হাদীসে বর্নিত মুমিনের গুনাবলী

১. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে, সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অন্য সব কিছুর চেয়ে তার নিকট অধিক প্রিয়। ২. সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই কোন ব্যক্তিকে ভালবাসে। ৩. আল্লাহ তাকে কুফরী থেকে মুক্তি দানের পর পুনর্বার কুফরীর মধ্যে ফিরে যেতে সে এতটা অপছন্দ করে যেমন সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে অপছন্দ করে। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ২. হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে তার (মুসলিম) ভাই এর জন্যে (অথবা) তিনি বলেছেন তার প্রতিবেশীর জন্যেও তাই পছন্দ না করে। [সহীহ মুসলিম,প্রথম খ-] ৩. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ। কোনো বান্দাহ পূর্ণ ঈমানদার হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে, তার প্রতিবেশীর জন্যে অথবা তিনি বলেছেন, তার (মুসলিম) ভাই এর জন্যেও তাই পছন্দ করে। [সহীহ মসলিম, প্রথম খ-] ৪. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ৫. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানদের সমাদর করে। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানের সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই ভালো কথা বলে, অন্যথা চুপ থাকে। সে যেন অতিথির যথাযথ সমাদর করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন কল্যানের কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ৭. তারিক ইবনে শিহাব (আবু বকর ইবনে আবু শাইবার হাদীসে) বলেন, মারওয়ান ঈদের দিন নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়ার বিদআতী প্রথার প্রচলন করে। এসময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, “খুতবার আগে নামায”-(সম্পন্ন করুন)। মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হল। সাথে সাথে আবু সাঈদ খুদরী রা. ওঠে বললেন, ঐ ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগ) পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ (বাক্য) দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে, তবে এটা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শোকে মৃহ্যমান হয়ে গাল চাপড়ায়, আঁচল বা জামা ছিঁড়ে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় কথাবার্তা বলে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [সহিহ মুসলিম, প্রথম খ-] ৯. হযরত হাম্মাম ইবনে হারিস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মানুষের কথাবার্তা সরকারী কর্মকর্তার নিকট বর্ণনা করত। একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এসময় লোকেরা বলাবলি করলো, এ ব্যক্তি মানুুষের কথাবার্তা আমীরের কাছে পৌঁছিয়ে থাকে। সে লোকটি এসে আমাদের কাছে বসলো। হুযায়ফা রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, চোগলখোর বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-] ১০. হযরত হাম্মাম ইবনে হারিস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা হুযায়ফার সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আমাদের সাথে বসলো। হুযায়ফাকে বলা হল, এ ব্যক্তি মানুষের কিছু কথাবার্তা বাদশাহর কাছে পৌঁছায়। হুযায়ফা রা. ঐ ব্যক্তিকে শুনানোর উদ্দেশ্যে বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি; চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [ সহীহ মুসলিম, প্রথম খ-]

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post