সুরা কাফিরুন নাজিলের প্রেক্ষাপট ও ফজিলত


কাফিরুন অর্থ হলো কাফেররা। যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও একত্ববাদকে অস্বীকার করে তাদের জন্য এই সুরাটি পবিত্র নগরী মক্কায় নাজিল হয়। কাফের মুশরিকদের কিছু প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নাজিল হওয়া এ সুরা ৬ আয়াত বিশিষ্ট।

কোরআনের ১০৯ নং এ সুরাটির বিষয়বস্তু যেমন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনই এর আমল এবং উপকারিতাও অনেক বেশি। হাদিসের বর্ণনা থেকেই তা প্রমাণিত।

 
এক সাহাবি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করে বললেন, আমাকে ঘুমের আগে পড়ার জন্য কোনো দোয়া বলে দিন। জবাবে নবীজি (স.) ‘সুরা কাফিরুন’ পড়তে আদেশ দিলেন এবং বললেন এটা শিরক থেকে মুক্তিপত্র।’ (আবু দাউদ ৫০৫৫)
 
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তিনি ফজরের আগের দুই রাকাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ এ দুই সুরা পড়তেন।’ (তিরমিজি ৪১৭, ইবনে মাজাহ ১১৪৯, মুসনাদে আহমাদ ২/৯৪)
এটা তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কোরআনের এক চতুর্থাংশ। (তিরমিজি ২৮৯৩, ২৮৯৫)
 

সুরা কাফিরুন নাজিলের প্রেক্ষাপট

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ তথা তাওহিদের বাণী প্রচার করেন। এই বাণী প্রচারে দাওয়াত দেয়ার সময় মক্কার কুরাইশরা বিভিন্নভাবে তা প্রচারে বাধা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায় যখন তারা ব্যর্থ, তখন তারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি প্রস্তাব দেয়; যা ছিল ইসলাম ও মুসলমানের জন্য পুরোপুরি অনৈতিক।
 
তারা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওহিদের দাওয়াত ও কুফরির মধ্যে একটি আপোসের প্রস্তাব দেয়। অনৈতিক এ প্রস্তাবটি ছিল এমন; এক বছর তারা এবং সবাই তাদের মূর্তি পূজা করবে এবং আর এক বছর তারা এবং সবাই আল্লাহর ইবাদত করবে। (নাউজুবিল্লাহ)
 
এই অনৈতিক ও হাস্যকর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পবিত্র এই সুরাটি নাজিল করেন এবং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেন তাদের প্রস্তাব আকিদা ও ধর্ম থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। আর এ সুরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর পরই মক্কার কিছু মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা আল্লাহর একত্ববাদকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
 

অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা কাফিরুন

 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ
কুল ইয়া আইউহাল কাফিরুন
বলুন, হে অবিশ্বাসী সম্প্রদায়,
 
لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
লা আ’বুদু মাতাবুদুন
আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর।
 
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ
এবং তোমরাও ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
 
وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ
ওয়া লা আনা আবিদুনা মা আবাদতুম
এবং আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর।
 
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ
তোমরা ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন
তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post