মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী
রসূল পাঠিয়েছেন। যেহেতু মানুষ মরণশীল
তাই নবী ও রাসূলগণের চির বিদায়ের পর মানুষ
যাতে পথভ্রষ্ট না হয়, তাই মহান আল্লাহ তায়ালা
তাঁদের উপর নাযিল করেছেন আসমানি কিতাব।
সৃষ্টির সূচনা থেকে অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ)
থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত যত নবী
রসূল দুনিয়াতে এসেছেন তারা সকলেই একই
রিসালাতের বানী প্রচার করেছেন। তাঁরা
মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে মহান আল্লাহ
তায়ালার আনুগত্য করতে হবে। আনুগত্যের
মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে সালাত যা
সকল নবী-রাসূলগণের উম্মতের উপর অবশ্য
কর্তব্য ছিল এবং আছে। যেমন বাইবেলে
আছে:
হুকুমে স্বাক্ষর দেওয়া হয়ে গেছে শুনে
দানিয়েল তাঁর বাড়ীর উপর তলার ঘরে
গেলেন; সেই ঘরের জানলা
জেরুজালেমের দিকে খোলা ছিল। তিনি
নিজের অভ্যাস মতই দিনে তিনবার হাঁটু পেতে
প্রার্থনা করে তাঁর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন।
(দানি 6:10)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পূর্বে নামাজ তিন
ওয়াক্ত ফরজ করা হয়েছিল। যেহেতু নবী
মুহাম্মদ (সা:) আখেরি নবী এবং ইসলাম চূড়ান্ত
জীবন বিধান, তাই বান্দার জন্য যা মঙ্গল অর্থাৎ পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে। নামাজ যে
পাঁচ ওয়াক্ত এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে
বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে:
অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর
সন্ধ্যায় ও সকালে,এবং অপরাহ্নে ও মধ্য দুপুর
ও রাতের প্রথম অংশে। নভোমন্ডল ও
ভূমণ্ডলে, তাঁরই প্রশংসা। ( সূরা রোম,
আয়াত-১৭-১৮)
আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং
রাতের প্রান্তভাগে পুন্য কাজ অবশ্যই পাপ দূর
করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি
এক মহা স্মারক। (সূরা হুদ, আয়াত- ১১৪)
সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার
পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের
কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ
মুখামুখি হয়। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৭৮)
সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করুন
এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা
ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে,
সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা
করুন রাত্রির কিছু অংশ ও বাদিভাগে, সম্ভবত:
তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (সূরা ত্বহা,
আয়াত-১৩০)
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিভাবে পড়তে হবে তা রসূল
আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজ বান্দার উপর
আল্লাহর অধিকার। পবিত্র কোরানে কমপক্ষে
দু,শত বার নামাজের হুকুমটি এসেছে। মহান
আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেমন: ভ্রমণ,
অসুস্থতা, সফর ইত্যাদি পরিস্থিতিতে নামাজকে
সহজ করে দিয়েছেন অর্থাৎ শিথিল
করেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা নিজেই
বলেছেন, তিনি কারো উপর সাধ্যাতীত কিছু
চাপিয়ে দেন না। কিন্তু উপযুক্ত কারণ ছাড়া কেউ
এই শিথিলতার সুযোগ নিতে পারবে না। নামাজের
ব্যাপারে অবহেলা মারাত্মক অপরাধ। লোক
দেখানো নামাজির সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা
বলেন:
অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,যারা তাদের
নামায সম্বন্ধে বে-খবর; যারা তা লোক-
দেখানোর জন্য করে (সূরা মাউন, আয়াত-৩-৬)
নামাজ কাফের এবং মুমিনের মধ্যে পার্থক্য
নির্দেশকারী। অর্থাৎ নামাজ ব্যতীত ঈমানের
কোনই মূল্য নেই। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে
প্রশ্ন করেছেন, তোমরা কি ভেবেছ শুধু
ঈমান এনেই জান্নাতে চলে যাবে?
নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত হওয়ার কিছু কারণঃ আরবি সালাত
শব্দটি ফারসিতে নামাজ নামে পরিচিত। সাধারণভাবে
সালাত অর্থ হচ্ছে প্রার্থনা করা। কিন্তু সালাত বা
নামাজ শুধুমাত্র প্রার্থনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
সালাত মানুষের পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়,
তাকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য
করে। এতে শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু
আমরা মুসলিমরা আত্মিক উপকারিতার জন্যেই নামাজ
পড়ি। শারীরিক ও মানুষিক উপকারিতা হচ্ছে
আমাদের বোনাস। আমরা জানি, মানুষের
মস্তিষ্কে সেই বিষয়টিই বেশী স্থায়ী থাকে
যা প্রতিনিয়ত তার সামনে উপস্থাপন করা হয়ে
থাকে। যেমন, আমারা টিভিতে দেখতে পাই
একই বিজ্ঞাপন বারবার প্রচার করা হচ্ছে। বারবার
প্রচার এই জন্যেই করা হয় যাতে বিজ্ঞাপিত
পণ্যটির নাম মানুষের মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে
গেঁথে যায়। ফলে সে ঐ পণ্যটি কিনবে।
একইভাবে নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়েছে যাতে
কোরানের শিক্ষা মানুষের সামনে দিনে
কমপক্ষে পাঁচবার প্রচার করে তার মস্তিষ্কে
দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেয়া। তাই নামাজকে মানুষের
জন্য প্রোগ্রামিং (Programming) কথাটাই
বেশী যুক্তিযুক্ত।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক, যদি নামাজে সন্মানীত
ঈমাম এই আয়াতগুলো পড়েন:
ﻭَﻗَﻀَﻰ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻻَّ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﺍْ ﺇِﻻَّ ﺇِﻳَّﺎﻩُ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﺇِﻣَّﺎ ﻳَﺒْﻠُﻐَﻦَّ
ﻋِﻨﺪَﻙَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻛِﻼَﻫُﻤَﺎ ﻓَﻼَ ﺗَﻘُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺂ ﺃُﻑٍّ ﻭَﻻَ ﺗَﻨْﻬَﺮْﻫُﻤَﺎ
ﻭَﻗُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻻً ﻛَﺮِﻳﻤًﺎ
অর্থাৎ– তোমার পালনকর্তা আদেশ
করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও
এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-
ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা
উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে
উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও
বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল
তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে
ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও
এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি
রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে
লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাইল,
আয়াত-২৩-২৪)
তাহলে কোন সন্তান তার মা-বাবার সাথে খারাপ
আচরণ করার সময়ে নামাজে পঠিত এই আয়াতটির
কথা মনে আসবে। তখন তার মধ্যে আল্লাহ
ভীতির কারণে সে এই গর্হিত কাজ থেকে
বিরত থাকবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের
এত সুন্দর বাস্তব শিক্ষা দেয়? এক কথায় প্রচলিত
শিক্ষাকে শিক্ষা নয় বরং চাকরী করার ট্রেইনিং
বলাই ভাল। সমাজের বহু পিতা মাতার সন্তান উচ্চ
শিক্ষা গ্রহণ করেও পিতা-মাতার সাথে ভাল আচরণ
করে না। যার জন্য সরকার বাধ্য হয়েছে
পশ্চিমাদের মত ওল্ড হোম (Old Home) এর
ব্যবস্থা করতে যা মুসলমান হিসেবে আমাদের
জন্যে নিতান্তই লজ্জার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা
আমাদেরকে পেশাজীবী করতে পারে
কিন্তু ভাল মানুষ হতে সাহায্য করে না। নামাজের
গুরুত্ব বলতে গেলে হাজার হাজার পাতা লিখেও
শেষ করা যাবে না।
কিছু নির্দয় অভিযোগের জবাব: গত দেড় শত
বছরে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে।
পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া
যাবে না যিনি বিজ্ঞানের উন্নয়নে আনন্দিত হন
না। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ রূপী দু’পা বিশিষ্ট
শয়তান বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধে দাড়
করানোর নিরলস চেষ্টায় মগ্ন হয়ে আছে।
ভাবখান যেন এমন, বিজ্ঞান তাদের পৈত্রিক
সম্পত্তি। এ জ্ঞানপাপী নাস্তিকেরা এখন নতুন
এবং সবচেয়ে ভয়ানক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
হয়েছে। তারা মুসলিম ছদ্মনাম ব্যবহার করে
ইসলামকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। কতিপয়
কুখ্যাত চিহ্নিত কিছু নাস্তিক ( নাম প্রকাশ করছি না)
মুসলিম বেশে নামাজ নিয়ে পোষ্ট
দিয়েছেন। তাতে তারা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন
নামাজ নাকি দুই ওয়াক্ত এবং তা নাকি ফরজ নয়। আর
মেরাজে নবী (সা:) বারবার আল্লাহ তায়ালার
কাছে নামাজ নিয়ে উপস্থিত হওয়া প্রসঙ্গে
বলেন, আল্লাহ নাকি নিজেও নিশ্চিত ছিলেন না
যে, নামাজ কত ওয়াক্ত হবে ( নাউযুবিল্লাহ)।
যেখানে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত
নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ( উপরের
আয়াতগুলো দ্রষ্টব্য) সেখানে তাদের এ
সমস্ত কথা ভূতের মুখে রাম রাম শোনায়।
তাদের ব্যাপারে আল্লাহ নিজেই বলেছেন:
তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার
পালনকর্তার কালাম দ্বারা বুঝানো হয়, অতঃপর
সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার
পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি
তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে
দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের
কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি
তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন,
তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না। (সূরা
কাহাফ, আয়াত-৫৭)
অর্থাৎ যে পাপীষ্ট কোরান অস্বীকার
করছে, তার হেদায়েত বাতিল হয়ে গেছে।
ইসলাম থেকে চির বিদায় নিয়ে যে নাস্তিক হয়,
সে দুনিয়ার যে কোন ধর্ম থেকে উঠে
আসা নাস্তিকদের চেয়ে হাজার গুন বেয়াদব ও
উগ্র। আল্লাহ আমাদের এই সমস্ত জালিমদের
থেকে হেফাজত করুন!
আমিন.
কোরঅানে সুস্পষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বর্ননা ও মিথ্যাচারের জবাব
byMd Mokbular Rahman
-
0