জান্নাতবাসীদের মর্যাদা

সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান, ‘আমার উম্মতের একদল লোক জান্নাতে যাবে। তাদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার। তাদের চেহারা হবে ১৪ তারিখের রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। হযরত উকাশা ইবনে মহসীন রা. আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি দোয়া করুন যাতে আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তখন রাসূল সা. দোয়া করেন যে, হে আল্লাহ তাকে এ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। তারপর আনসারী সাহাবীদের মধ্যে একজন দ-ায়মান হয়ে বলেন হে আল্লাহর রাসূল সা. আমার জন্যও দোয়া করুন যাতে আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন রাসূল সা. বলেন উকাশা তোমার চেয়ে অগ্রে চলে গেছে। [সহীহ বুখারী] বিনা হিসাবে বেহেশতে গমনকারীদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. বলেন, নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান, আমার আল্লাহ আমার উম্মতদের মধ্য থেকে এমন সত্তর হাজার লোককে কিছু দান করবেন যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত ওমর রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি আল্লাহ পাকের নিকট এর চেয়ে বেশী কামনা করেন না? নবী করিম সা. বললেন ,অধিকের দাবী কি ছিল? আল্লাহ পাক তো আমাকে সত্তর হাজারের প্রতি জনের সাথে আরো সত্তর হাজার দান করেছেন। হযরত ওমর রা. বলেন, আপনি কি আল্লাহ তাআলার কাছে এর চেয়ে আরো অধিকের দাবী করেননি? আমাকে এ পরিমাণই দান করা হয়েছে। তারপর নবী করিম সা. স্বীয় দু’ বাহু সম্প্রসারিত করলেন। অতঃপর নবী করিম সা. বলেন আমাকে ইহা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে এই পরিমাণ দেয়া হবে। হযরত হিশাম বলেন আমরা জানি না এর সংখ্যা কত। সত্তর হাজার ভাগ্যবান যারা হবেন হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান, আমার সম্মুখে সমস্ত উম্মত পেশ করা হয়েছে। তারপর আমি একজন নবীকে দেখলাম তার সাথে অতি সাধারণ একদল লোক ছিল। আরেক জন নবী দেখলাম যার সাথে শুধু একজন বা দু’ জন লোক ছিল। আরেক জন নবীকে দেখলাম তার সাথে কোন অনুসারী ছিল না। অতঃপর আমার সম্মুখে হঠাৎ করে একটি বিশাল বড় দল উপস্থিত করা হল। আমি ধারণা করলাম যে, এরা আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হলো যে, এরা মুসা আ.-এর সম্প্রদায়। আমাকে বলা হলো আপনি উপরের দিকে তাকান। আমি যখন উপরের দিকে তাকালাম তখন বড় একটি দল ছিল। অতঃপর আমাকে বলা হলো, আপনি অপর দিকে তাকান তখন অসংখ্য মানুষ ছিল। আমাকে বলা হলো, তারা আপনার উম্মত। তাদের মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে এবং অন্যরা হিসাবের পর জান্নাতে যাবে। অতঃপর নবী করিম সা. উঠে স্বীয় ঘরে তাশরীফ নিলেন। সাহাবাগণ এ সমস্ত বিনা হিসাবে জান্নাতী এবং হিসাবের পর জান্নাতীদের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগলেন, যারা নবী করিম সা. এর সাহচর্যে আছেন হয়ত তারাই হবে। আবার কেউ কেউ বলতে লাগলেন, হয়তো যারা মুসলমান অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি। এভাবে সাহাবাগণ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলাচনা করেন। অতঃপর নবী করিম সা. তাদের সম্মুখে তাশরীফ এনে বললেন, তোমরা কোন ধরনের আলোচনায় মগ্ন আছ? সাহাবাগণ আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনি বলেছেন, তারাই সে সমস্ত লোক হবে যারা দুনিয়াতে ঝাড়ফুঁক করেনি, আর না ঝাড়ফুঁককারীদের আহবান করত, আর না শুভাশুভ নির্ধারণ করত। বরং তারা তাদের পরওয়ারদিগারের উপর ভরসা করতো। যে সমস্ত লোক হিসাবের শুরুতেই জান্নাতে চলে যাবে হযরত আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান, কিয়ামতের দিন একদল লোক দাঁড়াবে যারা আসমান ও যমীনের প্রান্ত দেশ জুড়ে থাকবে তাদের আলোর ঝলকানি সূর্যের ন্যায় হবে। ঘোষণা হবে, নবীয়ে উম্মী কোথায়? এই আহ্বানে সমস্ত নবী উঠে যাবার জন্য নড়াচড়া করতে থাকবেন। তারপর বলা হবে তিনি হযরত মুহাম্মদ সা. ও তাঁর উম্মত। তারপর আরেক দল উঠে আসবে যারা আসমান ও যমীনের প্রান্তদেশ জুড়ে ভরে উঠবে। তাদের দ্যুতি আকাশের প্রতিটি তারকার ন্যায় হবে। তারপর বলা হবে, নবীয়ে উম্মী কোথায়? এই ডাকে সকল নবীই উঠে আসতে চাইবেন। কিন্তু তারাও নবী করিম সা. এর উম্মত হবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা দুটি মুষ্ঠি ধরে বলবেন, হে মুহাম্মদ, এ মুষ্ঠি তোমার জন্যে এবং হে মুহাম্মদ ইহা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য। অতঃপর মীযান স্থাপন করে হিসাব আরম্ভ হবে। [ত্বাবরানী কবির- ৮/ ২২২] শহীদগণ বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে হযরত আনাস (রাঃ) বলেন নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান- মানুষ যখন হিসাবের জন্য নীত হবে সে সময় একদল লোক নিজ নিজ তরবারি নিজ নিজ স্কন্ধে বহন করে আগমন করবে। তরবারিগুলো থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরতে থাকবে। তারা জান্নাতের দরজায় এসে ভিড় করবেন। বলা হবে তারা কারা? বলা হবে তারা শহীদ। তারা শাহাদাতের পর জীবিত ছিলেন এবং তাদেরকে আহার্য দেয়া হত। অতঃপর আহবান করা হবে দাঁড়াও সে লোক যার পারিশ্রমিক স্বয়ং আল্লাহ পাকের জিম্মায় সে জান্নাতে চলে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার ডাকা হবে দাঁড়াও সে ব্যক্তি যার পারিশ্রমিক আল্লাহ পাকের জিম্মায় তারা জান্নাতে চলে যাবে। এভাবে হাজার হাজার লোক দাঁড়াবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে। বিনা হিসাবে জান্নাতে গমনকারীদের সারি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন নবী করিম সা. এরশাদ ফরমান, তিন প্রকার লোক বিনা হিসাবে জান্নাত যাবে। (১) এমন লোক যে নিজে তার কাপড় ধৌত করেছে কিন্তু তা গায়ে জড়ানোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করেনি। (২) এমন লোক যার উনানে একই সময় দুটি হাঁড়ি বসেনি। (৩) এমন ব্যক্তি যাকে পানি পান করার জন্য আহবান করা হয়েছে অথচ সে জিজ্ঞেস করেনি যে, তুমি কোন প্রকার পানি (পানীয়) পছন্দ কর? (দুররে মানসুর) হযরত ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি পতিত ভূমিতে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য (পথিক পশুপাখি ইত্যাদির জন্য) কূপ খনন করে সেও বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। হযরত আলী ইবনে হোসাইন রা. বলেন, কিয়ামতের দিন একজন আহবানকারী আহবান করে বলবে, তোমাদের মধ্যে মর্যাদাবান কে? তখন মানুষদের মধ্যে একদল লোক দাঁড়াবে। তাদেরকে বলা হবে জান্নাতের দিকে যেতে থাক। তাদের সাক্ষাৎ হবে ফেরেশতাদের সাথে। ফেরেশতারা বলবেন, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তারা বলবে আমরা জান্নাতের দিকে যাচ্ছি। ফেরেশতারা বলবে হিসাবের পূর্বে নাকি? তারা বলবে, হ্যাঁ। ফেরেশতারা বলবে, তোমরা কারা? তারা বলবে, আমরা মর্যাদাবান লোক। ফেরেশতারা বলবে, কী সে তোমাদের মর্যাদা? তারা জবাব দিবেন যে, আমাদের সঙ্গে যখন জাহেলী আচরণ করা হতো তখন আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিতাম। আমাদের সাথে অসদাচরণ করলে আমরা ক্ষমা করে দিতাম। ফেরেশতারা তখন বলবে, ঠিক আছে আপনারা জান্নাতে চলে যান। সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাতে উত্তম প্রতিদান রয়েছে। তারপর এক ঘোষক ঘোষণা করলে ধৈর্যশীলরা দাঁড়াবে। তারা মানুষের মধ্যে সংখায় অতি অল্প হবে। তাদের প্রতি নির্দেশ হবে, তোমরা জান্নাতে চলে যাও। তাদের সাথে ফেরেশতাদের সাক্ষাৎ ঘটবে। তাদেরকেও অনুরূপ বলা হবে। তারা বলবে আমরা ধৈর্যশীল। ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবেন তোমাদের ধৈর্যের বিষয় কি ছিল? তারা বলবে, আল্লাহ পাকের নাফরমানি থেকে আমরা আমাদের বিরত রেখেছি। ফেরেশতারা বলবেন তাহলে তোমরা জান্নাতে চলে যাও। সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post