তাহাজ্জুদ' প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় আমল

তাহাজ্জুদ প্রিয় নবীজি (সা.)–এর প্রিয় আমল

ফরজ নামাজের পর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। (মুসলিম, আলফিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৯৭, হাদিস: ৪০৫)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)–কে লক্ষ করে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করো, এটি তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে অধিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে-মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৯)

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তথা রাত দুইটার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সাহ্‌রির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। তাই তাহাজ্জুদের আগে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।

প্রিয় নবীজি (সা.) প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই এটি সুন্নত, অতিরিক্ত হিসেবে নফল। নবীজি (সা.)-এর জন্য এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল।

পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যাঁরা রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন, তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন।’ (দিওয়ানে আলী, নাহজুল বালাগা)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে কম্বলাবৃত! রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশি এবং কোরআন তিলাওয়াত করো সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও।’ (সুরা-৭৩ মুয্যাম্মিল, আয়াত: ১-৮)।

উম্মুল মুমিনিন আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) ও উম্মে ছালামাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের রোজা পালন ও রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ।’ (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)।

রমজান মাসে ফরজ রোজা পালনের জন্য সাহ্‌রি খাওয়ার সুন্নত আদায়ের জন্য উঠতে হয় এবং সাহ্‌রির সময়ই হলো তাহাজ্জুদের সময়। সুতরাং রমজানে তাহাজ্জুদ আদায় করা খুবই সহজ। তাহাজ্জুদ দুই রাকাত করে আট রাকাত, বারো রাকাত বা আরও কম বা বেশিও পড়া যায়।

রমজানের নফলের সওয়াব ফরজের সমান, ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

নফল নামাজে রুকু, সিজদাসহ প্রতিটি রুকন বা পর্ব দীর্ঘ করা সুন্নত। এ জন্য রুকু ও সিজদায় তাসবিহ অনেকবার পড়া যায় এবং অন্যান্য অবস্থানেও বেশি পরিমাণে বিভিন্ন দোয়া যা কোরআন সুন্নাহতে রয়েছে, তা পাঠ করা যায়। নামাজ দীর্ঘ করার জন্য দীর্ঘ কিরাত পাঠ করা বিধেয়। দীর্ঘ কিরাত মুখস্থ না থাকলে একই রাকাতে একই সুরা বারবার এবং বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন আয়াতও একই রাকাতে পড়া যায়।

এ অবস্থায় বিভিন্ন রাকাতে বা প্রতিটি রাকাতে একই সুরা কিরাত পড়তেও বাধা নেই। সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাতে তিলাওয়াতের তারতিব বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও জরুরি নয়।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম |

সুত্র: প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭/০৩/২০২৪

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post