন ইসলাম অর্থ ‘শান্তি’ কিন্তু এ কথাটি সঠিক নয়। ﺳَﻠْﻢ (সাল্ম) ও ﺳﻼﻡ (সালাম) অর্থ শান্তি। অনেক মুসলমান অজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলাম মানে শান্তি বলে। ইংরেজরা যখন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে, তখন তৎকালীন ইংরেজ গভর্ণর ড. ম্যাকলিকে মাদ্রাসার সিলেবাস তৈরী করার দায়িত্ব দেয়। এই সুযোগে তারা ইসলামের অনেক মৌলিক পরিভাষা; যেমন ইসলাম, ইলাহ, রব, তাওহীদ, শিরক, তাগুত, জিহাদ ইত্যাদি পরিবর্তন করে। তন্মধ্যে ইসলামের জিহাদ তথা বাতিলের সাথে ইসলামের অনিবার্য দ্বন্দ ও সংঘাতকে এড়ানো জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের অর্থ শান্তি করে থাকে। অথচ বিখ্যাত আভিধানিক ‘হান্সভে’ (যিনি একজন খ্রিষ্টান) তার বিখ্যাত আরবী- ইংরেজী অভিধানে ﺍﺳﻼﻡ (ইসলামের) অর্থ করেছেঃ Submission, resignation to the will of God. ইসলামের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে – আল্লাহর ইচ্ছার কাছে বশ্যতা স্বীকার করা ও পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা (A Dictionary of Modern Written Arabic)। তবে এ কথা ঠিক যে ইসলাম মানলে অবশ্যই শান্তি আসবে। দুনিয়াতে সুখ ও শান্তি লাভ করা যাবে। আর আখেরাতেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের চিরস্থায়ী শান্তি ভোগ করা যাবে। মুসলিম ‘মুসলিম’ হলো যিনি আলøাহর আদেশ মেনে চলে এবং তাঁর আদেশ লংঘন করে না। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ ﻣِﻠَّﺔَ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻫُﻮَ ﺳَﻤَّﺎﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ “… তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। (হজ্জ, ২২: ৭৮) ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺑُّﻪُ ﺃَﺳْﻠِﻢْ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻟِﺮَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ “স্বরণ কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেন: অনুগত হও। সে বলল: আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। (বাকারা, ২ : ১৩১) ﺃَﻓَﻐَﻴْﺮَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ “তারা কি আল্লাহ দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (আল ইমরান, ৩ ঃ ৮৩) ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺴْﻠِﻢْ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﺤْﺴِﻦٌ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺳْﺘَﻤْﺴَﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌُﺮْﻭَﺓِ ﺍﻟْﻮُﺛْﻘَﻰ “যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে। (লোকমান, ৩১ : ২২) ﻗُﻞْ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﻣِﺮْﺕُ ﺃَﻥْ ﺃَﻛُﻮﻥَ ﺃَﻭَّﻝَ ﻣَﻦْ ﺃَﺳْﻠَﻢَ “আপনি বলে দিন: আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, সর্বাগ্রে আমিই আজ্ঞাবহ হব। (আনআম, ৬ : ১৪) ﻓَﺈِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺳْﻠِﻤُﻮﺍ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﺍﻟْﻤُﺨْﺒِﺘِﻴﻦَ “অতএব তোমাদের আল্লাহ্ তো একমাত্র আল্লাহ্ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও। (হজ্জ, ২২ : ৩৪) ﻭَﺃَﻧِﻴﺒُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺑِّﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺳْﻠِﻤُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞِ ﺃَﻥْ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻜُﻢُ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ “তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূবে। (যুমার, ৩৯ : ৫৪) আল্লাহ তা’আলার আদেশ দুই প্রকারঃ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসলিম বলা হয় ‘যে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, আল্লাহর আদেশ দুই প্রকারঃ (ক) তাকভিনী (সৃষ্টিগত) (খ) তাশরিয়ী (শরীয়ত গত) আদেশ। ১. তাকভিনী (সৃষ্টিগত)ঃ বাধ্যতামূলকভাবে আদেশ নিষেধ পালন করাই হলো তাকভিনী (সৃষ্টিগত) ইসলাম। যেমন সূর্যের প্রতি আল্লাহর আদেশ হচ্ছে উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া, আলো ও উষ্ণতা দেয়া ইত্যাদি। সূর্যের শক্তি নেই এই আদেশ অস্বিকার করার। সেরূপে বায়ুর প্রতি আদেশ প্রাণী জগতকে জীবিত রাখা। পানির প্রতি আদেশ তৃষ্ণার্তকে পানি দিবে। এরূপ মানুষের প্রতি সৃষ্টিগত আদেশ হলো জিহ্ববা কথা বলবে, কান কথা শুনবে, চোখ দেখবে। মানুষের ক্ষমতা নেই জিহ্ববা দ্বারা দেখার বা কান দিয়ে কথা বলার অর্থাৎ এই আদেশ লংঘন করার। আর এটাই হলো তাকভিনী (সৃষ্টিগত) ইসলাম। ২. তাশরিয়ী (শরীয়তগত) : যে সব আদেশ নিষেধ যা পালনের জন্মগত বা সৃষ্টিগত কোন বাধ্যবাধকাত নেই তাই হচ্ছে তাশরিয়ী আহাকম। যা স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। যেমন মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করবে না অন্য কারো ইবাদাত করবে তা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। শুধুমাত্র মানুষ ও জ্বীনকে এই ধরনের স্বাধীনতা আলøাহ তা’আলা দান করেছেন। সুতরাং আনুগত্য করার নাম হলো ইসলাম। ইসলাম ও মুসলিম হবার বিষয়টি শুধুমাত্র মানুষ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম কোন এক বিশেষ সৃষ্টির নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের দ্বীন হলো ইসলাম। সূর্য, চন্দ্র, সবই আল্লাহর আহকাম পুরোপুরি মেনে চলে। অতএব সূর্য সেও মুসলিম, চন্দ্র সেও মুসলিম। তারকারাজি, বায়ু, পানি সবাই মুসলিম। ﺃَﻓَﻐَﻴْﺮَ ﺩِﻳﻦِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ “(সত্য অস্বীকারকারীর দল কি) আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীনের অনুসন্ধান করে? অথচ আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে তারা সকলেই আল্লাহর দ্বীনের অনুগত।” (সূরা আলে ইমরান : ৮৩) অতএব জ্বীন ও মানুষ ব্যতীত সব সৃষ্টি আল্লাহর মুসলিম (আনুগত্য) তাদের সকলের দ্বীন হলো ইসলাম। ﺗُﺴَﺒِّﺢُ ﻟَﻪُ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕُ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊُ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽُ ﻭَﻣَﻦْ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻻ ﻳُﺴَﺒِّﺢُ ﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻻ ﺗَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ ﺗَﺴْﺒِﻴﺤَﻬُﻢْ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻠِﻴﻤًﺎ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ “সাত আসমান পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তাআলার তাসবীহ পাঠ করে। এ সৃষ্টিজগতে এমন কোন বস্তু নেই যা তাঁর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ও মহত্ত¡ বর্ণনা করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তসবীহ (পবিত্রতা ও মহত্ত ¡ বর্ণনা) বুঝতে পারোনা।” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৪৪) ﻭَﻟِﻠَّﻪِ ﻳَﺴْﺠُﺪُ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻩً “আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচছায় অথবা অনিচছায়। (রা’দ, ১৩ : ১৫) ﺛُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﻫِﻲَ ﺩُﺧَﺎﻥٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﻭَﻟِﻠْﺄَﺭْﺽِ ﺍِﺋْﺘِﻴَﺎ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﺃَﻭْ ﻛَﺮْﻫًﺎ ﻗَﺎﻟَﺘَﺎ ﺃَﺗَﻴْﻨَﺎ ﻃَﺎﺋِﻌِﻴﻦَ “অত:পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অত:পর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচছায় অথবা অনিচছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১১) ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﺮَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺴْﺠُﺪُ ﻟَﻪُ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮُ ﻭَﺍﻟﻨُّﺠُﻮﻡُ ﻭَﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝُ ﻭَﺍﻟﺸَّﺠَﺮُ ﻭَﺍﻟﺪَّﻭَﺍﺏُّ ﻭَﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ “তোমরা কি লক্ষয করনি যে, বস্তুত : আল্লাহই এক সত্তা যাকে সেজদা করে সকলেই, যারা আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে এবং সেজদা করে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি, চতুষ্পদ জন্তু ও বহুসংখ্যক মানুষ। (হজ্জ, ২২ : ১৮) [সেজদা করার প্রকৃত মর্ম, তাদের প্রতি আল্লাহর আরোপিত আইন, কানুন, বিধি, ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেনে চলা।] আবার অনেক সময় একই সাথে উপরোক্ত দু’ ধরনের আহকামের উপস্থিতি দেখা দেয়। যেমনঃ (মানুষের ÿেত্রে) মানুষ চোখ দ্বারা দেখবে কিন্তু কোন নিষিদ্ধ বিষয় বা কাজ দেখবে না, আবার কান দ্বারা শুনবে কিন্তু নিষিদ্ধ কথা শুনবে না। এখানে দেখা যাচ্ছে প্রথম অংশটি তাকভিনী যা বাধ্যতামূলক এবং পরের অংশটি তাশরিয়ী (শরীয়তগত) যা মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এখন আসল কথা হলো যারা আহকামে এলাহী মানে না তাদের জন্য “মুসলিম” শব্দটি ব্যবহার করা চলবে না। অথচ তারা তাকভিনী (সৃষ্টিগত) আহকাম মেনে চলছে। সকল নবীর দ্বীন ছিল ‘ইসলাম’ এবং সকল