অবৈধ উপার্জন ইসলামে নিষিদ্ধ

                  

ইসলাম সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে মানুষকে চলার শিক্ষা দেয়। সবক্ষেত্রে ন্যায়ের বিধান প্রতিষ্ঠায় হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। অন্যায় পথে কোনো কিছু অর্জন করা ইসলামের বিধানে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে এ ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

অন্যায়ভাবে উপার্জন অর্থাৎ অপরকে ঠকিয়ে কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জিত হয় তা শুধু অন্যায় নয়, নৈতিকতারও পরিপন্থী। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সামাজিক শান্তি বিঘ্নিত করে এবং ঐক্যে ফাটল ধরায়। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসে ভাঙন সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না।’ -সুরা বাকারা : ১৮৮

এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে- অসত্য শপথের মাধ্যমে অপরের সম্পদ অবৈধভাবে দখল করো না। অন্যায় বা নিষিদ্ধ উপায়ে সম্পদের দখল দু’ভাবে হতে পারে। প্রথমত, শক্তি প্রয়োগ তথা নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে, যেমন লুটতরাজ, গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাৎ, চুরি-ডাকাতি, জোরপূর্বক দখল ও অপহরণ প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত, খেলাধুলার মাধ্যমে যেমন- লটারি, জুয়া, দাবা কিংবা অন্য কোনো চালাকি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা।

সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এক লোক দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণরত অবস্থায় এলোমেলো চুল এবং ধূলি-ধূসরিত শরীরে পরিশ্রান্ত অবস্থায় আকাশের দিকে হাত তুলে মোনাজাত করে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ারদেগার! ইয়া পরওয়ারদেগার! অথচ তার খাদ্য, পানীয়, পরিধেয় পোশাক, সবই নিষিদ্ধ বস্তুর। হারামের মাধ্যমে যার দেহের পুষ্টিসাধন হয়, তার দোয়া কীভাবে মঞ্জুর হতে পারে?’

অন্য হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন, যেন আমার দোয়া কবুল হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ওহে আনাস! তোমার উপার্জন পবিত্র অর্থাৎ হালাল রাখো, তবে তোমার দোয়া মঞ্জুর হবে। কেননা কেউ হারাম খাদ্যের এক লোকমা মুখে নিলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার দোয়া কবুল হয় না।’ -তারগিব

হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবকালে আরব জাহান অন্ধকারে ঢাকা ছিল। অন্যায় ছিল সব সামাজিক কর্মকান্ডের নিয়ামক শক্তি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যে সংগ্রাম শুরু করেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে মুসলমানদের সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ইসলামের ছোঁয়ায় অনৈক্য ও হানাহানিতে লিপ্ত আরবরা তৎকালীন দুনিয়ার বিকশিত জাতিতে পরিণত হয়। আজ আমরা যদি সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই তবে অন্যায়ভাবে উপার্জনের পথ থেকে সরে আসতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post