মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার শিষ্টাচার

ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে তাদের আনুগত্যের পাশাপাশি সব সময় বিনম্র ভাষায় কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার রব আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে, তাদের একজন বা উভয়ে আপনার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ শব্দও বোলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না, তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বোলো। মমতাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে তাদের প্রতি বিনয়ী হও এবং বোলো, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া কোরো যেভাবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশনার পর মা-বাবার বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচারের কথা বলেছেন। নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

মা-বাবার সঙ্গে সদাচার : মা-বাবার সঙ্গে সদাচার উত্তম আমলগুলোর অন্যতম। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয়। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছি, কোন কাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়? তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে নামাজ পড়া।’ বলা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘অতঃপর মা-বাবার সঙ্গে সদাচার।’ বলা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ তিনি আমাকে এই কয়েকটি বিষয় বলেছেন। আমি আরো জিজ্ঞাসা করলে তিনি আরো বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫২৭)

জীবন-জীবিকায় বরকত : আত্মীয়দের সুসম্পর্ক রাখার মাধ্যমে জীবন-জীবিকায় বরকত বৃদ্ধি পায়। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক বা তার আয়ু বৃদ্ধি পাক সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)

অন্য হাদিসে সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়াকে সন্দেহাতীতভাবে কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য বাবা (ও মায়ের) দোয়া।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৯)

অমুসলিম মা-বাবার সঙ্গে সদাচার : অমুসলিম মা-বাবার সঙ্গেও সদাচারের কথা বলা হয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার মা-বাবা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার করতে যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না, তবে দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে ন্যায়সংগতভাবে বসবাস কোরো...।’ (সুরা লোকমান, আয়াত :  ১৪-১৫)

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, কুরাইশদের সময়ে মুশরিক অবস্থায় আমার মা আমার কাছে আসতেন। তখন তিনি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা আমার কাছে আসেন। আমি কি তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখো।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০০৩)

সন্তানের জন্য হুঁশিয়ারি : মা-বাবার সন্তুষ্টিতে ইহকাল ও পরকালীন সাফল্য রয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারীদের জন্য হুঁশিয়ারি রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কোন ব্যক্তি? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি বাবা ও মায়ের উভয়কে বা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫১)


(লেখা ও ছবি সংগৃহীত )

সুত্র: কালের কন্ঠ

প্রকাশ:২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ 

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post