হজরত আব্বাস ইবনে
আবদুল মোত্তালিব
(রা.) হতে বর্ণিত,
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি
আল্লাহতায়ালাকে রব,
ইসলামকে জীবনবিধান
ও মুহাম্মদ (সা.)-কে
রাসুল হিসেবে শুধু
ঈমান আনেনি বরং
মনেপ্রাণে গ্রহণ
করেছেন ও সন্তুষ্ট
হয়েছেন, তিনি
ঈমানের প্রকৃত স্বাদ
পেয়েছেন।’ –সহিহ
বোখারি
ঈমানের প্রকৃত স্বাদের
ব্যাখ্যা
ইসলামের বিশাল
প্রাসাদ ঈমানের
বুনিয়াদের ওপর এভাবে
দাঁড়িয়ে আছে, বিশাল
বটবৃক্ষ যেমন তার মূল ও
শিকড়ের ওপর
দণ্ডায়মান। ইসলামের
বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা
তথা যাবতীয়
কর্মকাণ্ডকে এক
পাল্লায় রাখলে যে
ওজন ও মূল্য বহন করে,
ঈমান একাই সব কিছুর
চেয়ে বেশি ভারী ও
বেশি মূল্য বহন করে। এই
ঈমান গ্রহণকারী একজন
কৃতদাস ও তার
আল্লাহর নিকট সমগ্র
পৃথিবী বিখ্যাত
কোনো রাজা-
মহারাজা সম্পদের
মালিকের চেয়ে অনেক
বেশি মূল্যবান। যে
ঈমানই একজন কাফের
জাহান্নামীকে
জান্নাতের অন্তর্ভুক্ত
করবে। একজন ব্যক্তির
চূড়ান্ত সফলতা ও
বিফলতা প্রকৃতপক্ষে
ঈমানের ওপর ফয়সালা
হয়।
আল্লাহতায়ালার
নিকট থেকে আসা সকল
অহি ও কিতাবের মূল
প্রতিপাদ্য বিষয়
ছিলোড়- ঈমান। এ
ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত
না হলে, ব্যক্তির
কোনো নেক আমলের
মূল্য নেই। এ ঈমানই
ব্যক্তিকে
আল্লাহতালার
প্রিয়জন বানায়। তার
জীবনের নিরাপত্তা
সম্মান আল্লাহর
জিম্মায় থাকে।
একজন মুমিনের ঈমানের
অবস্থান কোন পর্যায়ে
রয়েছে, এ হাদিস তা
বুঝার এক মানদণ্ড। যে
মুমিন সত্যিকারার্থে
ঈমান এনেছে, গোটা
পৃথিবীর সবকিছু
ঈমানের মোকাবেলায়
তার কাছে একটি
পাখির ঝরা পালকের
চেয়ে কমমূল্য বহন করে।
আর ঈমান থেকে চ্যুত
করার সমস্ত অত্যাচার
ও জুলুম এবং নিপীড়নের
তাবৎ হাতিয়ার তার
নিকট এমন সাধারণ ও
মামুলি বিষয় যেন
লোহার কঠিন দণ্ডের
ওপর মাছির ব্যর্থ
আক্রমণ। এমন সুস্থ ও
নিরোগ ঈমান শুধু
কতগুলো কথা
উচ্চারণের মাধ্যমে
অর্জন সম্ভব নয়, নয়
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া
অজ্ঞদের ঈমানের
মিথ্যা আস্ফালনে।
কোরআনে কারিমে
বলা হয়েছে, তারাই
মুমিন, সত্যিকারার্থে
তারাই মুমিন যারা
আল্লাহ ও রাসুলের ওপর
ঈমান এনেছে এবং
তাতে কোনো প্রকার
সন্দেহ করেনি আর
সংগ্রাম করেছে জান ও
মাল দিয়ে।’ -সুরা
হুজরাত : ১৫
সত্যিকার মুমিনদেরকে
ঈমানের অমৃত স্বাদ
পেতে হলে হাদিসে
রাসুলের তিনটি শর্ত
প্রণিধানযোগ্য-
এক. আল্লাহর
রবুবিয়াতের ওপর অটল
আস্থা ও তাতে সন্তুষ্ট
হওয়া।
দুই. দ্বীন হিসেবে
ইসলামকে জীবনের
প্রতিটি ক্ষেত্রে
মেনে চলার দৃঢ়
অঙ্গীকার ঘোষণা করা
এবং সমস্ত পৃথিবীর
চাকচিক্যপূর্ণ মিথ্যা ও
মানবগড়া সকল মত ও পথ
থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে
নেয়। মুহাম্মদ (সা.)-এর
রেসালাতের সাক্ষ্য
দান ও সমস্ত মহান
ব্যক্তি এমনকি পূর্বের
নবীদেরকে ও তার
মোকাবেলায় পেশ
করার সুযোগ নেই বরং
তা হবে ধৃষ্টতার
নামান্তর।
তিন. জীবনের প্রতিটি
কদমে তার সুন্নতকে
এভাবে আঁকড়ে ধরতে
হবে, জন্মান্ধ যেমন
করে চক্ষুষ্মানের লাঠি
শক্তহাতে ধরে পথ
চলে।