ইস্তিগফার জীবনের সংকীর্ণতা দূর করে




মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা, মক্কা থেকে   || মানুষের পাপের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় নেমে আসে। পাপের অন্যতম দুনিয়াবি সাজা হলো জীবনযাত্রা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া। সর্বত্র অশান্তি দেখা দেওয়া। মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বান্দাকে তাদের পাপের শাস্তিস্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদ ও শাস্তি দিয়ে থাকেন।

এটি তারই একটি। কিন্তু বান্দা যখন ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তিনি তাঁর শাস্তি উঠিয়ে নেন। তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (্ইস্তিগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩৩)
যেকোনো বিপদাপদ, দুশ্চিন্তার দিনে ইস্তিগফার ও আল্লাহর ওপর ভরসা মানুষকে দুশ্চিন্তা, সংকীর্ণতা ও বিপদমুক্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮১৯)
অধিক ইস্তিগফারে মানুষের জীবন-জীবিকায় বরকত আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপ কাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
দুনিয়া আখিরাতের সফলতা অর্জনেও ইস্তিগফার দারুণ কার্যকর। ইস্তিগফারের মাধ্যমে যেমন আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি দুনিয়ায়ও এর সুফল অপরিসীম। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন। সম্মান বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তারপর তাঁর দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদের আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৫২)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলা হুদ (আ.)-কে আদ জাতির কাছে নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। দৈহিক আকার-আকৃতিতে ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে আদ জাতিকে মানব ইতিহাসে অনন্য বলে চিহ্নিত করা হয়। হুদ (আ.)-ও উক্ত জাতিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে মৌলিকভাবে তিনটি দাওয়াত দিয়েছিলেন।
এক. তাওহিদ বা একত্ববাদের আহ্বান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্তা বা শক্তিকে ইবাদত উপাসনা না করার আহ্বান।
দুই. তিনি যে তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তাতে তিনি একজন খালেস কল্যাণকামী, এর জন্য তিনি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চান না।
তিন. নিজেদের অতীত জীবনে কুফরি শিরকি ইত্যাদি যত গুনাহ করেছ সেসব থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং ভবিষ্যতের জন্য ওই সব গুনাহ থেকে তাওবা করো। যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও ইস্তিগফার করতে পারো তবে তার বদৌলতে আখিরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই, দুনিয়ায়ও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। (তাফসিরে কুরতুবি ও তাফসিরে ইবন কাসির)
বর্তমানে গোটা বিশ্বে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাজ করছে। অভাব,  অনিশ্চয়তা,  দুশ্চিন্তা মানুষকে ঘিরে ধরছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় যার যার জায়গা থেকে সাচ্চা তাওবা করা। আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদের সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। 
(সংগৃহীত)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post