ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে ফরজ নাকি সুন্নত?

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম, পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে রয়েছে বিষদ বর্ণনা। সাধারণত বিয়েকে ইসলাম উৎসাহিত করে তথাপি অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতার উপর ভিত্তি করে এটি কোন কোন ব্যক্তির জন্য ফরজ হয়, কারও জন্য মুস্তাহাব, কারও জন্য শুধুই হালাল এমনকি কারও কারও জন্য হারামও হয়ে থাকে।

বিয়ে বা নিকাহ করা সুন্নত। কেহ বলেন মুস্তাহাব। তবে অবস্থা ভেদে বা শ্রেণিভেদে বিবাহ চার প্রকার। যথা- ১. ফরজ বা বাধ্যতামূলক ২. মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় ৩. হালাল বা বৈধ ৪. হারাম বা নিষিদ্ধ।

বিবাহ তখনই ফরজ বা বাধ্যতামূলক হয় যখন একজন ব্যক্তি (নারী ও পুরুষ) তীব্র যৌন চাহিদা অনুভব করে এবং তার দ্বারা ব্যভিচার ঘটে যাবার আশংকা থাকে। যেহেতু ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা ফরজ এবং বিবাহই একমাত্র এই চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা, সেহেতু ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ ফরজ। এক্ষেত্রে ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতিটি হলো, “যদি একটি ফরজ কাজ অন্য একটি কাজ ব্যতীত আদায় সম্ভব না হয় তবে ঐ সহায়ক কাজটিও মূল ফরজের মতোই ফরজ হিসেবে গণ্য হবে।” যদি কোন ব্যক্তির যৌন চাহিদা খুব তীব্র না হয় এবং তার দ্বারা ব্যভিচার সংঘটিত হবার সম্ভাবনা না থাকে কিন্তু বিবাহ করার সবরকম সামর্থ্য ও সুযোগ তার থাকে এমতাবস্থায় বিবাহ তার জন্য মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় কাজ। কারণ এটির দ্বারা সে রাসূল (স.) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতকে অনুসরণ করছে। একজন ব্যক্তির বিবাহ করার মতো ন্যূনতম অর্থনৈতিক সামর্থ্য যদি না থাকে (মোহরানা আদায় ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর জন্য ফরজ) এবং এভাবে সে যদি বিবাহের দায়িত্বসমূহ পালনে অসমর্থ হয় কিন্তু বিবাহের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে, সেক্ষেত্রে বিবাহ করা তার জন্য হালাল (Permitted) এই শর্তে যে- সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সৎপন্থায় উপার্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং ভাবী স্ত্রীকে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দান করবে।

সত্য গোপন করা প্রেম প্রতারণার সামিল। আল্লাহ এরূপ অভাবী ব্যক্তিকে সাহায্য করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হলো ঐ ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল হবার পূর্ব পর্যন্ত সাহায্য করা। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে ব্যক্তিটি সৎভাবে উপার্জনের কোন পথই পাচ্ছে না এবং বৈবাহিক দায়িত্ব (অর্থনৈতিক) পালনের কোন উপায়ই তার সম্মুখে খোলা নেই, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে রোযা ও অন্যান্য সংযম সাধনের (Acts of sublimation) মাধ্যমে নিজেকে দমনের চেষ্টা চালাতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি মনে করে যে তার দ্বারা বিবাহের আবশ্যক (ফরজ) দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা সম্ভবপর নয় এবং তার ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সম্ভাবনাও নেই, তখন ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ হারাম বা নিষিদ্ধ।

শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, "একজন দ্বীনহীন মহিলা বা পুরুষের সাথে জীবন-যাপন করার চেয়ে, একজন বিষধর সাপের সাথে থাকা উত্তম। তাতে হয়তো সাপ তোমার ইহকালীন জীবন ধ্বংস করে দিবে, কিন্তু দ্বীনহীন মহিলা বা পুরুষ তো তোমার ইহকালীন এবং পরকালীন উভয় জীবনকেই ধ্বংস করে দিবে।"

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post