ঘোর বিপদে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও, মহান আল্লাহপাক ফিরিয়ে নেননা



আল্লাহপাকের কোনো শরিক নেই, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কারও থেকে জন্ম নেননি। তার সমকক্ষ কেউ নেই, তিনি চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী। এই বিশাল পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, বৃক্ষলতা, মানব-দানব, পশু-পাখি, সাগর-পাহাড় সবকিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনিই একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য-অদৃশ্য এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সব বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন। -সূরা হাশর: ২২

অন্যত্র বলা হয়েছে, তিনি সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যবর্তী স্থানের সব কিছুর সৃষ্টিকারী। তিনি আলিমুল গায়েব। তিনি সব জায়গায় বিরাজমান। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছুই দেখেন ও খবর রাখেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ সকল দৃশ্য-অদৃশ্য ও উপস্থিত অনুপস্থিত সকল বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞাত। মহান আল্লাহই সব প্রাণীর রিজিকদাতা। কোনো সৃষ্টিকেই তিনি রিজিক থেকে বঞ্চিত করেন না।

সকল প্রাণী সৃষ্টির পূর্বেই তিনি তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সব প্রাণীকেই তিনি রিজিক দেন এবং প্রতিপালন করেন। মহান আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল। অন্যায় বা ভুল করার তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। কাউকে তিনি ফিরিয়ে দেন না। পবিত্র কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ গাফুরুর রাহিম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল।’ –সূরা আলে ইমরান: ৩১

আল্লাহতায়ালা এমনই এক সত্তা যার কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে কেউ বিফল হয় না। মানুষের যা কিছু প্রয়োজন, তা আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করা প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমার কাছে প্রার্থনা করে তখন আমি তার প্রার্থনা কবুল করি।’ –সূ‍রা আল বাকারা: ১৩৬

আল্লাহ বলতে আমরা শুধু অদ্বিতীয় এক সত্তাকে বুঝি। যাকে দেখা যায় না। কিন্তু বিপদে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। ঘোর বিপদে যখন কেউ সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না- তখনও তিনি সাহায্য করেন।

নিম্নে আরো পড়ুন: আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর ঐতিহাসিক ভাষণ

দশম হিজরির ৯ জিলহজ, শুক্রবার দুপুরের পর হজের সময় আরাফা ময়দানে হযরত মুহাম্মদ (সা:) লক্ষাধিক সাহাবার সমাবেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। হামদ ও সানার পর তিনি বলেন , ‘হে মানুষ! তোমরা আমার কথা শোনো। এরপর এই স্থানে তোমাদের সঙ্গে আর একত্রিত হতে পারবো কি না, জানি না। হে মানুষ! আল্লাহ বলেন, হে মানব জাতি! তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো’।

অতএব শুনে রাখো, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। আরবের ওপর কোনো অনারবের, অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে আল্লাহকে ভালোবাসে। হে মানুষ! শুনে রাখো, অন্ধকার যুগের সকল বিষয় ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো। জাহিলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো। …

হে মানুষ! শুনে রাখো, অপরাধের দায়িত্ব কেবল অপরাধীর ওপরই বর্তায়। পিতা তার পুত্রের জন্য আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়। হে মানুষ! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্যে চিরস্থায়ীভাবে হারাম (অর্থাৎ পবিত্র ও নিরাপদ) করা হলো, যেমন আজকের এই দিন, আজকের এই মাস, এই শহরের সকলের জন্যে হারাম। …

হে মানুষ! তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা- বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে। ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের সকল সৎ গুণকে ধ্বংস করে। হে মানুষ! নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সর্তক করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করো না। তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সব সময় খেয়াল রেখো।

হে মানুষ! অধীনস্থদের সম্পর্কে সতর্ক হও। তোমরা নিজেরা যা খাবে তাদেরও তা খাওয়াবে। নিজেরা যা পরবে, তাদেরও তা পরাবে। শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করবে। যে মানুষ! বিশ্বাসী সেই ব্যক্তি যার হাতে ও মুখ থেকে অন্যের সম্মান, ধন ও প্রাণ নিরাপদ। সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে অন্যের জন্যেও তা-ই পছন্দ করে। হে মানুষ! বিশ্বাসীরা পরস্পরের ভাই। সাবধান! তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না। …

হে মানুষ! শুনে রাখো, আজ হতে বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব বা কৌলিন্য প্রথা বিলুপ্ত করা হলো। কুলীন বা শ্রেষ্ঠ সে-ই যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে। হে মানুষ! ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। বিশ্বস্ততার সাথে প্রত্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে। কারো সম্পত্তি- সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্যে হালাল নয়। তোমরা কেউ দুর্বলের ওপর অবিচার করো না।

হে মানুষ! জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান। জ্ঞানার্জন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ। কারণ জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। জ্ঞান অর্জনের জন্যে প্রয়োজনে তোমরা চীনে যাও। হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে,রোজা রাখবে, হজ করবে আর সঙ্গবদ্ধভাবে নেতাকে অনুসরণ করবে; তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

হে মানুষ! শুনে রাখো, একজন কুশ্রী কদাকার ব্যক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোনীত হয়, যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, ততদিন পর্যন্ত তাঁর আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য। হে মানুষ! শুনে রাখো, আমার পর আর কোন নবী নেই। হে মানুষ! আমি তোমাদের কাছে দুটো আলোকবর্তিকা রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দুটোকে অনুসরণ করবে, ততদিন তোমরা সত্য পথে থাকবে। এর একটি আল্লাহর কিতাব। দ্বিতীয়টি হলো আমার জীবন-দৃষ্টান্ত।

হে মানুষ! তোমরা কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা অতীতে বহু জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। হে মানুষ! প্রত্যেকেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসেব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও! হে মানুষ! তোমরা যারা এখানে হাজির আছো, আমার! এ বাণীকে সবার কাছে পৌঁছে দিও।’ (এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন)

‘হে মানুষ! আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে জবাব দিলোঃ হ্যাঁ! এরপর নবীজি (সা:) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো! আমি আমার সকল দায়িত্ব পালন করেছি!’ (তথ্যসূত্র অনলাইন থেকে সংগৃহীত।)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post