উম্মতের পরিচয় ছিল ‘মুসলিম’ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳًّﺎ ﻭَﻻ ﻧَﺼْﺮَﺍﻧِﻴًّﺎ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻨِﻴﻔًﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ “ইব্রাহীম না ছিলেন ইয়াহুদ আর না ছিলেন নাসারা (খৃষ্ঠান)। বরং সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহর একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন তিনি। (আল ইমরান, ৩ : ৬৭) ﻓَﺈِﻣَّﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴَﻨَّﻜُﻢْ ﻣِﻨِّﻲ ﻫُﺪًﻯ ﻓَﻤَﻦْ ﺗَﺒِﻊَ ﻫُﺪَﺍﻱَ ﻓَﻼ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻ ﻫُﻢْ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ ‏( 38 ‏) ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻭَﻛَﺬَّﺑُﻮﺍ ﺑِﺂَﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ “অতপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত পৌঁছে তাহলে যে আমার হেদায়াত মেনে চলবে তার জন্য চিন্তার কোন কারণ থাকবে না এবং সে আশংকিত ও ব্যথিত হবে না। যে হেদায়েত অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিবে সে হবে দোযখের অধিবাসী। (সূরা বাকারা, ২ : ৩৮, ৩৯) ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎﻙَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﺑَﺸِﻴﺮًﺍ ﻭَﻧَﺬِﻳﺮًﺍ ﻭَﺇِﻥْ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺇِﻻ ﺧَﻼ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻧَﺬِﻳﺮٌ “এমন কোন জাতি ছিল না যাদের কাছে কোন সাবধানকারী (নবী) আসেনি।” (সূরা ফাতের, ৩৫ : ২৪) উপরের এ দুটি আয়াত একথারই সুস্পষ্ট ঘোষণা করে যে, এ দুনিয়ার মানুষের বসবাস এবং শরীয়তের আহকাম একত্রেই শুরু হয়েছে। সেই আদিকাল থেকে মানবজগত কখনো ‘দ্বীন’ ও ‘শরীয়ত’ শূন্য হয়ে পড়েনি। এমন জাতি নেই যে, আল্লাহ তা‘আলার হেদায়েত থেকে বঞ্চিত ও অনবহিত রয়েছে। এটা এ জন্য যে, মানুষ ছিল একটা স্বাধীন এখতিয়ার সম্পন্ন সৃষ্টি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং তার বংশধর হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইউসুফ (আঃ) প্রমুখ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺑُّﻪُ ﺃَﺳْﻠِﻢْ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺳْﻠَﻤْﺖُ ﻟِﺮَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ‏( 131 ‏) ﻭَﻭَﺻَّﻰ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑَﻨِﻴﻪِ ﻭَﻳَﻌْﻘُﻮﺏُ ﻳَﺎ ﺑَﻨِﻲَّ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﺻْﻄَﻔَﻰ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟﺪِّﻳﻦَ ﻓَﻼ ﺗَﻤُﻮﺗُﻦَّ ﺇِﻻ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ‏( 132 ‏) ﺃَﻡْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﺇِﺫْ ﺣَﻀَﺮَ ﻳَﻌْﻘُﻮﺏَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﺒَﻨِﻴﻪِ ﻣَﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻱ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﺇِﻟَﻬَﻚَ ﻭَﺇِﻟَﻪَ ﺁَﺑَﺎﺋِﻚَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻭَﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞَ ﻭَﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻟَﻪُ ﻣُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ “স্মরণ কর, সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীমকে তাঁর প্রভু বলেছিলেন ‘মুসলিম হও অর্থাৎ আমার অনুগত হয়ে যাও।” তখন তার জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘আমি জগতসমূহের প্রভুর মুসলিম অর্থাৎ অনুগত হয়ে গেলাম। অতঃপর এ বিষয়ে অসিয়ত করলেন ইব্রাহীম তার পুত্রদেরকে এবং ইয়াকুব তাঁর পুত্রদেরকে এই বলে, হে আমার সন্তানগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এই বিশেষ দ্বীনটি পছন্দ করেছেন। অতএব জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমরা মুসলিম হয়ে থেকো। .. .. তারা বললোঃ আমরা আপনার ইলাহর বন্দেগী করব এবং আমরা তাঁরই মুসলিম (অনুগত) হয়ে থাকবো।” (বাকারা, ২ : ১৩১-১৩৩) কোরআন পাকে এ ধরনের বিশেøষণ হয়রত লূত (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত সুলায়মান (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) প্রমুখ নবীগণের সম্পর্কেও দেয়া হয়েছে। অতপর সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, তাঁরা এবং তাদের অনুসারীগণ সকলেই ছিলেন ‘মুসলিম’ এবং সকলেরই দ্বীন ছিল ইসলাম।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post