আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীজিকে কোরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেন―‘হে বস্ত্রাবৃত! রাত জাগরণ করুন, কিছু অংশ ছাড়া। অর্ধরাত কিংবা তার চেয়ে অল্প অথবা তার চেয়ে বেশি। আর কোরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে, সুস্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে।’ (সুরা মুজাম্মিল : ১-৪)নবীজি এমনিতেই খুব বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আর মাহে রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের পরিমাণটা আরও বেড়ে যেতো। তিনি রমজানে দৈনিক হজরত জিবরীল আমিনের সঙ্গে কোরআন দাউর করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জিব্রাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলের (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ফজর অবধি তাঁর সঙ্গে অবস্থান করতেন।’ (বুখারি : হাদিস ১৯০২)।
তাই মাযহাবের চার ইমামও মাহে রমজানে এলে সমস্ত কাজ থেকে অবসর নিয়ে কোরআন তেলাওয়াত নিমগ্ন হয়ে যেতেন। অন্যান্য কিতাবের মুতাআল রেখে কোরআন নিয়েই পড়ে থাকতেন।
আর এ কথা তো প্রসিদ্ধ যে, ইমাম মালেক (রহ.) রমজান মাসে হাদিস, ফিকাহ ও অন্যান্য বই বন্ধ করে দিতেন এবং শুধু কোরআন নিয়ে মগ্ন হতেন। একইভাবে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) রমজানে ৬০ বার কোরআন খতম করতেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ: ১৭১)
আবু বকর ইবনুল হাদ্দাদ (রহ.) বলেন―আমি এ কথা শুনে আশ্চর্য বোধ করলাম আবার মুগ্ধও হলাম যে ইমাম শাফিয়ি (রহ.) রমজানে নামাজের ভেতরের তেলাওয়াত ছাড়াও ৬০ বার কোরআন খতম করতেন। আমিও চেষ্টা করেছিলাম। তবে সর্বোচ্চ ৫৯ বার খতম করতে সক্ষম হয়েছি। আর রমজান ছাড়া অন্য মাসে ৩০ খতম করেছি। (তারিখে বাগদাদ, খতিব বাগদাদি : ১৩/৩৫৭)।
ইমাম বুখারি (রহ.) রমজান মাসে প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১১/১৩৪)
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহ.) বলেন, তিন দিনের কমে কোরআন খতমের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা সাধারণ সময়ের জন্য। মর্যাদাপূর্ণ সময়, যেমন রমজান মাস অথবা মর্যাদাপূর্ণ স্থান যেমন মক্কা মুকাররমা, সময় ও স্থানের বিশেষ বরকত লাভের উদ্দেশ্যে এ সময়ে বা স্থানে অধিকহারে কোরআন তেলাওয়াত করতে সমস্যা নেই। এটাই ইমাম আহমদসহ অধিকাংশ ইমামের অভিমত। (লাতায়িফুল মাআরিফ: ১৭১)
মাহে রমজানে আমাদের বেশি-বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। কোরআনের মাস। কোরআন নাজিলের মাসে কোরআন নিয়ে ব্যস্ততম সময় পার চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কবুল করেন। আমিন।
লেখক:মুহাম্মাদ মিযানুর রহমান
মুহাদ্দিস জামিয়া ইসলামিয়া নুরুল উলুম পান্থশালা, নরসিংদী।
সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন
প্রকাশ:২৪ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫৭